২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সীমালঙ্ঘন পতন ডেকে আনে

-

শয়তানের প্রস্তাবিত বিভিন্ন মন্দকর্মের মধ্যে জঘন্যতম একটি মন্দকর্ম হলো ‘সমকামিতা’। সমকামিতা কোনো নতুন বিষয় নয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে এই পাপাচারের আদি ইতিহাস সম্পর্কে একদিকে যেমন মানুষকে অবগত করেছেন, অন্য দিকে এই পাপাচারে লিপ্ত জনগোষ্ঠীকে তিনি কিভাবে আজাব দিয়ে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করেছেন সে সম্পর্কেও সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন, যাতে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি। অর্থাৎ, এটা এতই নোংরা পাপ যে অপরাধীরা এর শাস্তি দুনিয়াতেই পেয়েছিল।
সমকামিতা শুরু হয়েছিল হজরত লুত আ:-এর সম্প্রদায়ের মাধ্যমে। যা তাদের আগে কোনো জাতিই করেনি। তাই তাদের সীমা লঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হতে হয়েছে। আল্লাহ পাক তাদের সীমালঙ্ঘন বর্ণনা পূর্বক আমাদের সুন্দর শিক্ষা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি লুত আ:কে প্রেরণ করেছিলাম। যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা চরম অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার কাজ করছ, যা তোমাদের আগে সারা বিশ্বে কেউ কখনো করেনি। তোমরা কামপ্রবৃত্তি পূরণ করার জন্য মেয়েদের কাছে না গিয়ে পুরুষদের কাছে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী জাতি।’ (সূরা আরাফ : ৮০-৮১)
হজরত লুত আ:-এর সম্প্রদায় বসবাস করত সাদ্দুম নগরীতে। তারা ডাকাতি করত, প্রকাশ্য সভা বানিয়ে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা করত। তারা সর্বপ্রথম এমন একটি গর্হিত পাপ করে, যা এর আগে কোনো আদম সন্তান করেনি। লুত আ:-এর পাপী সম্প্রদায়ই প্রথম সমকামিতা (অর্থাৎ পুরুষ-পুরুষ এবং মহিলা-মহিলা যৌন আচরণ করা) শুরু করে। লুত আ: যখন তাদের ইসলামের দাওয়াত দেন। তখন তারা লুত আ:কে নির্বাসন দিতে চায় এবং উপহাস করে বলেÑ ‘এরা নিজেদের বেশি পবিত্র রাখতে চায়।’ তাফসিরে পাওয়া যায়, হজরত জিব্রাইল আ:, হজরত ইস্রাফিল আ: ও হজরত মিকাইল আ: সুদর্শন পুরুষের রূপ ধরে হজরত লুত আ:-এর এলাকায় উপস্থিত হন এবং মেহমান হন। হজরত লুত আ: গোপনে তাদের আশ্রয় দেন, কিন্তু লুত আ:-এর এক স্ত্রী এ খবর পাপাচারী সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দেয়। পাপাচারী সম্প্রদায় তাদের বিকৃত রুচি চরিতার্থ করার জন্য লুত আ:-এর বাসস্থান আক্রমণ করে। শেষ পর্যায়ে লুত আ: আল্লাহর কাছে দোয়া করেন তাঁর মেহমানদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। তখন ফেরেশতারা বলে উঠেন, ‘হে লুত আ:! আমরা তোমার পালনকর্তার পক্ষ থেকে প্রেরিত ফেরেশতা। এরা কখনো তোমার দিকে পৌঁছাতে পারবে না। ব্যস, তুমি কিছুটা রাত থাকতে থাকতে নিজের লোকজন নিয়ে বাইরে চলে যাও। আর তোমাদের কেউ যেন পেছনে ফিরে না তাকায়। কিন্তু নিশ্চয়ই তোমার স্ত্রীর উপরও তা আপতিত হবে, যা ওদের ওপর আপতিত হবে। ভোর বেলায়ই তাদের প্রতিশ্রুতির সময়, ভোর কি খুব নিকটে নয়?’ (সূরা হুদ : ১১)
মুফাসসিরগণ বলেন, এরপর প্রথম জিব্রাইল আ: তাদের সামনে আসেন এবং তাঁর ডানা দ্বারা হালকা আঘাত করেন। এতেই সব পাপাচারী অন্ধ হয়ে যায়। এরপর জিব্রাইল আ:, লুত আ:-এর নিরাপদে সরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। এরপর ডানা দিয়ে পুরো সাদ্দুম নগরীকেই গোড়াসহ তুলে ফেলেন, এত উঁচুতে নিয়ে যান যে প্রথম আসমানের রক্ষী ফেরেশতারাও সাদ্দুম নগরীর কুকুর আর মোরগের ডাক শুনতে পাচ্ছিল। এবার পুরো জনপদকে উল্টো করে সজোরে জমিনে ধসিয়ে দেয়া হয়। এবার আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রত্যেক পাপীর নাম লেখা পাথর বর্ষণ করা হয়, এমনকি যেসব পাপী-বাসিন্দা কোনো কাজে সেই নগরীর বাইরে ছিল, তাদের উপরও প্রস্তরখণ্ড এসে পড়ে। এরপর আল্লাহ সে স্থানে দূষিত পানির জলাধারা প্রবাহিত করে দেন। ‘অবশেষে আমার (আল্লাহর) আদেশ চলে এলো, তখন আমি ওই জনপদকে ধ্বংস করে দিলাম এবং তাদের ওপর স্তরে স্তরে পাথর বর্ষণ করলাম।’ (সূরা হুদ : ৮২)
নবী সা: সমকামিতার শাস্তি উল্লেখ করে হাদিসে ইরশাদ করেন, হজরত ইকরামাহ রা: ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণনা করেন, ইবনে আব্বাস রা: বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা যাদেরকে লুতের সম্প্রদায়ের অনুরূপ আচরণ করতে দেখো, সেই পাপাচারী এবং যার ওপর ওই কুকর্ম করা হয়েছে উভয়কে হত্যা করো।’ (সহিহ ইবনে মাজাহ, মিশকাত : ৩৫৭৫) এ বিষয়ে আমাদের নবী মুহাম্ম সা: বলেছেন, ‘আমার উম্মত সম্পর্কে যেসব বিষয়ে সবচেয়ে বেশি ভয় করি তা হচ্ছে পুরুষে পুরুষে যৌন মিলনে লিপ্ত হওয়া।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত : ৩৪২১)
এ হাদিসের ওপর ভিত্তি করে ইমাম শাফেয়ি রহ: এবং আলেমদের একটি জামায়াত বলেছেন, ‘লাওয়াতাতকারীকে’ হত্যা করতে হবে, সে বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক। ইমাম আবু হানিফা রহ: বলেন, তাকে ওপর থেকে নিচে নিক্ষেপ করতে হবে এবং এক এক করে পাথর বর্ষণ করতে হবে যেভাবে লুত আ:-এর কওমের প্রতি আল্লাহ করেছিলেন।
সুতরাং এই নিকৃষ্ট কাজটি যেকোনো একটি সম্প্রদায়ের জন্য অভিশাপ স্বরূপ, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! বরং এই নোংরামির শেষ পরিণতি যে ধ্বংস, তা প্রমাণে কওমে লুত আ: এক বিরাট ও স্পষ্ট নিদর্শন। যেহেতু সমস্যার পেছনে শয়তানের ইন্ধন ও বাসনা রয়েছে, সেহেতু এর সমাধানও ইসলাম দিয়েছে এবং তা খুবই স্পষ্ট ও যথার্থ। আল্লাহ আমাদের ইসলামী জ্ঞান দান করুন, আমাদের সামনে হালাল-হারাম স্পষ্ট করুন, ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করুন এবং আমাদের সঠিক পথগামী করুন।
লেখক : প্রাবন্ধিক


আরো সংবাদ



premium cement