১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


না’গঞ্জে ফুলচাষে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান

নারায়ণগঞ্জে ফুলচাষি ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততা : শফিউদ্দিন বিটু -

যত দূর চোখ যায়, ফুল আর ফুল। লাল বেগুনি সাদা হলুদ। শুধু রঙের ছড়াছড়ি। ফুটে আছে কাঠমালতী, কামিনী, বেলি, জবা, গন্ধরাজ, ডালিয়া, গাঁদা, জারবেরা, জিপসি-সহ প্রায় ২৫ প্রজাতির নানান রঙের ফুল। বাতাসে ফুলের সুবাস ছড়াচ্ছে চার দিকে। সামনে আছে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিবসকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের ফুলের শত কোটি টাকার ব্যবসা হয় শুধু ফেব্রুয়ারি মাসে। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ফুসরত নেই ফুল ব্যবসায়ীদের।
দেশের ফুলের ব্যবসা জমজমাট যশোরে। তার পরেই নারায়ণগঞ্জ। এই দুই জেলা থেকে ফুল সরবরাহ করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। শুধু নারায়ণগঞ্জে ফুলচাষের সাথে জড়িত রয়েছে ১০ হাজার মানুষ।
নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফুলচাষিরা এখন ব্যস্ত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফুলের বাম্পার ফলনে মুখে হাসি ফুটেছে চাষিদের। দামও মিলছে ভালো। এ বছর কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারা।
বন্দর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী, দীঘলদী, মাধবপাশাসহ বিভিন্ন এলাকায় দেড় শতাধিক হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করা হয়েছে। এ বছর ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে।
দেখা গেছে, উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবদী, দীঘলদী, মাধবপাশা, আরজাদি, ফেলারদী, আখতলা, মুখ কলদী, শেলসারদী ও বন্দর ইউনিয়নের চৌধুরীবাড়ি, চিনারদী, মোল্লাবাড়ি, কলাবাগ, নবীগঞ্জ, তিনগাঁও এলাকায় জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন চাষিরা। ওই এলাকার জমিগুলোতে বিদেশী জারবেরা, গাঁদা, রজনীগন্ধা, জিপসি, চেরি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, হলুদ গাঁদা, গ্লøাডিওলাস, চায়না গাঁদা, কাঠমালতী, কামিনী, বেলি, জবা, গন্ধরাজসহ নানান প্রজাতির ফুল ফুটেছে। ফুলচাষিরা জমি ও বাগানে ফুলগাছের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকেরা জানান, এ বছর ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় ফুলের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। এ ছাড়া ফুলের বাজার চাঙ্গা থাকায় তারা খুশি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮০ সালের দিকে কাঠমালতী ও গাঁদা ফুল দিয়ে বন্দর উপজেলার সাবদীতে ফুলের চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে কৃষিজমিতে এই ফুলচাষ সম্প্রসারিত হতে থাকে। এখানকার প্রতিটি বাড়ির সীমানা, সড়কের দু’পাশে কাঠমালতীসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো রয়েছে। ফুল চাষ করে স্থানীয় লোকজন এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।
এ দিকে বন্দর উপজেলার সাবদীসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে ফুল দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর দর্শনার্থী ঘুরতে যান। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ফুলের বাগান ঘুরে দেখেন।
মাধবপাশার জারবেরা ফুলচাষি আবদুল বাতেন বলেন, এবার তার বাগানে ৫০ হাজারের বেশি জারবেরা ফুটেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফুল উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিটি জারবেরা বিক্রি করছেন আট থেকে ১০ টাকায়। তার ফুল রাজধানীর শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে।
দীঘলদী এলাকার ফুলচাষি নকুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, তিনি এবার ৪০ বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস, জিপসি, চেরি, ডালিয়াসহ কয়েক প্রজাতির ফুলের চাষ করেছেন। একই এলাকার চাষি শতরঞ্জন বলেন, গত বছর ৩০ বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুল চাষ করা হয়েছে। এ বছর ৫০ বিঘা জমিতে গ্লাডিওলাস চাষ করা হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে।
ফুলচাষিরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের উৎপাদন ভালো হয়েছে। ফুলের চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। গ্লাডিওলাস প্রতিটি ১২ থেকে ১৫ টাকা, জারবেরা প্রতিটি আট থেকে ১০ টাকা, ডালিয়া প্রতিটি ১০ টাকা, জিপসি ৪০ টাকা আঁটি এবং চেরি ১০০টি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বন্দর উপজেলা ফুলচাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুল বাতেন বলেন, সাবদী ও আশপাশের এলাকার মানুষ এখন বিভিন্ন ফুল চাষের ওপর নির্ভরশীল। ফুল চাষের সাথে আট থেকে ১০ হাজার লোক জড়িত। সাধারণ যে চাষি তারও ফুলচাষ থেকে বছরে আয় দুই লাখ টাকা। এখানকার উৎপাদিত ফুল ঢাকা, ফেনী, লাকসাম, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এবার ফুলের উৎপাদন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা খুশি। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, এ বছর কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রি হবে।’
এ বিষয়ে বন্দর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোস্তফা এমরান হোসেন বলেন, বিভিন্ন দিবস, উৎসবসহ অনুষ্ঠানে ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দিন দিন ফুলচাষে আগ্রহ বাড়ছে। ফুল চাষ করে দামও ভালো পান চাষিরা। চাষিদের প্রশিক্ষণ ও নানাভাবে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক, মোট সম্পত্তি ৭.৫ কোটি ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইসরাইল সরকারে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব : নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাফায় ইসরাইলি হামলা, সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ৮ লাখ ফিলিস্তিনি চেন্নাইকে বিদায় করে বেঙ্গালুরুর ‘অবিশ্বাস্য’ প্লে অফ মনের মিনার ভেঙে পড়েনি মার্কিন প্রশাসনের ‘বাকস্বাধীনতা’র মুখোশ শিগগিরই মাগুরায় রেললাইন চালু হবে : রেলমন্ত্রী সংসদ ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মী নিহত জুজুৎসুর সম্পাদকের যৌন নিপীড়নের তথ্য দিলো র্যা ব পানচাষীদের পরিশ্রমের ফসল জিআই স্বীকৃতি : প্রতিমন্ত্রী

সকল