অব্যাহত গণগ্রেফতারে জনজীবনে স্থবিরতা
- আবু সালেহ আকন
- ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
দেশজুড়ে গণগ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান থামেনি। এতে অনেকেই বলেছেন, তফসিল ঘোষণা হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের হাতেই রয়ে গেছে। সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে গ্রেফতারের জন্য। এই অভিযান থেকে বাদ যাচ্ছেন না জনপ্রতিনিধিরাও।
চুয়াডাঙ্গায় জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিএনপি-জামায়াতের ৩৮ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার দুপুরে নাশকতার অভিযোগে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ কার্যালয় থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির (সহসভাপতি)। একই অভিযোগে বিএনপি নেতা বেগমপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলি হোসেন, জামায়াতের কর্মী উপজেলার কুড়–লগাছি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সরফরাজ উদ্দীন এবং একই উপজেলার কুনিয়া চাঁদপুর গ্রামের জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। এর বাইরে আরো ৩৪ জনকে বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয় গ্রেফতারকৃত কয়েক শ’ মানুষকে। গত মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য তাদের অনেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাচ্ছিলেন। পথে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানা যায়। আগের দিন গ্রেফতার করা হয় শাহবাগ থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চলসহ বেশ কয়েকজনকে। গতকাল সকাল থেকে আদালত চত্বরে দেখা যায় শত শত মানুষ অপেক্ষা করছেন স্বজনদের জন্য। রাজধানীর কাফরুল এলাকার বাসিন্দা সেলিম নয়া দিগন্তকে বলেছেন, তার এক আত্মীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানী ও বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ সন্দেহভাজন পথচারীদের আটকে জেরা করছে। সদুত্তর দিতে না পারলেই আটকের ঘটনা ঘটছে।
সম্প্রতি যেসব গায়েবি মামলা হয়েছে ওই মামলার সূত্র ধরে পুলিশ নতুন করে গ্রেফতার অভিযানে নেমেছে বলে জানা গেছে। মামলার সূত্র ধরে পুলিশ এখন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে গায়েবি মামলার সংখ্যা চার হাজার ৩৭১টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৫ লাখ নেতাকর্মীকে। বিএনপির পক্ষ থেকে এসব গায়েবি মামলার তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
ঝালকাঠির যুবদলের এক নেতা গতকাল বলেছেন, এলাকায় অবস্থান করা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তিনি ঢাকায় চলে এসেছেন। গত বুধবার রাতে ঝালকাঠির রাজাপুরের ছয় ছাত্রদল নেতাকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০ দলীয় জোটের স্থানীয় এক নেতা জানিয়েছেন, পুলিশ বিরোধী নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে যাচ্ছে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ওয়াদার পরও হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারা কেউ বাড়ি ঘরে থাকতে পারছেন না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেয়ার আশ্বাস দিলেও মামলার তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা