২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তাকওয়া অর্জন রোজার মূল উদ্দেশ্য

-


মহান রাব্বুল আলামিন তার পবিত্রগ্রন্থ আল-কুরআনে এরশাদ করেছেনÑ ‘ও মানুষেরা তোমরা যারা ঈমান এনেছ, রোজা অর্থাৎ রমজান মাসের রোজা তোমাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে, যেমনটা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির লোকদের ওপর; যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার বা মোত্তাকি হতে পার’।
‘আস-সউম’ শব্দের অর্থ হলোÑ রোজা বা একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিরত থাকা। এটা হলো সাধারণ অর্থ। বাহ্যিক অর্থ এবং এই বাহ্যিক শব্দের মধ্যে তাকওয়া খুঁজে পাওয়া যাবে না, শুধু রোজা রাখা হবে, ুদার্ত ও তৃষ্ণার্ত থাকা হবে। কিন্তু এই শব্দের আরেকটি অর্থ আছে, যাকে বলে অভ্যন্তরীণ বা ভেতরের অর্থ অথবা বলা যায় কুরআনিক অর্থ। যার মানে হলোÑ আল্লাহর জন্য রমজানের ফরজ রোজার নিয়তে সেহরি খাবেন। তারপর, ফজরের আজান থেকে নিয়ে মাগরিবের আজান পযর্š— কোনো প্রকার খাদ্য গ্রহণ না করা, স্ত্রীর কাছে না যাওয়া, খারাপ কথা না বলার নাম হলো রোজা।
সেই তাকওয়া অর্জন করার জন্য রোজা রাখার নিয়ম আল্লাহর রাসূল সা: এভাবে বলেছেন, যে রোজা আমাদের তাকওয়া দিবে, সংশোধন করবে, পরহেজগার বানাবে ও সম্মানের সাথে পৃথক দরজা দিয়ে জান্নাতে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে; সেই ধরনের রোজা রাখতে হলে প্রথমে আমাদের রোজা রাখার নিয়তে সেহরির সময়ে সেহরি খেতে হবে। আল্লাহর রাসূল সা: বলেছেনÑ ‘তোমরা সেহরি খাও, কেননা সেহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে’(বুখারি-মুসলিম)। সেহরি না খেলে আপনার রোজা হয়ে যাবে কিন্তু সেহরির সওয়াব থেকে আপনি বঞ্চিত হবেন। সুতরাং, সেহরির সময় সেহরি খেয়ে আপনি নিয়ত করেন।
ফজর পড়েন এবং জামায়াতে পড়তে চেষ্টা করেন। তারপর হাতে বেশি সময় থাকলে একটু ঘুমুতে যান। আর কম সময় থাকলে কিছু সময় কুরআন তিলাওয়াত করেন।
বাজে ও মিথ্যা কথা, ধোঁকাবাজী এবং এই ধরনের যাবতীয় গুনাহের কাজ থেকে আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে। আপনার চোখ, হাত পাসহ আপনার শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিন্তু রোজা রেখেছে, সেটা আপনার মাথায় থাকতে হবে। তাই আপনি অফিস আদালতে এমন কোনো কাজ করতে পারবেন না, যা হালাল নয় বা যা অন্যের তি করে। ইসলামি শরিয়তে রোজা রাখা মানে সমস্ত শরীরের রোজা রাখা।
ইফতারির আগমুহূর্তে দোয়া কবুল হয়। এভাবে যখন আপনি-আমি পূর্ণ একমাস রোজার হক আদায় করে রোজা রাখব, তখন দেখবেন ইন’শা আল্লাহ আমাদের মধ্যে পরিবর্তন আসবে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা আগামী ১১ মাস তাকওয়ার সাথে জীবনযাপন করতে পারব। ইসলামের এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত রমজান মাসের রোজাগুলো যাতে সঠিকভাবে রোজার হক আদায় করে পালন করা যায়, সেজন্য আল্লাহর রাসূল সা: একটি হাদিসের মাধ্যমে আমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
হুজুর সা: বলেছেনÑ ‘যখন তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো দিন রোজা রাখে, তখন রোজা অবস্থায় সে যেন কখনো খারাপ ভাষা, চিৎকার, গালিগালাজ, অপ্রয়োজনীয় তর্কে জড়িয়ে না পড়ে। কেউ যদি তার সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চায় বা তর্কে লিপ্ত করতে চায় তাহলে সে যেন বলে, ভাই আমাকে মা করবেন, আমি রোজা রেখেছি। (বুখারি -মুসলিম)
রোজার উদ্দেশ্য হলোÑ তাকওয়া অর্জন। যেটার জন্য আল্লাহ রোজাকে ফরজ করেছেন। তাই রমজান মাসের সব আমলÑ সেহরি, ইফতার, তারাবিহ, খতমে কুরআন, তাহাজ্জুদ, সদাকাতুল ফিতর ও ঈদের আনন্দ এ সব ইবাদাতের আগে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে, এগুলো করার পেছনে উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা।
সুতরাং, রোজা অবস্থায় আমাদের কোনো অহেতুক কথা বা ঝগড়ায় জড়ানো মোটেই ঠিক নয়। এভাবে আমরা রোজা রাখার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন করতে পারব ইন’শা আল্লাহ।
লেখক : প্রবাসী, ভার্জিনিয়া, ইউএসএ


আরো সংবাদ



premium cement