২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

২০৫০ সালের পর কমবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা

-

বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০৫০ সালের পর কমতে থাকবে। জাতিসঙ্ঘের ২০১৭ সালের জনসংখ্যাবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে ২১০০ সাল পর্যন্ত কোন দেশের জনসংখ্যা কত হবে তা তুলে ধরা হয়েছে বিশ্লেষণের মাধ্যমে। এতে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৪৬ লাখ। ২০৩০ সালে এটা পৌঁছবে ১৮ কোটি ৫৫ লাখ। ২০৫০ সালে জনসংখ্যা বেড়ে হবে ২০ কোটি ১৯ লাখ। ২১০০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা হ্রাস পেয়ে ১৭ কোটি ৩৫ লাখে নেমে আসবে।
জনসংখ্যার হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। কিছু নগর-রাষ্ট্র বাদ দিলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনসতিপূর্ণ দেশ। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি দশকের পর দশক ধরে বাংলাদেশে ছিল খুবই উদ্বেগের বিষয়। দীর্ঘকাল ধরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বোতভাবে চেষ্টা চলানো হয়। রাষ্ট্রীয় রেডিও-টিভিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয় দেশব্যাপী। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সারা দেশে মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত ছিলেন হাজার হাজার কর্মী। একসময় গ্রামে-গঞ্জে মাঠকর্মীরা নারীদের বিনামূল্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিতরণ করতেন। ঘরে ঘরে গিয়ে নারীদের বোঝানো হতো। স্কুলের মাঠে, হাটে-বাজারে বায়োস্কোপ দেখানো হতোÑ পরিবারে অধিক সন্তান থাকলে তার কুফল বিষয়ে। এসব এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। তবে পাঠ্যবইয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণবিষয়ক অধ্যায় এখনো বহাল রয়েছে গুরুত্বসহকারে। দীর্ঘকাল পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক নানা কার্যক্রম ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয় সারা দেশে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকারি এ কার্যক্রমের সফলতা প্রশংসিত হয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে খরচ হয় বিপুল অর্থ। এখন প্রচার আর বিপুল অর্থ ব্যয় ছাড়াই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে জনসংখ্যা। এর পেছনে রয়েছে শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতি, নারীর কর্মসংস্থান, নগরায়নসহ বহুমাত্রিক কারণ। ইউরোপসহ যেসব উন্নত দেশে জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে; এর মূলে দেখা গেছেÑ নগরায়ন, শিল্পায়ন, শিক্ষা, কর্মসংস্থানে নারীর অগ্রযাত্রা, নারীর ক্যারিয়ার, শিশু লালনপালন ও শিক্ষার ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি, কাজের সন্ধানে দেশ ত্যাগ, ভোগবাদিতা, জীবনযাত্রা ক্রমে কঠিন থেকে কঠিনতর হওয়া। এ ছাড়া উন্নত দেশের অনেক নারী সন্তান ধারণ এমনকি বিয়েতে পর্যন্ত আগ্রহ হারিয়েছেন অনেক আগেই।
উন্নত দেশে যেসব কারণে জনসংখ্যা কমছে এর অনেকগুলো এখন বাংলাদেশেও বিদ্যমান। শিক্ষিত লোকজন তুলনামূলক কম সন্তান নিচ্ছেন। বিশেষ করে শহরের শিক্ষিত অনেকেই এক থেকে দুয়ের বেশি সন্তান নেন না। শহরের একজন কর্মজীবী নারীর পক্ষে বর্তমানে একাধিক সন্তান নেয়া নানা করণে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আর যেভাবে গ্রামপর্যায়েও এখন সিজারিয়ান চর্চা ছড়িয়ে পড়েছে তাতে কেউ চাইলেও দুইয়ের বেশি সন্তান নিতে পারছেন না। এ দিকে শহরে সন্তান লালনপালন এবং তাদের শিক্ষা দিন দিন ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য জটিল কাজে পরিণত হচ্ছে।
