২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মেগা প্রকল্প সড়কে বিড়ম্বনার অন্যতম কারণ?

-

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় একসাথে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। নগরীর বিশাল অংশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট খুঁড়ে ফেলা হয়েছে। সরু হয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক। কোনো ধরনের আগাম বার্তা অথবা বিকল্প পথ সম্পর্কে পরামর্শ না দিয়েই বিভিন্ন সড়ক বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। যার জন্য ভুগতে হচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
ঢাকার বনানী এলাকায় একটি বিপণিবিতানে কাজ করেন মিরপুরের বাসিন্দা সিনথিয়া খান। যানজটের কারণে দিনের একটা বড় অংশ তার বাসে বসেই কেটে যায় বলে জানান। তিনি বলেন, রাস্তা বন্ধ থাকে। সড়কের জায়গা কমে গেছে। গাড়িগুলো ঠিকমতো যেতে পারে না। যার কারণে যানজট লেগেই থাকে। যেমন অফিসে আসতে আমার সময় লাগার কথা বড়জোর আধাঘণ্টা। কিন্তু আমাকে অন্তত বাড়তি আরো দেড় ঘণ্টা হাতে নিয়ে বের হতে হয়। এমনও সময় আছে, বাসেই দুই ঘণ্টা হয়ে যায়। ইদানীং ঢাকার চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর কারণে অনেক এলাকায় প্রায়ই হাঁটার গতি আর গাড়ির গতি এক হয়ে যায়। চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে বিমানবন্দর থেকে আগারগাঁও, ফার্মগেট, শাহবাগ হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার লম্বা মেট্রোরেল। এ প্রকল্প নির্মাণে পুরো ঢাকা শহরে চলছে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি। দূরপাল্লার গাড়িগুলোকে যাতে ঢাকা শহরে ঢুকতে না হয়, সেজন্য তৈরি হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বা উড়াল সড়ক। তৈরি হচ্ছে নতুন ফ্লাইওভার।
যানবাহন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ এস এম সালেহউদ্দিন বলছেন, ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর কাজ প্রায় একই সাথে চলমান, যা এখন সড়কে বিড়ম্বনার অন্যতম কারণ বলে তিনি জানান। তার মতে এই কাজগুলোতে রয়েছে সমন্বয়হীনতা আর বিলম্বে শুরু করা। অন্য দিকে আবার মানুষের চলাচলের ডিমান্ড বেড়ে গেছে। সেই পরিমাণ জায়গা শহরে নেই। যখন সরকার দেখল যে আর উপায় নেই তখন সরকার মেগা স্ট্রাকচারগুলোতে হাত দিলো। সময়মতো এগুলোকে পর্যায়ক্রমে করা করা হয়নি বিধায় আজ আমাদের এই দুরবস্থা। তিনি আরো বলেন, এতগুলো প্রকল্প একসাথে শুরু করায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সরু হয়ে গেছে।
কিন্তু উল্টো গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে প্রতিদিন। তিনি বলছেন, ঢাকা শহরে আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। কিন্তু একইসাথে বিকল্প পথ সম্পর্কে পরামর্শ অথবা কোনো ধরনের আগাম সতর্কবার্তা না দিয়ে রাস্তাঘাট-অলিগলি বন্ধ করে দেয়ার ফলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে ঢাকা শহরের বহু বাসিন্দাকে। ঢাকার বেসরকারি একটি ক্লিনিকের নার্স রেবেকা রায় তার একটি অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন। তিনি বলেন, যেমন ধরুন আমাদের অফিসের গাড়ি হয়ত একটি রাস্তায় ঢুকল, তারপর দেখা গেলো রাস্তা কাটা। তখন অন্য অলিগলি ঘুরে তারপর মেইন রোডে আসতে হয়। রাস্তায় নেমে আমাদের প্রায়ই এরকম বোকা হতে হয়।
ঢাকা শহরকে যানজট মুক্ত রাখার পরিকল্পনা নিয়েই এসব প্রকল্পের শুরু। এর প্রতিটিই কারিগরি দিক থেকে খুবই জটিল। যা তাড়াহুড়ো করে শেষ করা খ্বু বিপজ্জনক। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ চলাকালীন একইসাথে নগরবাসীর দুর্ভোগ কি কিছুটা কমানো সম্ভব?
এ প্রসঙ্গে বুয়েটের নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আফসানা হক পশ্চিমা বিশ্বে মেট্রো রেলের সংস্কার কাজের উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন। তিনি বলেন, যেমন আমি ইউকের কথা জানি। (মেট্রো রেলে) কোন কনস্ট্রাকশনের বা সংস্কারের কারণে কাজ করতে হবে। তখন দেখা যায় যারা এই বাহনের ব্যবহারকারী তাদেরকে আগে থেকে নোটিফিকেশন পাঠায়। কাজ শুরুর সাত দিন বা ১০ দিন আগে যে স্টেশনগুলো আছে, সেখানে বড় বড় বিলবোর্ডের মাধ্যমে জানাতে চেষ্টা করে এখানে সার্ভিসটা কখন বন্ধ থাকবে এবং এ সময়টাতে বিকল্প ব্যবস্থা কী আছে সেটিও তারা বলে দিতে থাকে। অধ্যাপক আফসানা হক বলছেন, মোবাইল ফোনে মেসেজ পাঠিয়ে সরকারিভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নাগরিকদের জানানো হয়। সে পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। কোন অ্যাপের মাধ্যমেও সেটি করা যেতে পারে।
সরকারি মালিকানাধীন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড ২২ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক বলছেন, একবার শহর পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর এমন নির্মাণকাজ খুব চ্যালেঞ্জিং। হুট করে কোনো মেগা প্রজেক্টের কাজ করা হয় না। আমরা প্রধান সার্ভে করেছি ২০টা। তার একটা হল ট্রাফিক সার্ভে। তার ভিত্তিতে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট আমরা তৈরি করেছি। এবং কখন কি কাজ হবে সেটা আমরা স্টেক হোল্ডারদের। অর্থাৎ যারা এই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত চলাচল করে, এই রাস্তার পাশে যাদের অফিস আছে, দোকানপাট করে যারা ব্যবসায় পরিচালনা করে তাদের অনেক আগেই জানিয়ে দেয়া হয়। আমরা কোনো রাস্তা হুট করে বন্ধ করি না।
উন্নয়নের জন্য কিছুটা ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে ঢাকার বাসিন্দাদের।


আরো সংবাদ



premium cement
‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

সকল