০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ঠোঁট ফুলে যাওয়া বা লিপ ইডিমা

-

ঠোঁট ফুলে যাওয়া বলতে বুঝায় ঠোঁটের অভ্যন্তরে ঠোঁটের কোষ বা কলায় ফ্লুইড বা জলীয়পদার্থ জমে ঠোঁট আকৃতিতে বড় হওয়া। ঠোঁট ফুলে গেলে ঠোঁটের স¦াভাবিক পুরুত্ব বৃদ্বি পায়। ঠোঁট ফুলে গেলে কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।
কেন হয়? ১. সংক্রমণ- যেমন : কোল্ড সোর বা জ্বরঠোসা। ২. প্রদাহ। ৩. হারপিস জিনজাইভোস্টোমাইটিস। ৪. অ্যালার্জিজনিত কারণে ৫. আঘাতজনিত কারণ ৬. পোকামাকড়ের কামড়ে ৭. ক্যান্সার ৮. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ৯. সূর্যের আলোর প্রতিক্রিয়া বা সান বার্ন (কর্মক্ষেত্রে দেখা যায়) ১০. অ্যানাফাইলেকটিক রিঅ্যাকশন। এ ক্ষেত্রে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ১১. ভাইরাসজনিত কারণে ১২. অনেক সময় কোনো প্রসাধনসামগ্রী রাতের বেলায় প্রয়োগ করলে দেখা যায় সকাল বেলা ঠোঁট ফুলে গেছে বিশেষ করে নিচের ঠোঁট। এ ক্ষেত্রে ওই প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহার চিরতরে বন্ধ করে দিতে হবে এবং ঠোঁট ফুলে যাওয়ার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
উপরিউক্ত কারণগুলো ছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ যে সব কারণে ঠোঁট ফুলে যেতে পারে তা হলো :
* এক্রোমেগলি * সেলুলাইটিস * ক্রনস্ ডিজিজ * একজিমা * কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিস * এনজিও ইডিমা * হাইপোথায়ডিজম * কাওয়াসাকি ডিজিজ * স্টিফেন জনসনস্ সিনড্রোম * গ্লুকাগোনামা।
ঠোঁট ফুলে গেলে করণীয় : গরম অথবা ঠাণ্ডা প্যাক প্রয়োগ : একখণ্ড জীবাণুমুক্ত কাপড় বা গজে আইস কিউব বা বরফের টুকরা মুড়িয়ে ফুলা ঠোঁটের ওপর কিছুক্ষণ ধরে রাখতে হবে। কোল্ড প্যাক ছাড়া গরম প্যাক ও প্রয়োগ করা যেতে পারে। গরম প্যাক ফুলা জায়গায় রক্ত জমা হওয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এবং এভাবে ফুলা কমিয়ে দেয়। উপরে বর্ণিত গরম ও ঠাণ্ডা প্যাক উপকারী শুধু যখন কোনো আঘাতের কারণে ঠোঁট ফুলে যায়।
চা পাতার ব্যাগ : ফুলা ঠোঁটে চা পাতার ব্যাগের প্রয়োগ আরেক কার্যকর উপশম পদ্ধতি। একটি টি ব্যাগ বা চা পাতার ব্যাগ কয়েক মিনিট গরম পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। তারপর চা পাতার ব্যাগকে বের করে ঠাণ্ডা করতে হবে। ঠাণ্ডা হওয়ার পর চা পাতার ব্যাগ ফুলা ঠোঁটের ওপর কয়েক মিনিট ধরে রাখতে হবে। এ পদ্ধতি ঠোঁট ফোলা কমতে সাহায্য করে থাকে।
মেডিকেটেড মলম ঠোঁটের ওপর প্রয়োগ করা যেতে পারে শুষ্কাবস্থা অবসানের জন্য। কারণ ঠোঁট ফুলে গেলে স্থানটি শুষ্ক হয়ে যায়। হারপিস ভাইরাসজনিত কারণে ঠোঁট ফুলে গেলে অবশ্যই অ্যাসাইক্লোভির গোত্রভুক্ত ওষুধ সঠিক নিয়মে নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করতে হবে। অ্যালার্জিজনিত কারণে ঠোঁট ফুলে গেলে এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। প্রয়োজন হলে কর্টিকোস্টেরয়েড প্রয়োগ করা যেতে পারে একটি নির্দিষ্ট মাত্রায়। কোনো কোনো সময় স্থানীয়ভাবে প্রয়োগকারী মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। জীবাণুযুক্ত কোনো ফুলা থাকলে এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। রোগীরা বাসায় বসে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। তবে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে পাঁচ দিনের মধ্যে যদি ঠোঁট ভালো না হয় তবে সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন। তাই সবচেয়ে ভালো হয় ঠোঁট ফুলে গেলে কালবিলম্ব দেরি না করে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ঠোঁট শরীরের সংবেদনশীল অংশ যা মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ঠোঁটে কোনো সোয়েট গ্ল্যান্ড থাকে না। সোয়েট গ্ল্যান্ড ত্বককে তৈলাক্ত রাখে এবং পুষ্টি জোগায়। ঠোঁটে এই গ্ল্যান্ড থাকে না বলে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যায়। ঠোঁটের রোগ ছাড়াও ঠোঁটের ও মুখের স্বাভাবিক যতœ নিতে হবে। বিজ্ঞাপন নয় বরং একজন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঠোঁট ও মুখের পরিচর্যা করতে হবে।
লেখক : মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
মোবাইল : ০১৮১৭-৫২১৮৯৭
ই-মেইল : ফৎ.ভধৎঁয়ঁ@মসধরষ.পড়স

 


আরো সংবাদ



premium cement