২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গা পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন

শিবিরের চার দিকে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার উদ্যোগ
-

রোহিঙ্গাদের শিবির ছেড়ে পালানো কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। চেকপোস্ট এড়িয়ে রোহিঙ্গারা দুর্গম পাহাড়ি পথেই শিবির ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন কক্সবাজার উপকূলের কোথাও না কোথাও রোহিঙ্গারা ধরা পড়ছে পাচারের প্রাক্কালে। তবে অনেক রোহিঙ্গা ইতোমধ্যেই পাচার হয়ে গেছে। ফলে এ ইস্যুতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।
জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের পালানো ঠেকাতে শিবিরের চার দিকে কাঁটাতারের সীমানা বেড়া দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে নজরদারি বাড়ানো, চেকপোস্টের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অনুপস্থিত রোহিঙ্গাদের রেশন বন্ধের পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রশাসন। কক্সবাজার জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, প্রায় ১০ হাজার একরের বেশি এলাকায় রোহিঙ্গাদের অবস্থান একেবারেই অরক্ষিত। সড়কপথের চেকপোস্টে এড়িয়ে তারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গারা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে দক্ষ হওয়ায় পাহাড়ি পথেই তারা ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
পুলিশের তথ্যমতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে এ বছরের ১৮ মে পর্যন্ত সময়ে শিবির থেকে পালানোর সময় ৫৮ হাজার ৬৬৭ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার অনিশ্চয়তা, ফিরে গেলে নাগরিকত্ব না পাওয়া ইত্যাদি হতাশা থেকে রোহিঙ্গারা দালালের খপ্পরে পড়ে ক্যাম্প ছেড়ে সমুদ্র পথে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ঝুঁকিপূর্ণ পাড়ি দিচ্ছে।
অন্য দিকে বাংলাদেশেরও বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাচ্ছে দালালেরা। এজন্য তারা রোহিঙ্গাদের মাথাপিছু ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নিচ্ছে। কেউ আবার কৌশলে বাংলাদেশী পাসপোর্ট বানিয়ে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ক্যাম্প ছাড়ছে। সর্বশেষ পৃথক অভিযানে গতকাল ৮৪ জন রোহিঙ্গা নারী ও শিশুকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শনিবার রাতে কক্সবাজারের পেকুয়া ও টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে এসব রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। একই সাথে পাঁচজন মানব পাচারকারীকে আটক করেছেন কোস্টগার্ড সদস্যরা।
কোস্টগার্ডের গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী পরিচালক লে. কমান্ডার এম হামিদুল ইসলাম জানান, শনিবার রাতে কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ বিচ এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে মানব পাচারকারী দলের পাঁচ সদস্য ও ১৭ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১০ জন পুরুষ ও সাতজন নারী রয়েছেন। উদ্ধারকৃত ১৭ জন মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিজ নিজ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য দিকে পাচারে জড়িত পাঁচ দালালকে আটক দেখিয়ে টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে পেকুয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) জাকির হোসেন জানান, পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া জেটিঘাট থেকে মালয়েশিয়াগামী নারী ও শিশুসহ ৬২ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। দালালচক্রের একটি দল আটক এসব রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে জড়ো করেছিল। এর মধ্যে ২১ জন পুরুষ, ২৮ জন নারী ও ১৩ জন শিশু রয়েছে। শনিবার রাত দেড়টার দিকে পেকুয়া থানার পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এছাড়া ১২, ১৩, ১৪ মে মালয়েশিয়ায় পাচারের সময় পুলিশ টেকনাফ, মহেশখালী ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে ১০৩ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে। গত ৩ মে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার একটি বাসা থেকে ২৪ রোহিঙ্গাসহ ২৬ জনকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় ৫৬টি বাংলাদেশী পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। আটক ২৪ রোহিঙ্গাকে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কথা বলে টেকনাফের শিবির থেকে ঢাকায় নেয়া হয়েছিল বলে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। আটককৃত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩ হাজার ৭৮২ জনকে চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা, যশোর, নওগাঁ, সাতক্ষীরা, চাঁদপুরসহ ১৭ জেলা থেকে আটক করা হয়েছে। মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ১৮ জন দালালকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুইজন মারা গেছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’।
মোট ১১ লাখ ১৮ হাজার ৯৫১ জন রোহিঙ্গার ৩৪টি আশ্রয়শিবিরের আয়তন প্রায় ১০ হাজার একর। অরক্ষিত শিবিরগুলোর চার দিকে এক হাজারের বেশি জঙ্গলঘেরা দুর্গম পাহাড়ি পথ রয়েছে। এসব পথ দিয়ে রোহিঙ্গারা যখন-তখন আশ্রয়শিবির থেকে বেরিয়ে পড়ছে। কক্সবাজারের বিভিন্ন সড়কে ৭টি চেকপোস্ট বসিয়েও রোহিঙ্গাদের পালানো ঠেকাতে পারছে না পুলিশ। তারা জানায়, রোহিঙ্গারা মাইলের পর মাইল হাঁটতে পারে তাছাড়া পাহাড়ি পথেও তারা হাঁটতে অভ্যস্ত। শিবিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে মাত্র ৯৫০ জন পুলিশ। রোহিঙ্গরা এখন ত্রিপিচ পরিধান করছে এবং চেকপোস্টগুলোতে তাদের শনাক্ত করতে পারে না পুলিশ। তাছাড়া রোহিঙ্গাদের অনেকে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র সাথে রাখে। পরিচয়পত্র আসল না নকল, তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা নেই চেকপোস্টগুলোতে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত

সকল