২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বেশি মুনাফা নিতে ঝুঁকিতে ফেলা হচ্ছে শিল্প খাতকে

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টার প্রতিবাদ ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর
-

আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে গত পাঁচ বছরে কেবল তৈরী পোশাক শিল্পখাতেরই ১২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর প্রহর গুণছে হাজার হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান। অন্য দিকে, গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কোম্পানিগুলো বরাবরই লাভজনক অবস্থানে আছে। সরকার এবং বেসরকারি শেয়ারহোল্ডারদের নিয়মিত ডিভিডেন্ট দিচ্ছে তিতাস, বাখরাবাদ, কর্ণফুলী। শিল্প রক্ষায় সরকারের বড় ধরনের কোনো উদ্যোগ তো নেই-ই, উল্টো লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোকে আরো বেশি মুনাফা দিতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির খড়গ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে শিল্পখাতের ওপর। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) এমন একপেশে উদ্যোগে ক্ষুব্ধ বেসরকারি খাতের লাখ লাখ উদ্যোক্তা। সম্ভাব্য ভয়াবহতা বিবেচনায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগের প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের বিভিন্ন সংগঠন। জনস্বার্থ ও শিল্প-বাণিজ্যের স্বার্থকে অগ্রাহ্য করে বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থকে প্রাধ্যান্য দিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়ারও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
বিইআরসি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, নতুন করে গ্যাসের দাম না বাড়ালেও চলতি অর্থবছরে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ৫৫০ কোটি টাকা মুনাফা করবে। জালালাবাদের বর্তমান বার্ষিক মুনাফা ১০০ কোটি টাকা। বার্ষিক ৫১ কোটি টাকা মুনাফা করছে পশ্চিমাঞ্চল। কর্ণফুলীর বার্ষিক মুনাফা ২৪৭ কোটি টাকা। সুবিধাজন আর্থিক অবস্থানের কারণেই নতুন করে কুষ্টিয়া-ঢাকা পাইপলাইন স্থাপনের ব্যাপক উদ্যোগ নিয়েছে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি। লাভজনক অবস্থানে আছে বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। গ্যাস সঞ্চালন কোম্পানি জিটিসিএলেরও বার্ষিক মুনাফা ১৬ কোটি টাকা। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কোম্পানিগুলোর দাবিÑ দাম বাড়ানো না হলে শেয়ারহোডারদের কাক্সিক্ষত লাভ দেয়া সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের লাখ লাখ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হচ্ছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
এমনই একটি প্রেক্ষাপটে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো। গতানুগতিক এবং আনুষ্ঠানিকতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রস্তাবের ওপর গণশুনানির আয়োজনও হয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদন হলে আবাসিকে এক চুলার জন্য গ্রাহকের ব্যয় ৭৫০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ১০০০ টাকা। দুই চুলার ক্ষেত্রে ৮০০ টাকার পরিবর্তে গুণতে হবে ১২০০ টাকা। যানবাহনে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম প্রতি ঘনমিটার ৩২ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৪০ টাকা। ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র তথা শিল্পকারখানার বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা গ্যাস প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ৬২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা ৭০ পয়সা এবং সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা গ্যাসের দাম ৩ টাকা ১৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭ টাকা ৬৬ পয়সা করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি কেবল গ্যাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এর ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়বে। ব্যয় বাড়বে পরিবহনসহ অন্য সব খাতে। সব শিল্পই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর ফলে শিল্পের সার্বিক ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় আরো বেড়ে যাবে। বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের পরামর্শে ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনে যাওয়া উদ্যোক্তারা পড়বেন মহাবিপদে। অথচ বিইআরসির আইন অনুযায়ী, গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো লাভে থাকলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবই দিতে পারে না। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়াকে আইনের লঙ্ঘন হিসেবেই দেখছেন তারা। তাদের অভিযোগ, গতবারও দাম বাড়ানোর আগে গণশুনানিতে প্রমাণ করা হয়েছিল গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো লাভে রয়েছে কিন্তু বিইআরসি ঠিকই গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এবারো গণশুনানি করে বিইআরসি পূর্বনির্ধারিত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
বস্ত্রখাতের তিন প্রধান সংগঠন বিজিএমইএ, বিটিএমএ ও বিকেএমইএ যৌথ সংবাদ সম্মেলনে করে নিজেদের শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেছে। অন্য সংগঠনগুলোও প্রতিবাদ জানানো প্রস্তুতি নিচ্ছে। লাভজনক সরকারি কোম্পানিগুলোকে আরো মুনাফা দিতেই গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে অভিযোগ করে বাংলাদেশ তৈরী পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি বলেন, আমাদের জানামতে তিতাস গ্যাস কোম্পানি তার শেয়ারহোল্ডারদের ৩৫ শতাংশ মুনাফা দিচ্ছে, অথচ আমরাতো ২ শতাংশও ব্যবসা করতে পারছি না। তিতাসের কাছে আমার প্রশ্ন, সরকারি প্রতিষ্ঠান হয়েও তারা কিভাবে এত মুনাফা দিতে পারে, যেখানে বলা হয় যে, ভর্তুকি নিয়ে তিতাস চলছে। বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে তিনি বলেন, বিইআরসি নির্ধারিত ভর্তুকি সরকার না দিলে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিলে অলস পড়ে থাকা অর্থ থেকে ঋণ নিয়ে বিতরণ কোম্পানিকে চালানো যেতে পারে। কিন্তু শিল্পকে ধ্বংস করে নয়। শিল্প থাকলে কর্মসংস্থান হবে, দেশের অর্থনীতি বেগবান হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement