২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ই-সিগারেট আসক্তিতে ক্যান্সার ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি

-

কিশোর-তরুণদের ই-সিগারেট আসক্তি বেড়েই চলছে। বছর কয়েক আগে অভিজাত পাড়ার ছেলেমেয়েদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন সর্বত্রই দেখা যায়। মূলত তামাকজাত দ্রব্যের আসক্তি কমাতেই ইলেকট্রনিক (ই) এ সিগারেটের আবিষ্কার হলেও বর্তমানে ই-সিগারেট নিয়ে বিশ্বব্যাপী নতুন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এ সিগারেট নিয়ে কোনো মাথাব্যথা কারো না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান এফডিএ মার্কেট থেকে ই-সিগারেট তুলে নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে চাপ দিয়েছে। ই-সিগারেটে কোনো তামাক না থাকলেও তামাকের উপাদান নিকোটিন থাকে। নিকোটিন হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি করে থাকে বলে গবেষণায় প্রমাণিত। নিকোটিন উচ্চরক্তচাপের মতো সমস্যা তৈরি করে থাকে। এটা শ্বাসতন্ত্রেও ক্ষতি করে থাকে।
বাংলাদেশে মূলত চীন থেকে চোরাইপথে এই সিগারেটের যন্ত্রটি আসে। আগে এটা বিক্রি হতো অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে। এখন ফুটপাথের দোকানেও বিক্রি হচ্ছে। খুব সহজলভ্য হওয়ায় সব শ্রেণীর তরুণদের হাতের নাগালে চলে গেছে। কয়েক বছর আগে রাজধানীর গুলশান-বনানীর রাস্তায় দেখা যেত তরুণদের মুখে। এখন নি¤œ আয়ের মানুষ বাস করে এমন এলাকার তরুণদের হাতে শোভা পাচ্ছে। এখনই এর রাস টেনে না ধরতে পারলে ভবিষ্যতে এটা মোকাবেলা করা কঠিন হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মোজাহেরুল হক। তিনি জানান, ই-সিগারেটও তামাকের মতো সমান ক্ষতিকর। বাংলাদেশে ধূমপান সংক্রান্ত একটি আইন আছে কিন্তু এটা কার্যকর নয়। এখন আবার ই-সিগারেটের বিপদ আমাদের সামনে। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক ধূমপানের যে আইন রয়েছে তাতে ই-সিগারেটকে যুক্ত করে আইনটি কার্যকর করার পরামর্শ দেন। তিনি জানান, আমাদের পাশের দেশ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। নেপাল পারলে আমরাও পারব। ইতিবাচক কোনো কাজে এ জাতি সব সময় সহযোগিতা করেছে অতীতে। ধূমপানের ব্যাপারেও করবে বলে তিনি মনে করেন।
ই-সিগারেটে যে তরলটি ব্যবহার করা হয় তা বিষাক্ত। এ তরলটি শিশুরা পান করে ফেললে বিষক্রিয়ার মুখে পড়বে। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক এ যন্ত্রটি ব্যবহার করতে বৈদ্যুতিক চার্জ দিতে হয়। বেশি চার্জ হয়ে গেলে এর ব্যাটারিটি বিস্ফোরিত হতে পারে। মোবাইলের ব্যাটারির মতোই এটা দেহের ক্ষতি করতে পারে। ই-সিগারেট ব্যবহারকারীর কোনো পরিসংখ্যান বাংলাদেশে নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএর পরিসংখ্যান অনুসারে সেখানে ৩৬ লাখ তরুণ এটা ব্যবহার করে। ইউএসএফডিএর কমিশনার স্কট গুটিলেব এবিসি নিউজকে বলেন, ই-সিগারেটে ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থটি অত্যন্ত উচ্চমানের এডিক্টিভ (নেশা সৃষ্টিকারী)। তরুণরা মনে করে এটা তামাকজাত দ্রব্যের চেয়ে নিরাপদ। কিন্তু এটা মোটেও নিরাপদ নয়। ২০০৮ সালে তুরস্ক সরকার ই-সিগারেট তাদের দেশে নিষিদ্ধ করে। অস্ট্রেলিয়া নিষিদ্ধ করে ২০০৯ সালে। ইউরোপ ২০০৬ সালে ও যুক্তরাষ্ট্র এর পরের বছর তাদের দেশের এ সিগারেট বাজারজাত করার অনুমতি দেয়। ‘তামাকজাত পণ্যের চেয়ে কম ক্ষতিকর এবং তামাকজাত পণ্যের নেশা কমিয়ে দেয়’ এই যুক্তিতে বাজারে আনা হলেও বর্তমানে এটা নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা শুরু হয়েছে। এফডিএ কমিশনার গুটিলেব ‘ই-সিগারেটের বিষয়টি বৃহত্তর পর্যায়ে তুলে ধরার অঙ্গীকার করেছেন এবং এর সুরাহা করার কথাও বলেন।’
বেশ কিছু গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে ই-সিগারেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণা বলছে, ই-সিগারেট ব্যবহারকারীদের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার দ্বিগুণ ঝুঁকি রয়েছে। আমেরিকান হার্ট ফাউন্ডেশন জার্নালে গত ২৩ আগস্ট প্রকাশিত এ বিষয়ক এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে।
তামাকজাত সিগারেট পানে অভ্যস্ত ধূমপায়ীদের চেয়ে যারা ই-সিগারেট পান করেন তাদের হার্ট অ্যাটাকের তিনগুণ ঝুঁকি রয়েছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- যারা তামাকজাত সিগারেট ও ই-সিগারেট দুটোই পান করেন একই সাথে, অধূমপায়ীদের থেকে এদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি পাঁচ গুণ। আমেরিকান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে ক্যালিফোর্নিয়া, সানফ্রান্সিসকো ও জর্জ ওয়াশিংটন বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলেছেন, প্রায় ৬৬ শতাংশ ই-সিগারেটে অভ্যস্তরা একই সাথে তামাকজাত ধূমপানও করে থাকেন।
ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট তৈরি করা হয় নিকোটিনের স্ট্রে দিয়ে এবং এর সাথে অন্যান্য গন্ধযুক্ত তরল গরম করে। ই-সিগারেট বাজারজাত করা হয়েছিল ধূমপানের নিরাপদ বিকল্প হিসেবে। বস্তুত ই-সিগারেট ক্ষতিহীন নয়। এই সিগারেট তামাকের চেয়ে একটু কম মাত্রায় কার্সিনোজেন (ক্যান্সার উৎপাদক) তৈরি করে। তবে ই-সিগারেট আলট্রা ফাইন কণা তৈরি করে যা ফুসফুস ও বায়ু চলাচলের রাস্তার ক্ষতি করে যা কার্ডিওভাস্কোলার ও ক্যান্সারহীন ফুসফুসের রোগের সাথে যুক্ত টক্সিন তৈরি করে। গবেষণা প্রতিবেদনের শেষে গবেষকেরা অবশ্য বলেছেন, ই-সিগারেট প্রকৃতপক্ষে ধূমপানের কোনো স্বাস্থ্যকর বিকল্প নয়। সবচেয়ে ভালো হয় ধূমপায়ীরা যদি তামাক অথবা ই-সিগারেট পান দুটোই একেবারে বন্ধ করে দেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement