২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রজব মাসের ফজিলত

-

রজব হলো আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহের মাস। রজব মাস বান্দার গুনাহ মাফের মাস। রজব মাসের সাথে ইসলামের অতীত ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজব মাসে আকাশপানে মেরাজে গমন করেছিলেন। হজরত নূহ আ: মহাপ্লাবনের আশঙ্কায় রজব মাসেই কিস্তিতে আরোহণ করেছিলেন। রাসূল সা:-এর কাছে রজব মাসেই প্রথম ওহি আসে। এ ছাড়া রজব হলো জান্নাতের তলদেশে প্রবাহিত একটি নদীর নাম। এ নদীর পানি দুধের মতো ধবধবে সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। যারা রজব মাসে নফল রোজা রাখবে, আল্লাহ তায়ালা আখেরাতে ওই সব রোজাদারকে রজব নদীর পানি দ্বারা আপ্যায়ন করবেন। সুমিষ্ট রজব নদীর পানি বরফের চেয়ে শীতল। যারা একবার রজব নদীর পানি পান করবে, তাদের আর কোনো দিন পানির পিপাসা লাগবে না। সুবহানাল্লাহ।
আরবি ১২ মাসের মধ্যে রজব মাস অত্যন্ত সম্মানিত। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই মহান আল্লাহর বিধানে মাসের সংখ্যা ১২টি, এর মধ্যে চারটি হচ্ছে (যুদ্ধ-বিগ্রহের জন্য) নিষিদ্ধ মাস; এটা নির্ভুল ব্যবস্থা। অতএব, তার ভেতরে (হানাহানি করে) তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না। (সূরা তাওবা : ৩৬)। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে পুরো আরবে বছরের মধ্যে চার মাস যুদ্ধ-বিগ্রহ বন্ধ থাকত। মহিমান্বিত রজব মাসে আরবে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল। রাসূল সা: সঙ্গী-সাথীদের রজব মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। সুনানে বায়হাকি শরিফ ৩/৩১৯-এ বান্দার দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে পাঁচটি বিশেষ রাতের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। পাঁচটি রাতের প্রথমটি হলো জুমার রাত, দ্বিতীয়টি ঈদুল ফিতরের রাত, তৃতীয়টি ঈদুল আজহার রাত, চতুর্থটি রজব মাসের চাঁদ উদয়ের প্রথম রাত, পঞ্চমটি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত। তাফসিরে কুরতুবি ৯/৩৩২-এ উল্লেখ করা হয়েছে, হজরত কায়েস ইবনে উবাদা বলেন, রজব মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ বান্দার দোয়া কবুল করেন। এক কথায় বলা হয়, রজব হলো দোয়া কবুলের মাস। বান্দার ক্ষমা লাভের মাস। রমজানের প্রস্তুতি নেয়ার মাস।
অন্যান্য মাসের মতো রজব মাসের জন্য বিশেষ কিছু নফল আমল রয়েছে; যে আমলের মাধ্যমে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভ ও জান্নাত লাভের পথ সুগম হয়। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা: দুই হাত তুলে এ দোয়া পাঠ করতেন এবং সাহাবাদের পড়তে বলতেনÑ ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রজবাও ওয়া শাবানা, ওয়া বাল্লিগনা ইলা শাহরির রমাদান। (মুসনদে আহমদ)। অর্থ : হে আল্লাহ, রজব আর শাবান মাসে আমাদের বরকত দান করে রমজান পর্যন্ত আমাদের জীবিত রাখুন, আমাদের রমজানের ফজিলত অর্জন করার তৌফিক দান করুন।
রজব মাস এলে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেইন, তাবে তাবেইন, আইম্মায়ে মুজতাহেদিনসহ মুমিন বান্দারা বিশেষ কিছু নফল আমল করতেন। আমলিয়াতের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, এ মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ইবাদতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম বৃহস্পতিবার রাতকে লাইলাতুল রাগায়িব বলা হয়। এ মাসের ১৫ তারিখের রাতকে লাইলাতুল ইস্তিফতাহ বলা হয়। এ মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতকে শবে মেরাজ বলা হয়। রাসূল সা:-এর মাধ্যমে যে কয়েকটি মোজেজা সংঘটিত হয়েছিল, এর মধ্যে মেরাজ হলো সর্বোচ্চ মোজেজা। মেরাজের রাতের ফজিলত ও গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূল সা:-এর নবুওয়াত লাভ-পরবর্তী ঘটনাগুলোর মধ্যে মেরাজ সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা।
সালমান ফারসি রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সা: বলেছেন, হে সালমান! এমন কোনো মুমিন পুরুষ বা মুমিনা স্ত্রীলোক কি নেই যে, এ মাসের প্রথম তারিখে মাগরিব ও এশার ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময় ৪০ রাকাত (অন্যত্র ২০ রাকাত উল্লেখ আছে) নামাজ পড়বে; তা পড়ার নিয়ম হলোÑ প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহার পর তিনবার সূরা ইখলাস, তিনবার সূরা কাফেরুন পড়বে। এতে আল্লাহ তায়ালা ওই বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দেবেন। আর আল্লাহ তায়ালা তাকে কিয়ামতের দিন শহীদের দলের সাথে উঠাবেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাকে বড় আবেদ হিসেবে গণ্য করবেন। আর সে যেন এক বছর নয়, ১০০ বছর ধরে ইবাদত-বন্দেগি করেছে এবং আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তিকে জান্নাতে হাজারো মর্যাদা দান করবেন। এ মাসের ২৭ তারিখে রোজা রাখলে আল্লাহ জাহান্নামের আগুনকে রোজাদারের জন্য হারাম করে দেবেন এবং তার ওপর জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন আর ওই ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার কাছে অবশ্যই গৃহীত হবে।
ইনশা আল্লাহ।
লেখক : শিক্ষাবিদ


আরো সংবাদ



premium cement