যেসব দেশে জনসংখ্যা কমছে তার কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়Ñ শিক্ষা ও নারীর কর্মসংস্থান যত বাড়বে জনসংখ্যা ততই আপনা আপনি কমে যাবে। এ জন্য আলাদা করে আর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচের দরকার নেই। তবে জন্মহার হ্রাস অনেক দেশের জন্য এখন একটি আতঙ্ক হিসেবে বিরাজ করছে। কারণ অনেক উন্নত দেশের কলকারখানার চাকা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে মানুষের অভাবে। ইউরোপের জার্মানি সিরিয়ার উদ্বাস্তুদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করার প্রধান কারণ তাদের শিল্প টিকিয়ে রাখতে মানুষ দরকার।
বাংলাদেশেও দীর্ঘকাল অধিক জনসংখ্যা একটি বোঝা এবং সার্বিক উন্নয়ন অগ্রগতির পথে বাধা হিসেবে বিবেচনা করা হতো। তবে পরিবর্তিত বিশ্বপ্রেক্ষাপটে এখন কোনো দেশেই জনসংখ্যাকে আর বোঝা বা অভিশাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। পরিবর্তিত বিশ্বপ্রেক্ষাপটে জনবহুল দেশগুলোর গুরুত্ব এবং অবস্থান বিশ্বে নানা কারণে দিন দিন বাড়ছে। সে কারণে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনও এখন আর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নয়; বরং তাদের এক সন্তান নীতি পরিবর্তন করে জন্মহার বাড়ানোর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রচার শুরু করতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ জনসংখ্যা হ্রাস বিভিন্ন দেশকে নানামাত্রিক নতুন নতুন সঙ্কটে ফেলে দিয়েছে। সে কারণে অনেক দেশ মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে জন্মহার বাড়ানোর জন্য।
বাংলাদেশে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়লেও বৃদ্ধির চিত্রে দেখা যায়, ১৯৯০ সালের পর থেকে ক্রমে কমতে থাকে বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। বাংলাদেশের জনসংখ্যা যদিও এখনো বাড়ছে; কিন্তু জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির যে ভবিষ্যৎ চিত্র দেয়া হয়েছেÑ তাতে দেখা যায়, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্য হারে কমতে থাকবে। যেখানে অতীতে দীর্ঘকাল ধরে প্রতি দুই দশকে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দেড় গুণ থেকে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে; সেখানে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ২০১৭ সালের ১৬ কোটি ৪৬ লাখ মানুষ বেড়ে ২০৩০ সালে ১৮ কোটি ৫৫ লাখ হবে। আর ২০৫০ সালে এটা হবে ২০ কোটি ১৯ লাখ।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এটা এক দিকে সফলতা এবং অন্য দিকে ভবিষ্যতে উদ্বেগেরও কারণ হতে পারে; যদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা না যায়।
বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশেও গত কয়েক বছর ধরে গ্রামে কৃষিকাজের জন্য শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর কারণ মানুষের নগরমুখী স্রোত, শিল্পায়ন এবং বিদেশমুখিতা। কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিক সঙ্কট মোকাবেলা এবং সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষায় গ্রামমুখী বিশেষ করে উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলে আসছেন বহু বিশেষজ্ঞ অনেক আগে থেকে।
বাংলাদেশে ২০১৭ সালে প্রতি এক হাজারে জন্ম নেয় ১৮ দশমিক ৮৯টি শিশু। আর প্রতি হাজারে মারা গেছে ৫ দশমিক ৪ জন মানুষ। জাতিসঙ্ঘের ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একজন নারী গড়ে ২ দশমিক ২২টি শিশু জন্ম দেয়। জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখতে ২ দশমিক ১ জন সন্তান থাকা দরকার একটি দেশে।
জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল তিন কোটি ৭৮ লাখ। ১৯৭০ সালে ছয় কোটি ৫০ লাখ, ১৯৯০ সালে ১০ কোটি ৬১ লাখ, ২০০০ সালে ১৩ কোটি ১৫ লাখ, ২০১০ সালে ১৫ কোটি ২১ লাখ।


আরো সংবাদ



premium cement
থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা

সকল