১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই কৃষি ঋণ নবায়নের সুযোগ

নাখোশ ব্যাংকাররা; আড়াল হবে খেলাপি ঋণ
-

কোনো প্রকার ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই কৃষিঋণ নবায়নের সুযোগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে। ব্যাংকাররা জানান, দেশে চলতি বছরে আগাম কোনো বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই। গত বছরে ছিল না কোনো রাজনৈতিক গোলযোগ। এর পরও এ ধরনের সুযোগ খেলাপি ঋণ গোপন করারই নামান্তর বলে তারা মন্তব্য করেন। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের সুযোগ মূলত উদ্দেশ্যমূলক বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে প্রধান বিরোধী দলবিহীন একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর ব্যবসায়ীদের নানা সুযোগ-সুবিধা দেন তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমান। রিজার্ভ কেলেঙ্কারির দুর্নাম মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করা তৎকালীন গভর্নর ২০১৪ সালে কোনো রকম ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই ঋণ নবায়নের সুযোগ দেন। একই সাথে ঋণ পুনর্গঠনের নামে ১৪টি শিল্প গ্রুপকে ১৫ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নবায়ন করেন। ফলে ওই বছরের ডিসেম্বর শেষে রাতারাতি খেলাপি ঋণ মোট ঋণের ১০ শতাংশের নিচে নেমে আসে। সাধারণত ঋণখেলাপিরা নতুন করে ঋণ নিতে পারেন না। কিন্তু ওই সময়ে বড় বড় ঋণখেলাপিরা এ সুযোগ নিয়ে তখন আবার ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ বাগিয়ে নেন; যা পরে আবারো তা খেলাপি হয়ে যায়।
ওই সময় ব্যবসায়ীদের মতো কৃষিঋণের ক্ষেত্রেও ডাউন পেমেন্ট ছাড়া ঋণ নবায়নের সুযোগ দেয়া হয়। ২০১৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এ সার্কুলার জারি করে তৎকালীন গভর্নর। কিন্তু এ সার্কুলার জারি করার চার বছরের মাথায় আবারো ওই সার্কুলার হুবহু গতকাল জারি করল বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সময় বলা হয়েছিল স্বল্পমেয়াদি কৃষিঋণ পুনঃতফসিলের ক্ষেত্রে ব্যাংকার গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ডাউন পেমেন্ট গ্রহণের শর্ত শিথিল করা যাবে। ক্ষেত্রবিশেষ বিনা ডাউন পেমেন্টেও এ ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে। আবার ঋণ পুনঃতফসিলির পর কৃষকদের ফের নতুন করে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো নতুন জমা পুনঃতফসিল পরবর্তী নতুন ঋণসুবিধা দেয়া যাবে। বলা হয়েছিল সার্টিফিকেট মামলা দায়েরকৃত থাকলে মামলা চলাকালে গ্রাহকের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে সার্টিফিকেট মামলা উত্তোলন বা নিষ্পত্তিপূর্বক ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে, যা গতকাল হুবহু ওই সুযোগ দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের শিথিলতার কারণেই বেশির ভাগ সময় খেলাপি ঋণ আদায় করা যায় না। বড় বড় ঋণখেলাপিকে আটকানো হয়, কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তারা বিশেষ অনুমোদন এনে পর্ষদকে বাধ্য করে ঋণ নবায়নে। ২০১৪ সালে গণসুযোগ দেয়ায় ওই সময় বড় বড় ঋণখেলাপি কোনো প্রকার ডাউন পেমেন্ট ছাড়াই ঋণ নবায়ন করেন। তাদের দেখে যারা নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তারাও ঋণ পরিশোধ বন্ধ করে দেন। আবার যারা ডাউন পেমেন্ট ছাড়া ঋণ নবায়ন করেন তারা আবার মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করছেন না। এরই ফলে ব্যাংকিং খাতে দেড় লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের পাহাড় জমেছে। ২০১৫ সালের সার্কুলারের রেফারেন্স দিয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে সার্কুলার জারি করা হয়েছে তা ওই একই কারণে করা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রকৃত কৃষক কখনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি হন না। তারা যথাযথ সময়ে ঋণ পরিশোধ করেন। কিন্তু কৃষিঋণের নামে রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক থেকে যারা ঋণ বের করে নেন, তারাই ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেন না। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে চার বছর পর একই সার্কুলার জারি কী উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না বলে তিনি মনে করেন। এ ধারণের সার্কুলার জারি করায় খেলাপি ঋণ হয়তো কিছু দিনের জন্য গোপন করা হবে, কিন্তু দুই দিন পর তা আবার খোলাসা হয়ে পড়বে। এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য মোটেও সুখকর হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইসরাইল সরকারে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব : নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাফায় ইসরাইলি হামলা, সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ৮ লাখ ফিলিস্তিনি চেন্নাইকে বিদায় করে বেঙ্গালুরুর ‘অবিশ্বাস্য’ প্লে অফ মনের মিনার ভেঙে পড়েনি মার্কিন প্রশাসনের ‘বাকস্বাধীনতা’র মুখোশ শিগগিরই মাগুরায় রেললাইন চালু হবে : রেলমন্ত্রী সংসদ ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মী নিহত জুজুৎসুর সম্পাদকের যৌন নিপীড়নের তথ্য দিলো র্যা ব পানচাষীদের পরিশ্রমের ফসল জিআই স্বীকৃতি : প্রতিমন্ত্রী বগুড়ায় অবৈধ মজুদকৃত ১ লাখ ডিম উদ্ধার

সকল