২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাপে কাটলে কী করবেন

-

সাপের কামড় জীবন বিপন্নকারী, একটি জরুরি প্রসঙ্গ। আমাদের দেশে প্রতি বছর অনেক লোক এতে মারা যায়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশগুলোর চাষিরা, শিকারিরা এবং শস্য কাটা ও সংগ্রহে নিযুক্ত লোকজন এর প্রধান শিকার। সারা বিশ্বে প্রতি বছর তিন থেকে পাঁচ মিলিয়ন লোক সাপের কামড়ে আক্রান্ত হয়। এতে মৃত্যুর পরিমাণ প্রায় ৫০ হাজার এবং অ্যাম্পুটেশনের শিকার হয় আনুমানিক ৪ লাখ।
সাপের কামড়ে শতকরা ৪০ জন রোগীর দেহে তেমন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না, বিষক্রিয়ার লক্ষণও পরিলক্ষিত হয় না। তবে যেহেতু আগে থেকে নিশ্চিত বলা যায় না কোন কামড়টি জীবনকে বিপন্ন করতে পারেÑ তাই সাপের কামড়ের সব রোগীকেই সমান গুরুত্ব দিয়ে জরুরি চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
উপসর্গ : সাপে কাটার রোগী এলে মূল যে তিনটি প্রশ্ন করতে হবেÑ
ষ দেহের কোথায় কামড়টা?
ষ কতকক্ষণ আগে?
ষ কী ধরনের সাপ?
কামড়ের ফলে কতটুকু বিষ দেহে অনুবিষ্ট হয়েছে তা নির্ভর করবে সাপ কত আগে কেটেছিল এবং কামড়ানোর সময় কত ক্ষেপে ছিল। রোগীর যেসব লক্ষণ দেখা দেবেÑ
ষ মাথাব্যথা, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, পিপাসা হওয়া, চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা, মাথা ঘোরা, লাল বেশি হওয়া, হাত-পা অবশ হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া, ঘাম বের হওয়া।
ষ বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া
ষ পায়ে হলে ফুলে যাওয়া, মাংসপেশিতে ব্যথা হওয়া, ফোস্কা হওয়া, রক্ত জমে যাওয়া
ষ হাতে বা শরীরের অন্যান্য অংশে রক্তের জমাট বাঁধার অস্বাভাবিকতা ও ত্বকের নিচে রক্তপাতের চিহ্ন পাওয়া যাবে।
ষ ক্ষতস্থানে দু’টি দাঁতের দাগ স্পষ্ট দেখা গেলে বুঝতে হবে এটা বিষধর সাপের কাপড়।
নির্ণয়
ষ আজকাল সাপের বিষ ডিটেকশন কীট পাওয়া যায়। কামড়ের স্থান থেকে সোয়াব নিয়ে এই কীটের সাহায্যে ভেনম নির্ণয় করা যায়।
ষ রোগীর ২-৩ এমএল রক্ত নিয়ে (ভেনাস ব্লাড) ২০ মিনিট কোথাও শান্তভাবে রেখে দিয়ে সে পাত্রটি আলতোভাবে একবার নেড়ে স্বাভাবিক রক্তের সাথে তুলনা করলে দেখা যাবেÑ যদি জমাট না বাঁধে বুঝতে হবে বিষক্রিয়ার প্রভাবে এমনটি হয়েছে। এ পরীক্ষাটি রিমোট এরিয়ার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
ষ এছাড়া রক্ত পরীক্ষা, ইফরিয়া, ইলেকট্রোলাইটস, লিভার ফাংশন টেস্ট, ক্রিয়াটিনিন কাইনেস ট্রপোনিন করে সহায়তা নেয়া যেতে পারে।
ষ ইসিজি করা যেতে পারে, যাতে এরিদমিয়া, এ-ভি ব্লকসহ অনেক পরিবর্তন পাওয়া যেতে পারে।
ব্যবস্থাপনা
ষ সাপে কামড়ানোর সাথে সাথে সঠিক প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োজন। অবিলম্বে ডাক্তারি চিসিৎসা করে রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব।
ষ কারো হাতে, পায়ে অথবা অন্য কোনো অঙ্গে সাপে কামড়ালে সম্ভব হলে দ্রুত ক্ষত স্থানটির ওপরে শক্ত করে দড়ি বা কাপড় দিয়ে বাঁধতে হবে। এতে বিষ রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারবে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে যথাযথ প্রয়োগে সমর্থ না হওয়ায় অনেক সময় এ প্রক্রিয়া আশানুরূপ সুফল বয়ে আনে না।
ষ এবার ক্ষতস্থানটা ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। মরিচামুক্ত ছুরি, ব্লেড নিয়ে ভালো করে জীবাণুমুক্ত করে নিয়ে ক্ষতস্থান সামান্য কেটে টিপে রক্ত বের করে ফেলতে হবেÑ এত রক্তের সাথে বিষ বেরিয়ে আসবে।
ষ মুখে রক্ত চুষে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা উচিত নয়।
ষ এরপর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। ওঁঝা বা অন্য কোনো জাদুটোনা বা ঝাড়-ফুঁকের সাহায্যে সাপে কামড়ানোর বিষ নামানোর প্রচেষ্টা ভুল চিকিৎসা পদ্ধতি এবং কোনোমতেই তা করা উচিত নয়।
ষ এ রোগীর দ্রুত অনেকগুলো মারাত্মক অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। তাই হাসপাতালে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে।
ষ রক্তচাপ, রক্তের অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা (বিশেষ করে ঈড়ধমঁষধঃরড়হ ফবভববঃ), কিডনি এবং হার্টের যেকোনো অস্বাভাবিকতার দিকে নজর দিতে হবে।
ষ উপসর্গ অনুযায়ী অনেক চিকিৎসা করতে হবে। তবে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন দেয়া উচিত নয়, কারণ এতে রক্তক্ষরণ বাড়তে পারে।
ষ রক্ত দিতে হতে পারেÑ দিতে হতে পারে প্রচুর তাজা, জমাট বাঁধা প্লাজমা বা রক্তরস।
ষ প্রয়োজনীয় সব সতর্কতা গ্রহণপূর্বক যথাযথ অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করে সর্বোচ্চ সফলতা পাওয়া যায়।
লেখক : চিফ মেডিক্যাল অফিসার, ইস্টার্ন রিফাইনারি, চট্টগ্রাম।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট খালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায় আরো ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট তাপপ্রবাহ মে পর্যন্ত গড়াবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকার ভূমিকা চায় যুক্তরাষ্ট্র বিদ্যুৎ গ্যাসের ছাড়পত্র ছাড়া নতুন শিল্পে ঋণ বিতরণ করা যাবে না

সকল