২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

টাকার বস্তাসহ যুবলীগ নেতা জি কে শামীম গ্রেফতার ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর জব্দ ; সাত দেহরক্ষী আটক

অস্ত্র মাদক ও বিপুল নগদ টাকাসহ গ্রেফতার যুবলীগ নেতা জি কে শামীম :নয়া দিগন্ত -

রাজধানীর নিকেতন থেকে এবার বিপুল অর্থসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। আটক করা হয়েছে তার সাত দেহরক্ষীকেও। এ সময় তার জি কে বিল্ডার্সের অফিসে অভিযান চালিয়ে এক কোটি ৮০ লাখ টাকা ও ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্র জব্দ করে র্যাব। এ ছাড়াও তার জিম্মা থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র, দেহরক্ষীদের সাতটি শটগান-গুলি এবং কয়েক বোতল বিদেশী মদ জব্দ করা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় জি কে বিল্ডার্সের অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১ এর কার্যালয় নিয়ে যাওয়া হয়।
র্যাবের দাবি, সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে যুবলীগ নেতা জি কে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থ ও অস্ত্র রাখার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও তিনি চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে জড়িত।
গতকাল বেলা ১১টায় নিকেতনের ৫ নম্বর রোডের ১৩ নম্বর বাসায় জি কে শামীমের জি কে বিল্ডার্সের অফিসে অভিযান শুরু করে র্যাব। পরে দুপুর ১২টায় একই রোডের ১৪৪ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। ওই বাড়িটি শামীমের নিজস্ব। অভিযানের সময় সেখানেই অবস্থান করছিলেন তিনি। তার সাথে তার সাত দেহরক্ষীকেও আটক করা হয়েছে।
কোম্পানির কর্মচারী দিদারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ভোরবেলা থেকেই র্যাবের লোকজন এখানে আসেন। শামীমের সাতজন নিরাপত্তারক্ষীর অস্ত্রের লাইসেন্স পরীক্ষা করা হয়।
দিদারুল ইসলাম দাবি করেন, দেহরক্ষীদের লাইসেন্স থাকার পরও তাদের এখান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। নিকেতন এলাকাতে জি কে শামীমের আরেকটি বাসা আছে। ওখান থেকে শামীমকে ডেকে নিয়ে আসা হয় ১৪৪ নম্বর বাসার এই অফিসে। তাকে নিয়ে এখানে অভিযান চালায় র্যাব।
গতকাল বিকেলে অভিযান পরিচালনার ফাঁকে অভিযান বিষয়ে ব্রিফ করেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম ও র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
র্যাব কর্মকর্তা সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সকাল থেকে আমরা শামীমের বাসা ও অফিসে অভিযান শুরু করি। এ সময় শামীম ও তার সাতজন দেহরক্ষীকে আটক করা হয়। অভিযানে শামীমের অফিস থেকে তার একটি অত্যাধুনিক অস্ত্র ও দেহরক্ষীদের সাতটি শর্টগান এবং এক কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআরের কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১৪০ কোটি টাকার এফডিআর তার মায়ের নামে এবং বাকি ২৫ কোটি টাকার এফডিআর শামীমের নামে রয়েছে। এ ছাড়াও বিদেশী মদের কয়েকটি বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ রয়েছে। আমরা সেসব তদন্ত করছি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে আটক করা হয়েছে।
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এফডিআরের টাকাগুলো বিভিন্ন অবৈধ সোর্স থেকে এসেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। সেসব অভিযোগ আমরা তদন্ত করে দেখব। এ বিষয়ে মানি লন্ডারিং আইনে তদন্ত কাজ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জি কে বিল্ডার্স কার্যালয় ব্রিফিংয়ে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, জি কে শামীমের অফিসে ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআরের ১৪০ কোটি টাকার এফডিআর তার মায়ের নামে। তবে তার মায়ের নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে, কিছু অবৈধ সোর্স থেকে তার এফডিআরের টাকাগুলো এসেছে। শামীমকে আদালতে এফডিআরগুলোর সোর্সের বৈধ প্রমাণ করতে হবে।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে গ্রেফতার করতে অভিযান পরিচালনা করে। কাউকে নাজেহাল করতে অভিযান চালানো হয় না। আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও এফডিআরের অবৈধ সোর্সের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলো তিনি মিথ্যা প্রমাণ করতে পারলে ছাড়া পাবেন।
জব্দ অস্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, জব্দ অস্ত্রগুলো বৈধ। তবে অভিযোগ রয়েছে এগুলো অবৈধ কাজে ব্যবহার হতো। এ জন্যই আমরা সেগুলো জব্দ করেছি। শামীমের রাজনৈতিক পরিচয় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না তা নির্ধারণ করবে তার দল ও নেতারা। এ দায়িত্ব আমাদের নয়।
এ দিকে গতকাল বিকেলে জি কে বিল্ডার্সের ওই বাড়িতে ঢুকে প্রথমেই দেখা যায় বিশাল গ্যারেজ। গ্যারেজের পাশে কাচ দিয়ে ঘেরা একটি অফিসকক্ষ, এখানে কর্মচারী ও কর্মকর্তারা বসেন। ওই ঘরের পাশে দু’টি দামি মোটরসাইকেল রাখা রয়েছে। কক্ষের পাশে দুই পাল্লার একটি কাঠের দরজা। দরজার দামি কাঠের চৌকাঠ চোখে পড়ার মতো। দরজা দিয়ে ঢুকতেই ভেতরে তিনতলায় যাওয়ার সিঁড়ি। মার্বেল টাইলসের সিঁড়িটিতে রয়েছে নকশা করা কাঠের রেলিং। চারতলা পর্যন্ত উঠে গেছে সিঁড়িটি। পুরো বাসাটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তৃতীয়তলায় শামীমের বসার কক্ষ। প্রায় ৩০ ফুট লম্বা ও ২০ চওড়া কক্ষটি। পুরো কক্ষটিতে দামি বাতি, কাঠ দিয়ে সাজানো। বড় আকারের দু’টি টিভি রয়েছে ঘরে। তিন সেট সোফা ও একটি বড় টেবিল রয়েছে। ওই টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে টাকার বান্ডিল, মদের বেশ কয়েকটি বোতল ও অস্ত্র। এগুলো ওই কক্ষ থেকে পাওয়া গেছে। ওই কক্ষের পাশেই আছে শামীমের ব্যক্তিগত কক্ষ। এই বাড়ির চতুর্থতলায় ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ওয়ার্কিং সেকশন এবং তৃতীয় তলায় অ্যাকাউন্টস সেকশন।
জানা গেছে, জি কে শামীম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সের মালিক। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহসভাপতিও তিনি। তার গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে। তিনি মৃত আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম মেজো। তিনি রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকার প্রভাবশালী ঠিকাদার। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজই জি কে শামীম নিয়ন্ত্রণ করেন। দেশের প্রথম সারির সব ঠিকাদার তার বাইরে ভয়ে কথা বলার সাহস পান না। এক অর্থে বলা যায়, গণপূর্ত ভবনের মালিকই তিনি। কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতা হয়ে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সারা বাংলাদেশের কনস্ট্রাকশনের যত বড় বড় কাজ হয় সব কাজ তার নির্বাচিত ঠিকাদরি প্রতিষ্ঠান ছাড়া কেউ করতে পারেন না। যদি কেউ জি কে শামীমকে না জানিয়ে দরপত্র ক্রয় করেন তবে তার পরিণাম হতো ভয়ঙ্কর। ওই প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রধারী তার ক্যাডার বাহিনী শুধু হামলাই করবে না, প্রয়োজনে তাদের মেরেও ফেলতে পারে।
জানা গেছে, সাতজন অস্ত্রধারী দেহরক্ষীর প্রটেকশনে চলেন জি কে শামীম। সবার হাতেই শর্টগান। গায়ে বিশেষ সিকিউরিটির পোশাক। তাদের একেক জনের উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। তারা মাঝখানে রেখে পাহারা দেন তাকে। জি কে শামীম যখন রাস্তায় বের হন তখন সাথে চলে তার নিরাপত্তা বলয়।
র্যাব সূত্র জানায়, যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার স্বীকারোক্তিতে বিভিন্ন অবৈধ কাজের সাথে জড়িতদের মধ্যে জি কে শামীমের নামও উঠে আসে। এ তথ্যের ভিত্তিতেই তাকে আটক করতে অভিযান চালানো হয়।
এর আগে রাজধানীতে অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গত বুধবার যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। ফকিরাপুলের ইয়ংমেন্স ক্লাবে তার পরিচালিত অবৈধ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালানো হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ পাকুন্দিয়ায় গানের আসরে মারামারি, কলেজছাত্র নিহত আবারো হার পাকিস্তানের, শেষ সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পাটকেলঘাটায় অগ্নিকাণ্ডে ৩ দোকান পুড়ে ছাই

সকল