২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোংলা-বুড়িমারী বন্দরে শতভাগ দুর্নীতি : টিআইবি

টিআইবির সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান :নয়া দিগন্ত -

মোংলা বন্দর ও কাস্টম হাউজ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে প্রতি বছর ৩১ কোটি টাকা অবৈধ লেনদেন হয় বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির মতে, এই দুই বন্দরে প্রতিটি সেবা নিতে হয় ঘুষের মাধ্যমে। ফলে সব েেত্র শতভাগ দুর্নীতি হয়। গতকাল রোববার টিআইবির কার্যালয়ে মোংলা বন্দর ও কাস্টম হাউজ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন : আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।
মোংলা ও বুড়িমারী বন্দরের সেবার েেত্র শতভাগ দুর্নীতি হওয়া সংক্রান্ত সুস্পষ্ট তথ্য টিআইবির কাছে আছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ, শ্রমিক নেতাদের একাংশ, দালালদের একটি অংশের প্রভাব এবং যাদের ওপর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ বা সুশাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব তাদের একাংশের যোগসাজশে এসব দুর্নীতি হয়।
তিনি বলেন, বন্দরে যে দুর্নীতি হয় তা কর্তৃপরে অজানা নয়। কর্তৃপ যদি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তা সম্ভব। শুধু যেটি দরকার তা হলো সদিচ্ছার। যারা এই দুর্নীতির সাথে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দেয়া যে দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হয়।
টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোংলা কাস্টম হাউজ থেকে তিন হাজার ৯৯ কোটি টাকা এবং বন্দর থেকে ২২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর বুড়িমারী কাস্টম হাউজ থেকে ৪৫ কোটি এবং বন্দর থেকে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমপে ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূত লেনদেন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে শুল্ক স্টেশনে আমদানির েেত্র দুই কোটি ৫১ লাখ টাকা ও রফতানির েেত্র ৩৪ লাখ টাকা। স্থলবন্দর কর্তৃপ আমদানির েেত্র ৪৩ লাখ টাকা ও রফতানির েেত্র ৫ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূত আদায় করেছে। বাকি পাঁচ কোটি ৪০ লাখ টাকা মোটর শ্রমিকেরা নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়েছে।
অন্য দিকে মোংলা কাস্টম হাউজ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিয়মবহির্ভূত গাড়ি থেকে ছয় কোটি ৪৭ লাখ টাকা, কনটেইনার থেকে সাত কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং বাল্ক থেকে এক কোটি ৩২ লাখ টাকা নিয়েছে। আর মোংলা বন্দরের মাধ্যমে নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করা হয়েছে চার কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে গাড়ি থেকে দুই কোটি ৭৮ লাখ টাকা, কনটেইনার থেকে এক কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং বাল্ক থেকে ৫৮ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বন্দরের এই দুর্নীতি আইনের চোখে প্রমাণিত না। যে কারণে আমরা এটিকে অভিযোগ বলছি। যারা প্রত্যভাবে দুর্নীতির শিকার হয়ে, নিজেরাও দুর্নীতির অংশীদার হয়ে যাচ্ছে তাদের তথ্য এবং অন্যান্য অংশীজন থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। আমাদের ম্যাথলজি অনুযায়ী প্রমাণিত বিধায় আমরা এটিকে (দুর্নীতি) বলছি।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা বলেন জোর করে টাকা নিচ্ছি না, তারা যারা দুর্নীতি করেন তারা তো বিভিন্নভাবে সেটি ব্যাখ্যা করেন। এটি অনেকে স্পিড মানি বলে থাকেন, আমাদের সরকারের একাংশ থেকেও আমরা সেটি শুনে থাকি। তবে আমরা সেটিকে দুর্নীতিই বলি। বকশিস হিসেবে যে অতিরিক্ত টাকা দেয়া হয় সেটি খুশি হয়ে দিচ্ছি এটি কেউ স্বীকার করবে না। তারা কিন্তু জিম্মি হয়ে দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন এবং জিম্মি হয়ে দুর্নীতির অংশীদারও হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের জাতীয় খানা জরিপে ৮৯ শতাংশ মানুষ যারা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন, ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা বলেছেন- ঘুষ না দিলে আমরা সেবা পাবো না, কাজেই ঘুষ দিতে বাধ্য হই’ যোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
দুই বন্দরে অটোমেশন ও ওয়ান স্টপ সেবা চালু হলেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, কিছু েেত্র ইতিবাচক পরিবর্তন এলেও সার্বিক তথ্য উদ্বেগজনক। উভয় প্রতিষ্ঠানেই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় কাঠামো ব্যবস্থা উপস্থিত থাকলেও তার প্রায়োগিক পর্যায়ে নেই। এ জন্য সব পর্যায়ে ওয়ান স্টপ ও অটোমেশন ব্যবস্থা চালু নিশ্চিত করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement