২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যেখানে গুরুত্বপূর্ণ যেকোনো ফুটবল ম্যাচ পাতানো সম্ভব

ফুটবল
বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি গ্রাস করেছে আলজেরিয়ার ফুটবলকে। - ছবি : বিবিসি

আলজেরিয়ায় ৬৮,০০০ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ পাতানো সম্ভব- এমনই উঠে আসে সাবেক কজন ফুটবল সংশ্লিষ্টের কথায়।

এই হুইসেল ব্লোয়ার যারা এ বিষয়ে বিবিসির কাছে তথ্য ফাঁস করেছেন এবং তার বক্তব্য থেকে পাওয়া তথ্যে উঠে আসে, কিভাবে আলজেরিয়ার সব ধরনের ফুটবলে টাকার লেনদেন কতটা প্রভাব ফেলছে।

তিনবছর ধরে বিবিসি অ্যারাবিক এর সাংবাদিকরা রেফারি, খেলোয়াড়, ক্লাব চেয়ারম্যান এবং দুজন ম্যাচ ফিক্সারের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছে কিভাবে তা ঘটে চলেছে।

আলজেরিয়ার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট খেয়েরেদ্দিন যেটচি বিবিসিকে বলেছেন, বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটির কাজের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ফুটবলকে কলুসমুক্ত করা।

২০১৮ সালের ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ কোয়ালিফায়ার থেকে ছিটকে পড়ে আলজেরিয়া। এরপর এ নিয়ে কথা বলেন দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের কাছে মিথ্যে বলা কিছু নেই। আমাদের জাতীয় দল অসুস্থ। আলজেরিয়ার ফুটবল অসুস্থ।’

যুব ফুটবলের উদ্যোক্তা একজন বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে একই ঘটনা ঘটতো। সে যথেষ্ট চেষ্টা করতো। কিন্তু শেষপর্যন্ত সে পারতো না। মনে হতো দল হয়তো জিতবে। কিন্তু রেফারি সবসময় আমাদের বিপক্ষ বলে মনে হতো।’

আলজেরিয়া ২০১৮ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ার পর স্থানীয় গণমাধ্যম এবং ভক্ত সমর্থকরা বলতে থাকে দেশের ফুটবলের প্রভাব পড়েছে জাতীয় দলের পারফম্যান্সেও।

বাছাই পর্বে পেরোতে না পারায় স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ায় হতাশা ও সমালোচনা হয় দেশের ভেতরে।

অনেকেই মন্তব্য করেন, ‘জাতীয় দলের খেলোয়াড় কেবল অর্থের কথাই চিন্তা করে।’

কেউ কেউ বলেন, ‘এটা ভালো হয়েছে তারা যে হেরেছে, এতে লোকজন বুঝতে পারবে আমাদের ফুটবলের অবস্থা কতটা ভয়াবহ।’

টেলিভিশন টকশোতেও এই বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। সেখানে রেফারিদের ব্যাপক প্রতিপত্তির বিষয় নিয়েও আলাপ চলে।

‘একজন রেফারি যিনি একটি হাসপাতালে নার্স হিসেবে চাকরি করেন। প্রকাণ্ড ভিলা, বিলাসবহুল গাড়ি এবং বিদেশে সম্পত্তি কিভাবে মালিক হতে সে?’

এই প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি আলোচকরা আরও বলেন যে, সাধারণ মানুষও এইসব ষড়যন্ত্র বিষয়ে অবগত। এসব কারণে তারা খেলা ভণ্ডুল করে দেয়।

বিবিসির আরবি বিভাগের অনুসন্ধানে আলজেরিয়ার ফুটবলের শীর্ষ দুই বিভাগেই দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে। দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের সাবেক কর্মকর্তারা বলেছেন, এসব ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষ একেবারেই উদাসীন। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে।

একজন খেলোয়াড় বলছেন, ‘আমি কিছু লোককে চিনি যারা খেলা অ্যারেঞ্জ করে এবং টাকা পয়সার লেনদেন করে । আমি খেলার আগে প্রেসিডেন্টকে জানিয়েছিলাম। আমি এরপর খেলি এবং নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা চালাই। যখন অন্যান্য খেলোয়াড়রা দুর্নীতিগ্রস্ত এটা খুবই দুঃখজনক।’

এমন অনেক ম্যাচ আছে যেখানে রেফারিদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে শ্যাচের ভবিষ্যৎ ভিন্ন দিকে চলে যেতে দেখা গেছে।

ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত ছিল এমন লোকজন জানিয়েছেন কিভাবে বিষয়টি ঘটানো হয়েছে দিনের পর দিন। এইসব ম্যাচ ফিক্সাররা পরিচিত ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে তারা বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

একজন ম্যাচ ফিক্সার বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হয় কর্মকাণ্ড। রাজনীতিবিদরা তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে চান। আর সুপার ফ্যানরা তাদের দলকে জিততে দেখতে চান। দুই পক্ষের হাতেই আছে অর্থকড়ি। সবক্ষেত্রেই ক্ষমতাশালী মানুষেরা ফলাফল পাল্টে দিতে চান।’

‘আমি একজন মধ্যস্থতাকারী এবং বিভিন্ন দলের সদস্য এবং রেফারিদের সাথে যোগাযোগ আছে আমার। তাই এই কাজের জন্য তাদের আমাদের দরকার। সব দলকে জেতাতে পারবেন না আপনি। এখানে যেকোনো একটা দলকে হারতেই হবে।’

যারা আগ্রহী হয় তাদের মধ্যে এরপর যোগাযোগ করিয়ে দেন মধ্যস্থতাকারী।

‘অন্য মধ্যস্থতাকারীরা সরাসরি খেলোয়াড়দের সাথে যোগাযোগ রাখে। আমি সেটা পছন্দ করি না।’

একজন গোলকিপার জানান, ‘একটি দলের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে একজন মধ্যস্থতাকারী আমার সাথে যোগাযোগ করে যে দরটির বিপক্ষে পরের ম্যাচে আমার খেলার কথা। আমি সাথে সাথে গিয়ে আমার দলের প্রেসিডেন্টকে বিষয়টি জানাই। তিনি পুরো বিষয়টি প্রমাণ রাখার জন্য আমাকে রেকর্ড করতে বলেন। গোলরক্ষক হিসেবে খেলাতে আমার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। আমি ভেবেছিলাম আমি বিশেষ আলাদা কিছু করছি, প্রেসিডেন্টকে সহায়তা করছি। কিন্তু আমার প্রেসিডেন্ট নীরব থাকলেন। তিনি আমাকে সমর্থন করলেন না। সমর্থকরা দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ করায় ক্ষুব্ধ হলো। কিন্তু আমি কেবল ফুটবলই খেলতে চেয়েছিলাম।কিন্তু সেটা কেড়ে নেয়া হয়েছে।’

একজন ম্যাচ ফিক্সার বলেন, কিভাবে তারা দেখা-সাক্ষাৎ করতেন।

‘আমরা গোপনে শহরের থেকে দূরে কোথাও ক্যাফেতে দেখা করতাম। টাকাপয়সার বিষয়ে আলাপ আলোচনায় মধ্যস্থতা করতাম। জয়ের জন্য ৮মিলিয়ন দিনার বা ৬৮ লাখ ডলার পর্যন্ত অর্থ দেয়া হতো। ফার্স্ট ডিভিশনে কেবল মাত্র একটি পেনাল্টি কিকের জন্য ১৭ হাজার ডলারও দেয়া হতো। সেকেন্ড ডিভিশন এবং এমনকি যুব ফুটবল লেভেলেও এই টাকার খেলা চলতো।’

একজন রেফারি বয়ানে জানা যায়, তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেও কিভাবে জড়িয়ে গেছেন এই জালে।

‘বহু বছর আমি চেষ্টা করেছি এর থেকে দূরে সরে থাকতে। কিন্তু আমার ক্যারিয়ারের কোনো গতি হচ্ছিল না। পরে আমি দেখলাম আমার অবস্থানকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে দুর্নীতির ওপর ভর করতে হবে।’

আর ফুটবল ক্লাব চেয়ারম্যান বলেন, ‘হার মেনে নেয়া সম্ভব না। কারণ এর সাথে পার্লামেন্টে অবস্থান ধরে রাখার বিষয় জড়িত। এটা আমার প্রচারণার অংশ।’

আর এভাবেই বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি গ্রাস করেছে আলজেরিয়ার ফুটবলকে।

তবে ফিফার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিপক্ষে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছেন তারা।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল