২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বগুড়ায় ফের মামলা জালে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীরা

আসামি শয্যাশায়ী বৃদ্ধ ও বিদেশে অবস্থানকারীরাও
-

বগুড়ায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা ফের মামলার জালে আটকে পড়ছেন। ১৫ দিনে জেলার সাত উপজেলায় ১৫টি মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ছয় শতাধিক নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে আরো পাঁচ শতাধিক। এর মধ্যে দু’টির বাদি আওয়ামী লীগ, অন্য ১৩টির বাদি পুলিশ। এসব মামলার আভিযোগ নাশকতার পরিকল্পনা, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি। এসব মামলায় আসামি থেকে বাদ যাননি ৮৬ বছর বয়সী প্যারালাইসড রোগী, মালয়েশিয়ায় বসবাসকারী ও সৌদি আরবে হজপালনকারী ব্যক্তিও। ফলে এসব মামলার মেরিট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপি বলছে, এসব মামলা গায়েবি ও অভিযোগ বায়বীয়। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে কমপক্ষে ৪০ জনকে। এর মধ্যে জামায়াতের ২২ জন।
রাজনৈতিক সূত্র মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে রাখতে তাদের নামে গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ভোটকেন্দ্রের আশপাশে বসবাসকারী বিএনপি ও জামায়াতের প্রভাবশালী নেতাদের নির্বাচনের আগে জেলে বন্দী করার অংশ হিসেবে এসব মামলা পুলিশ ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিএনপি।
জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর ধুনট থানায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের আওতায় নাশকতার মামলা করে পুলিশ। এ মামলায় ধুনট পৌর বিএনপির সভাপতি আলীমুদ্দিন হারুন মণ্ডল, উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরাফত জামান পাশা অন্যতম আসামি। অন্য আসামিদের সাথে আবদুল খালেক সরকার (৮৬) নামে এক বিএনপিকর্মী (যিনি প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী) আসামি করা হয়েছে। তিনি ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের নান্দিয়ারপাড়া গ্রামের মরহুম মোবারক আলী সরকারের ছেলে। একই সাথে ওই মামলায় বিএনপির আরো ১৮ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর উপজেলার কান্তনগর বাজারে মাদকবিরোধী অভিযান ও থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ডিউটিতে আসে পুলিশ। এ সময় নিমগাছী ইউনিয়নের নান্দিয়ারপাড়া রহমানিয়া সিনিয়র মাদরাসার পেছনে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠকে নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে খবর পেয়ে রাত ৮টায় অভিযান চালায় থানা পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা পালিয়ে যান। এ ঘটনায় ধুনট থানায় ওই মামলা করা হয়েছে। সেখানে প্যারালাইসিস রোগী আবদুল খালেক সরকারকে ৩৮ বছর বয়স দেখিয়ে আসামি করা হয়। প্যারালাইসিস রোগী হিসেবে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগে ৩১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি যান তিনি। বর্তমানে তিনি বাড়িতেই শয্যাশায়ী। তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে খালেক সরকারের পরিবার।
এই মামলার অপর আসামি মালয়েশিয়া প্রবাসী নাংলু গ্রামের বাসিন্দা রুবেল মিয়া। তিনি গত সাত মাস আগে কাজের সন্ধানে মালয়েশিয়ায় যান। তার নামেও মামলা দেয়া হয়েছে।
নিমগাছী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মশিউর রহমান মোল্লা বলেছেন, পুলিশ কার নামে মামলা দিচ্ছে তার বর্তমান অবস্থা কি এসবের কোনো তোয়াক্কা করছে না। ইচ্ছেমতো বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
শাজাহানপুর উপজেলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে দু’টি মামলা হয়েছে। এতে আসামির তালিকায় রয়েছেন দুই বিএনপি নেতা যারা সৌদি আরবে রয়েছেন হজ পালনের জন্য। তারা হলেনÑ মাদলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোকলেছুর রহমান ও মাঝিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি খায়রুল বাশার। এসব মামলার সময় তারা দুইজনই সৌদি আরবে ছিলেন। এ প্রসঙ্গে শাজাহানপুর থানার ওসি জিয়া লতিফুল ইসলাম বলেছেন, প্রাথমিক তথ্যে ভুল থাকতেই পারে। তদন্ত শেষে তা সংশোধন করা হবে।
বগুড়া সদর থানায় এ পর্যন্ত মামলা হয়েছে ছয়টি। এখানে চারটি বিএনপির বিরুদ্ধে ও একটিতে আসামি করা হয়েছে জামায়াতের মহিলা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বিএনপির আসামি করা হয়েছে সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল, জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বোখতিয়ারকে। এ ছাড়া শহরের কাটনারপাড়ায় কুরআন শিক্ষার আসর থেকে জামায়াতের ছয় মহিলা কর্মীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গাবতলী উপজেলায় দু’টি মামলা হয়েছে। সেখানে আসামি করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিল্টন, পৌরমেয়র সাইফুল ইসলামকে। শাজাহানপুর উপজেলায় দু’টি মামলা হয়েছে। এতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল বাশারসহ নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলায় একটি মামলা হয়েছে। এতে তালোড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন সরকার, তালোড়া পৌরমেয়র বেলাল হোসেন আসামি রয়েছেন।
সর্বশেষ গত শুক্রবার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরুল এলাকা থেকে জামায়াতের উপজেলা আমির আনারুল হকসহ ১৬ জন নেতাকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
এসব মামলা প্রসঙ্গে বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল বলেন, ‘বগুড়া সদরে আবার শুরু হলো মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা। পুলিশ কোনো কারণ ছাড়াই এসব মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। তার দৃষ্টিতে এগুলো গায়েবি মামলা। বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টির লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে পুলিশ’।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য ও বগুড়া জেলা সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম বলেছেন, সরকার বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ হবে। মিথ্য মামলা দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement