২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিএফইউজে-ডিইউজের সমাবেশ

এক-এগারোর সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগ : মির্জা ফখরুল

সাংবাদিক নির্যাতন বিরোধী সমাবেশে বক্তৃতা করছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : নয়া দিগন্ত -

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক-এগারোর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন উল্লেখ করে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনি একটি মারাত্মক কথা বলেছেন। তিনি ১/১১-এর পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন। এরপরও আপনারা সরকারে আছেন? এখনো পদত্যাগ করছেন না? সরকার আপনাদের, অথচ আপনারা ১/১১-এর পদধ্বনি শুনছেন। আমাদের একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, এই ১/১১-এর সুবিধাভোগী কিন্তু আওয়ামী লীগ। এতটাই সুবিধাভোগী যে তাদের নেত্রী বিদেশ যাওয়ার আগে বলেছিলেন, আমরা এই ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিন সরকারের সব কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেবো। তারা সংসদে আইন পাস করে ঠিকই তাদের বৈধতা দিয়েছেন। কিন্তু এটা নিয়ে কেন আবার শঙ্কিত হচ্ছেন? আসলে আপনারা জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) আয়োজিত সাংবাদিক নির্যাতন বিরোধী সংহতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন তিনি। ঢাকায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র বিক্ষোভকালে কর্তব্যরত ৪০ সাংবাদিকের ওপর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তৃতা করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আরো বক্তৃতা করেন, বিএফইউজে মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, ডিইউজে সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী, সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার ও আবদুস শহিদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, অ্যাডভোকেট এস এম কামাল উদ্দিন, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সাথে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াকে জড়ানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব জায়গায় বিএনপি ও জিয়া পরিবারের ভূত দেখতে পান। না হলে সেই ১৯৭৫ সালের ঘটনায় কিভাবে জোর করে তিনি খালেদা জিয়াকে যুক্ত করেন? তিনি জিয়াউর রহমানকে তার সাথে যুক্ত করেন? যা মুখে আসছে তা-ই তিনি বলছেন। আমরা এই কথাগুলো বলতে চাই না। আমরা বলতে চাই, আপনি রাজনীতিবিদ, আপনি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, আপনার মুখ দিয়ে এ ধরনের কথাবার্তা কখনোই শোভা পায় না। কিন্তু এটা আপনার স্বভাব। আপনি আপনার স্বভাবের মধ্য দিয়ে এ ধরনের হাস্যকর কথাবার্তা বলেন। দয়া করে এসব বন্ধ করুন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ ফ্যাসিস্ট সরকার একের এক ভিন্ন মতকে সরিয়ে দিচ্ছে। রাতের অন্ধকারে মেয়েদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের অপরাধ তারা নাকি ছেলেদের আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে উসকানির অভিযোগ তো তারা সব সময় করে। আমরা তো প্রথম দিন থেকেই প্রকাশ্যে ছাত্রদের এ ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন সমর্থন করেছি। সেই সমর্থন অব্যাহত রেখেছি। আমরা ছাত্রদের কোটা আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনকে অবশ্যই সমর্থন জানাবো এবং জনগণকে আহ্বান জানাবো যে শুধু এই নিরাপদ সড়ক নয়, নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য আপনারা এগিয়ে আসুন, আপনারা জেগে উঠুন।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার মুখে স্কুল শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন দেখালেও তাদের দমনে ছাত্রলীগ-যুবলীগ লেলিয়ে দিয়েছে। সাংবাদিকদের ওপরও নির্মম নির্যাতন করেছে। সরকার জনবিচ্ছন্ন হয়ে পড়ায় এভাবে নির্যাতন-দমনের পথ বেছে নিয়েছে। তারা বলে নতুন প্রজন্ম তাদের সাথে আছে। অথচ তারা নতুন প্রজন্মের প্রতি যে আচারণ করল তাতে নতুন প্রজন্ম এখন আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছন্ন হয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের একজনকেও তারা তাদের সমর্থনে পাবেন না।
দেশে বর্তমানে ১৯৭১-৭৫ আমলের পরিস্থিতি চলছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওই সময় দেশে চুরি, ডাকাতি, দুর্নীতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে রক্ষীবাহিনী দিয়ে ধরে নিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হতো। মেরে ফেলা হতো। বর্তমানে আওয়ামী লীগ আবার স্বরূপে ফিরেছে। স্কুল ছাত্রদের রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। শহিদুল আলমের মতো প্রখ্যাত আলোকচিত্রীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আসলে তারা একটি গণবিরোধী দলে পরিণত হয়েছে। তারা কাউকেই ছাড়বে না। কেউ যদি মনে করেন তারা বেঁচে যাবেন তাহলে ভুল করবেন। এজন্য এখনই সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। অতীত ভুলে সত্যিকার দেশ গঠনে সব দলকে কাজ করতে হবে। কারণ সম্প্রতি ছাত্ররাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেÑ ‘রাস্তা বন্ধ, রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে’। শুধু নিরাপদ সড়ক নয়, নিরাপদ দেশের জন্য লড়াই করতে হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় তাদের খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রদের গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে। অথচ সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের ছবি, ভিডিও থাকার পরও দোষীদের ধরা হচ্ছে না। তাদের নাকি এখনো চিহ্নিত করার কাজ চলছে। চিহ্নিত করতেই যদি এতদিন লাগে তাহলে ধরবেন কখন? তিনি বলেন, আসলে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। যেভাবেই হোক তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে। এজন্য সাংবাদিক, ছাত্র, তাদের মা-বাবা কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না।
সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ-বিতৃষ্ণা বাড়ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানুষ এখন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। সংখ্যালঘুরাও এখন পরিবর্তন চান। কিন্তু নতুন যারা আসবে তারা সবার নিরাপত্তা দিতে পারবে কিনা তা এখন বিবেচ্য বিষয়। মানুষ তেমন একটি শক্তিকেই খুঁজছে। যারা পরিবর্তনের ডাক দেবেন মানুষ তাদেরই সমর্থন জানাবেন।
ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর একজন ভক্ত। প্রতিদিন তার বক্তব্য শুনি। দেখি তিনি কিভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে শাসন করে যাচ্ছেন। ’৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খালেদা জিয়াকে জড়ানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব আপনি ওই বক্তব্যটি আবার শুনুন। তাহলে আপনার ভুল ধরতে পারবেন। তিনি বলেন, ’৭৫ সালে খালেদা জিয়া একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। তিনি অতিশয় ভদ্র ও নরম স্বভাবের মহিলা ছিলেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকালে গ্রেফতারকৃত ছাত্রদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান ডা: জাফরুল্লাহ।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, গত ৪ ও ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের গুণ্ডাবাহিনী সাংবাদিকদের ওপর হামলা-নির্যাতন করেছে। যার ছবি ও ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। হামলাকারীরা চিহ্নিত। অথচ প্রশাসন বলছে তাদের এখনো চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
তিনি বলেন, জনগণ তাদের অনেক আগেই চিহ্নিত করেছেন। আপনারা আর কি চিহ্নিত করবেন? এ সরকারের শাসনামলে ৩২ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি ও আমার দেশসহ বহু পত্রিকা-টিভি বন্ধ করেছেন। সাংবাদিকদের বেকার করেছেন। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা করে রক্তাক্ত করেছেন। এভাবে আর বেশি দিন পার পাবেন না। জনগণ জেগে উঠতে শুরু করেছে। এখনো সময় আছে ভালো পথে ফিরে আসুন। ৃ


আরো সংবাদ



premium cement
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই

সকল