২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘স্ট্র’ ব্যবহার করেন! জানেন কী ক্ষতি হতে পারে?

‘স্ট্র’ ব্যবহার করেন! জানেন কী ক্ষতি হতে পারে? - ছবি : সংগৃহীত

কোমল পানীয় থেকে শুরু করে নানা রকম জ্যুস খেতে অনেকেই প্লাস্টিকের স্ট্র ব্যবহার করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য সচেতন মানুষকে এবার স্ট্র-এর ব্যবহার ছাড়তে হবে। কারণ এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকর। প্লাস্টিকের এই ধরনের স্ট্র নানারকম ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানে ভর্তি যা শরীরে নানা রকম রোগব্যাধি সৃষ্টি করে। জেনে নিন স্ট্র’র ক্ষতিকর কিছু দিক সম্পর্কে :

স্ট্র মানে প্লাস্টিকের উপাদান খাওয়া : স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা জানান, স্ট্র দিয়ে কোনো কিছু পান করা সহজ বলে অনেকেরই এটা পছন্দ। গ্লাসে ঠান্ডা বা গরম কোনো পানীয় নিয়ে স্ট্র ব্যবহার করে খাওয়ার অভ্যেস করেন অনেকেই। কিন্তু এইসব স্ট্র পলিইথিলিন যৌগ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এতে যে ক্ষতিকর সব রাসায়নিক থাকে, তা শরীরে ঢুকে নানা রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে বাঁশ বা কাগজের তৈরি স্ট্র ব্যবহার করলে ক্ষতি নেই।

মুখে বলিরেখা তৈরি করে : স্ট্র-এর মাধ্যমে কোনো কিছু খেলে মুখের ভেতরের অংশের নড়াচড়ায় কোলাজেন দ্রুত ও সহজে ভাঙে। কোলাজেন হচ্ছে ফাইবার প্রোটিন, যা মানুষের শরীরের এক-তৃতীয়াংশ প্রোটিন তৈরি করে। এতে মুখে অবাঞ্ছিত দাগ ও বলিরেখা তৈরি করে।

স্থূলতা সৃষ্টি করে : বেশিরভাগ স্ট্র-এর ভেতর পেট্রোলিয়াম ভিত্তিক প্লাস্টিক পলিব্রপিলিন ও বিসফেনল থাকে, যা উষ্ণ কোনো তরলের সঙ্গে সহজে মিশে যায়। এ থেকে মুটিয়ে যাওয়া এমনকি ক্যান্সারের মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

গ্যাসের সমস্যা তৈরি করে : স্ট্র দিয়ে কিছু খেলে বেশি পরিমাণে বাতাস গিলে ফেলার ঘটনা ঘটে। এতে পেটে গ্যাস জমে খাবার হজমের সমস্যা তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞরা তাই স্ট্র’র পরিবর্তে সরাসরি গ্লাস থেকে পান করার পরামর্শ দিয়েছেন।
দাঁত ক্ষয় করে : দীর্ঘদিন ধরে স্ট্র ব্যবহার করলে দাঁতের ক্ষয় বেশি হয়। কারণ, স্ট্র দিয়ে পান করলে চিনি মুখের যেকোনো একটি জায়গায় গিয়ে পড়তে থাকে। দীর্ঘদিন এভাবে চললে দাঁতের ক্যাভিটি বা ক্ষয় দেখা দেয়।

আরো পড়ুন :

ছোটদেরও স্ট্রোক হয়
ডা: মো: ফজলুল কবির পাভেল

অনেকের ধারণা স্ট্রোক শুধু বয়স্কদের হয়। এ ধারণা ভুল। স্ট্রোক বয়স্কদের বেশি হয়। তবে বর্তমানে ছোটদেরও অনেক স্ট্রোক হচ্ছে। প্রতি বছর স্ট্রোকের কারণে অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। অনেকে অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারায়। অথচ দেখা গেছে স্ট্রোক অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যায়। স্ট্রোক হয়ে গেলে সে ব্যক্তির এবং পরিবারের অবর্ণনীয় কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। তাই প্রতিরোধের দিকে সবার নজর দেয়া উচিত। ছোট বয়সে স্ট্রোক হলে সমস্যা বেশি। রোগীর যে সময় কর্মক্ষম থাকার সময় সেই সময় কর্মক্ষমতা কমে যায় এবং সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়।

মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে গিয়ে বা হঠাৎ রক্ত বের হয়ে কোনো এলাকা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার নাম হলো স্ট্রোক। ফলে শরীরের এক দিক বা কোনো অংশ অবশ হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় কথা জড়িয়ে যেতে পারে বা একেবারে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

স্ট্রোক হলে খাবার গ্রহণে অসুবিধা হয় এবং অনেক সময় প্রস্রাব ও পায়খানার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। তবে সবার একই লক্ষণ থাকবে তা নয়। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক লক্ষণ থাকে। ব্রেনের কোন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে সমস্যা দেখা দেয়।

স্ট্রোকের কারণ :
অল্প বয়সে স্ট্রোকের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। বয়স্কদের স্ট্রোকের কারণ আর অল্প বয়সে স্ট্রোকের কারণের মধ্যে পার্থক্য আছে। অল্প বয়সে যেসব কারণে স্ট্রোক হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে-

১. বিভিন্ন ধরনের হৃদরোগ। অল্প বয়সে স্ট্রোকের ২৫ শতাংশের কারণ নানা ধরনের হৃদরোগ।
২. জন্মগত ত্রুটির জন্য মস্তিষ্কের রক্তনালী হঠাৎ ছিঁড়ে যায়। এই ধরনের ঘটনা অল্প বয়সেই সাধারণত বেশি ঘটে।
৩. বিভিন্ন ধরনের ভাস্কুলাইটিস। কম বয়সে এসব সমস্যা বেশি হয়।
৪. জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি স্ট্রোকের অন্যতম একটি কারণ। ৪৫ বছর পর মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। তখন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি আর ব্যবহার করতে হয় না। অল্প বয়সে স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি।
৫. যারা নেশাজাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করেন, তাদেরও স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক। অল্প বয়সীদের মধ্যে নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণের প্রবণতা বেশি।
৬. কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস বর্তমানে এক বিরাট সমস্যা। আর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ।
৭. বর্তমানে ফাস্টফুড গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। বাড়ছে রক্তে চর্বি। রক্তে চর্বির আধিক্যও অল্প বয়সে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
৮. বর্তমানে কায়িক পরিশ্রমে প্রতি প্রায় সবারই অনীহা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে স্থূলতা। গবেষণায় দেখা গেছে স্থূলদের Stroke বেশি হচ্ছে।
৯. মানসিক চাপ, মাইগ্রেন অল্প বয়সীদের বেশি হয়। এসব স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

অল্প বয়সে স্ট্রোক প্রতিরোধের জন্য সচেতন হতে হবে। সাবধান হয়ে চললে অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডায়াবেটিস, স্ট্রোকসহ নানা জটিল রোগ সৃষ্টি করে। কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস বর্তমানে এক বিরাট সমস্যা। আর অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। আবার নিয়ম মেনে চললে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে স্ট্রোকসহ নানা রোগের ঝুঁকিও অনেক কমে আসে। পরিশ্রম না করলে বা বেশি তেল-চর্বি খেলে রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ে। ফলে ওজন বাড়ে। এর ফলে Stroke হতে পারে।

নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক আসে। বর্তমানে তরুণদের ব্যায়ামের প্রতি আগ্রহ অনেক কম। তরুণদের এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শাক সবজি প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এর ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, চর্বি নিয়ন্ত্রণে থাকে, ফলে স্ট্রোকও কম হবে। খাবারে কাঁচা লবণ কম খেতে হবে। লবণ কম খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে আসে।

হার্টের সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে। ওষুধ গ্রহণ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া বন্ধ করা যাবে না। তাই খাবার গ্রহণে নিয়মানুবর্তিতা ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলে এবং যেসব কারণে Stroke হয় সে কারণগুলো এড়িয়ে চললেই স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব।

লেখক : চিকিৎসক, মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল


আরো সংবাদ



premium cement