১৫ মে ২০২৪, ০১ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫
`


জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঠেকানো

ঋণ খেলাপিদের হালনাগাদ তথ্য চেয়েছে নির্বাচন কমিশন

বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি
-

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ঠেকাতে ঋণ খেলাপিদের হালনাগাদ তথ্য চেয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। গতকাল কমিশন থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। গভর্নরের বরাবর লেখা চিঠিতে ঋণ খেলাপিদের সর্বশেষ তথ্য পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী কোনো প্রার্থী ঋণ খেলাপি হলে তারা যেকোনো ধরনের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। এ কারণে সব ধরনের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের কেউ ঋণ খেলাপি কি না তা যাচাই-বাছাই করে থাকেন। আর যারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান তারা আগে থেকেই খেলাপি মুক্ত হতে ব্যাংকে আসেন। খেলাপিঋণ নবায়ন করতে হলে ১৫ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট অর্থাৎ ১০০ টাকা খেলাপি হলে ১৫ টাকা নগদে ব্যাংকে জমা দিতে হয়। এভাবে খেলাপি মুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন ঋণ খেলাপিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাংকে ধরনা দিচ্ছেন। তাদের কোনো ঋণ খেলাপি হয়েছে কি না তা যাচাই-বাছাই করছেন। যারা ঋণ খেলাপি তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছেও আসছেন। বিশেষ করে সরকার সমর্থক ঋণ খেলাপিরা ডাউন পেমেন্ট না দিয়ে খেলাপি মুক্ত হতে চেষ্টা করছেন।
সোনালী ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে তাদের ব্যাংকে তিন ডজনেরও বেশি প্রার্থী ঋণ নবায়নের জন্য এসেছেন। তাদের নাম পরিচয় না জানানোর শর্তে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যারা ব্যাংকে আসছেন, বেশির ভাগই ব্যাংকের খাতায় ঋণ খেলাপি রয়েছেন। এরা এখন ঋণ খেলাপি মুক্ত হতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত দশম জাতীয় নির্বাচন ছিল অনেকটা একতরফা। একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না হওয়ায় ওই সময় দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট নির্বাচন বর্জন করে। এর ফলে ১৫৩টি আসনে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ভোট ছাড়াই। এ একতরফা নির্বাচনের আগে কোনো ঋণ খেলাপি ব্যাংকের সাথে তেমন যোগাযোগ করেননি। ব্যাংকাররা জানান, গত ২০০১ ও ২০০৮-এর সংসদ নির্বাচনে যে পরিমাণ ঋণ খেলাপি তাদের ঋণ নবায়ন করেছিলেন ২০১৩-এর জাতীয় নির্বাচনে তার ২ শতাংশও ঋণ নবায়ন করেননি। এ কারণে তারা (ব্যাংকাররা) তখন হতাশ হয়েছিলেন। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনকেন্দ্রিক ঋণ নবায়নের চিত্র পাল্টে গেছে। এখন অনেকটা জাতীয় নির্বাচনের আমেজ মনে হচ্ছে ব্যাংকারদের কাছে। অনেকেই ঋণ নবায়ন করতে আসছেন।
গতকাল অগ্রণী ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তারা পুরোপুরি নিরাশ হয়েছিলেন। ওই সময় বড় কোনো নেতা বা বড় অঙ্কের কোনো ঋণ খেলাপি ঋণ নবায়ন হয়নি। কেউ ব্যাংকে পর্যন্ত যোগাযোগ করেননি। অথচ বিগত বছরগুলোতে খেলাপি ঋণের বড় একটা অংশ নির্বাচনকেন্দ্রিক আদায় হতো।
জনতা ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত ২০০১ নির্বাচনে ৩৩৯ জন ঋণ খেলাপি নির্বাচন উপলক্ষে তাদের খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছিলেন। ২০০৮-এর সংসদ নির্বাচনেও একটি উল্লেখযোগ্য ঋণ খেলাপি ঋণ নবায়ন করেছিল। কিন্তু গত ২০১৩ তে হাতেগোনা ১০ জন ঋণ খেলাপি তাদের ঋণ নবায়ন করেছিলেন। এবার নির্বাচনকে ঘিরে ছোট বড় অনেকেই বড় অঙ্কের ঋণ নবায়ন করছেন। যেমন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে আওয়ামী লীগের একজন এমপির মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের নামে জনতা ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল, তা তিনি নবায়ন করে নিয়েছেন। সাবেক মন্ত্রী ও সাম্যবাদী দলের এক নেতার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপি ছিল। তিনি এরই মধ্যে তা নবায়ন করেছেন। তবে সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঋণ নবায়নের জন্য অনেকেই আসছেন। তবে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেশির ভাগই ডাউন পেমেন্ট না দিয়ে নবায়ন করতে চাচ্ছেন। এ কারণে অনেকেই ছুটে যাচ্ছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে।
সোনালী ব্যাংকের ওই সূত্র জানিয়েছে, বিরোধীদলীয় নেতাদের মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনেই তাদের ঋণ নবায়ন করছেন। যেমন, বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও মুন্নু গ্রুপের কর্ণধার মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুর মেয়ে আফরোজা খানম রিতা বিএনপির পে মানিকগঞ্জ থেকে প্রার্থী হতে পারেন। তাদের প্রতিষ্ঠান মুন্নু ফেব্রিক্স সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ে ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৩০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে এই ঋণ নবায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঋণ নবায়নের জন্য এককালীন ডাউন পেমেন্ট বাবদ ১১ কোটি টাকা সোনালী ব্যাংকে জমা দেয়া হয়েছে। বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী মোর্শেদ খানের মালিকানাধীন প্যাসিফিক বাংলাদেশ টেলিকমের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা। গ্রুপের প থেকে ঋণ নবায়নের বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। তারা বিদেশী উদ্যোক্তাদের কাছে শেয়ার বিক্রি করে ঋণ শোধ করার উদ্যোগ নিয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement
খাদ্য মূল্যস্ফীতির চক্রে নিম্ন আয়ের মানুষ স্বর্ণের অলঙ্কার বিক্রিতে মজুরি ৬ শতাংশ ফ্রান্সে কারা কর্মকর্তাদের হত্যা করে প্রিজনভ্যান থেকে আসামি ছিনতাই নিউ কালেডোনিয়ায় সহিংসতার পর কারফিউ, বন্ধ বিমানবন্দর থাইল্যান্ডের কারাগারে অনশনে থাকা তরুণীর মৃত্যু ভারতীয় পত্রিকার রিজার্ভ চুরির খবর মিথ্যা : বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যঙ্গোক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট, যুবলীগ নেতা গ্রেফতার রাফা ক্রসিং বন্ধের জন্য মিসরকে দায়ী করল ইসরাইল দেশের মাটি ধরে রাখাই এখন অনেক কঠিন : কিয়েভ কুবি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ ডোনাল্ড লু'র সফর নিয়ে আ'লীগ ও বিএনপিতে এত কথাবার্তা কেন?

সকল