২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একই বিষয় একাধিক বইয়ে পাঠ্য

প্রাথমিকের পাঠ্যবই (৩ )
-

তৃতীয় শ্রেণীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের ১২তম অধ্যায়ের নাম বাংলাদেশের জনসংখ্যা। একই শ্রেণীর ‘প্রাথমিক বিজ্ঞান’ বইয়ের ১২তম অধ্যায়ের নাম জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।
চতুর্থ শ্রেণীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের ১৩তম অধ্যায়ের নাম বাংলাদেশের জনসংখ্যা। একই শ্রেণীর ‘প্রাথমিক বিজ্ঞান’ বইয়ের ১৩তম অধ্যায়ের নাম জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।
একইভাবে পঞ্চম শ্রেণীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ ও ‘প্রাথমিক বিজ্ঞান’ উভয় বইয়ে জনসংখ্যা সমস্যা নিয়ে একটি করে অধ্যায় রয়েছে।
শুধু জনসংখ্যা নয়, পরিবেশসহ আরো কিছু বিষয় রয়েছে যা তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যেক শ্রেণীর একাধিক বইয়ে পাঠ্য করা হয়েছে। বিষয় যেহেতু এক তাই উভয় বইয়ের বর্ণনায় অনেক মিল রয়েছে এসব বিষয়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিন্ন আঙ্গিক আনা হয়েছে বর্ণনার ক্ষেত্রে।
একই বিষয় একই শ্রেণীর একাধিক বইয়ে পাঠ্য হওয়া নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক খুশি আবার অনেকে ক্ষুব্ধ। কেউ কেউ খুশি কারণ একই বিষয় দুই বইয়ে থাকায় পড়ার চাপ কিছুটা কমেছে। আবার অনেকে ক্ষুব্ধ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতার কারণে।
তৃতীয় শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের নাম প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ। একই শ্রেণীর প্রাথমিক বিজ্ঞান বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের নাম আমাদের পরিবেশ। দুই বইয়ের দুটি অধ্যায়ের বিষয় যেমন এক তেমনি প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সংজ্ঞা , বিবরণ ও বিভিন্ন ধরনের উদাহরণের ক্ষেত্রেও অনেক মিল রয়েছে।
যেমন তৃতীয় শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের প্রথম লাইনে বলা হয়েছে আমাদের চারপাশের সব কিছু নিয়ে আমাদের পরিবেশ।
একই শ্রেণীর প্রাথমিক বিজ্ঞান বইয়ের আমাদের পরিবেশ অধ্যায়েরও শুরুতে লেখা হয়েছে চারপাশের সব কিছু মিলেই তৈরি হয়েছে আমাদের পরিবেশ।
বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের সংজ্ঞায় লেখা হয়েছে, ‘আমাদের চারপাশে প্রকৃতি দেখতে পাই। এখানে আছে নানা ধরনের গাছ, ফুল, লতাপাতা। এখানে আরো আছে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী, পাখি ও মাছ। আছে মেঘ, বৃষ্টি, নদী এবং সূর্য। এসব কিছু নিয়েই আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত।’
প্রাথমিক বিজ্ঞান বইয়ের আমাদের পরিবেশ অধ্যায়ে প্রাকৃতিক পরিবেশের বিষয়ে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের চারদিকে রয়েছে গাছপালা, পশুপাখি, সূর্যের আলো, মাটি, পানি ও বায়ু। এগুলো আমরা তৈরি করতে পারি না। প্রাকৃতিক উপায়ে এগুলো তৈরি হয়েছে। প্রকৃতির এসব উপাদান নিয়েই প্রাকৃতিক পরিবেশ।’
চতুর্থ শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় ও প্রাথমিক বিজ্ঞান উভয় বইয়ের জনসংখ্যাবিষয়ক অধ্যায়ে যেমন মিল রয়েছে তেমনি মিল রয়েছে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের দুর্যোগ মোকাবেলা অধ্যায়ের সাথে প্রাথমিক বিজ্ঞান বইয়ের জীবনের নিরাপত্তা ও প্রাথমিক চিকিৎসা অধ্যায়ের বেশ কিছু বিষয়ের।
পঞ্চম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে জনসংখ্যাবিষয়ক অধ্যায়ে পরিবার ও সমাজের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এর অধীনে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবনমান ও পরিবেশের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এ ছাড়া জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তর ও জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায়ও তুলে ধরা হয়েছে।
অপর দিকে পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক বিজ্ঞান বইয়ে জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ অধ্যায়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও মানুষের চাহিদা, জনসংখ্যা ঘনত্ব, পরিবেশের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব, জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। উভয় বইয়ে এ সংক্রান্ত আলোচনায় অনেক মিল রয়েছে।
যেমন পঞ্চম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের পঞ্চম অধ্যায়ের নাম জনসংখ্যা। এখানে পরিবেশের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাব আলোচনা করতে গিয়ে লেখা হয়েছে, ‘অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। মানুষ গাছপালা কেটে বাড়িঘর তৈরি করছে। অধিক ফসল ফলাতে গিয়ে জমিতে প্রচুর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে পুকুর রা নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। ভূগর্ভের পানি উত্তোলনের কারণে সামগ্রিকভাবে আমাদের পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
পঞ্চম শ্রেণীর প্রাথমিক বিজ্ঞান বইয়ে জনসংখ্যাবিষয়ক অধ্যায়ের নাম জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ । এখানে পরিবেশের ওপর অধিক জনসংখ্যার প্রভাব তুলে ধরতে গিয়ে লেখা হয়েছে, ‘পরিবেশের ওপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বাড়তি শস্য উৎপাদন এবং পশুপালনের জন্য মানুষ বন উজাড় করছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট এবং কলকারখানা তৈরিতেও অধিক জমি ব্যবহার করছে। বনভূমি ধ্বংসের ফলে বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তন হয়। জীবের আবাসস্থল ধ্বংস হয় এবং ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়। এ ছাড়া বনভূমি ধ্বংসের ফলে ভূমিক্ষয় এবং ভূমিধস হয়। কৃষিক্ষেত্রে উদ্ভিদের ভালো বৃদ্ধি এবং অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মাটি এবং পানি দূষিত হচ্ছে।’
অনেক অভিভাক ও শিক্ষকের মতে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে জনসংখ্যা সমস্যা বিষয়ে যে আলোচনা করা হয়েছে তারপর বিজ্ঞান বইয়ে এ বিষয়ে আর আলোচনার দরকার ছিল না।
পঞ্চম শ্রেণীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ১১তম অধ্যায়ের নাম আবহাওয়া ও জলবায়ু এবং ১২তম অধ্যায়ের নাম জলবায়ু পরিবর্তন। একই শ্রেণীর প্রাথমিক বিজ্ঞান বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ের নাম জলবায়ু ও দুর্যোগ। আবহাওয়া ও জলবায়ুসংক্রান্ত একই শ্রেণীর উভয় বইয়ের আলোচনায় অনেক মিল রয়েছে। আবার পঞ্চম শ্রেণীর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বইয়ের পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগসংক্রান্ত আলোচনার সাথেও কিছুটা মিল রয়েছে এসবের।


আরো সংবাদ



premium cement