২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিচারকের খাসকামরায় হত্যাকাণ্ড

আদালতে নিরাপত্তা জোরদার আসামির স্বীকারোক্তি

-

কুমিল্লার আদালতপাড়ায় পুলিশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আদালত অঙ্গনে প্রবেশের প্রধান ফটকে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোস্টে আদালত প্রবেশে বিচার সংশ্লিষ্টদের ব্যাগ, রিকশা, প্রাইভেটসহ অন্যান্য যানবাহন পুলিশকে তল্লাশি করতে দেখা গেছে। এদিকে হত্যার ঘটনায় রক্তের দাগ এবং আলামত সংগ্রহে সাময়িকভাবে ওই আদালতের কার্যক্রম সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
সোমবার বিচার চলাকালীন এজলাস অতিক্রম করে বিচারকের খাস কামরায় ঢুকে আসামিকে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মঙ্গলবার আদালতে আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। তবে আদালতে বিচার কার্যক্রম অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক ছিল।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম জানান, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালতের তৃতীয় তলায় অবস্থিত ওই আদালতে আসামি হত্যার ঘটনায় রক্তের দাগ এবং কিছু আলামত রয়েছে। যার কারণে ওই আদালতটি একই ভবনের নিচ তলায় সাময়িকভাবে সরিয়ে নিয়ে বিচারকাজ চলছে। এ ছাড়া মামলা হওয়ায় পুলিশের তদন্ত কাজও চলছে। তবে ওই ঘটনায় আইনজীবী ও বিচার সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক কেটে গেছে। পুলিশি নিরাপত্তা আদালতে জোরদার করা হয়েছে।
২০১৩ সালে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের কান্দি গ্রামে হাজী আবদুল করিম হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিদের সোমবার হাজিরার দিন ধার্য ছিল। আসামিরা আদালতে প্রবেশের সময় ৪ নং আসামি ফারুককে ছুরি নিয়ে তাড়া করে ৬ নং আসামি হাসান। এ সময় জীবন বাঁচাতে ফারুক বিচারকের খাস কামরায় প্রবেশ করেন। সেখানেই হাসান টেবিলের ওপর ফেলে ফারুককে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। গুরুতর আহত ফারুক কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
ঘাতকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি : কুমিল্লার আদালতে বিচারকের খাস কামরায় একটি হত্যা মামলার আসামির ছুরিকাঘাতে একই মামলার আরেক আসামি খুনের ঘটনায় সোমবার রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওই রাতেই ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে কুমিল্লা জেলা জজ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জালাল উদ্দিনের আদালতে আসামি ফারুকের ঘাতক হাসান হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছে। পরে তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়। মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক প্রদীপ মণ্ডল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক প্রদীপ মণ্ডল জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি হাসান ১৬১ ধারার জবানবন্দীতে ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। বিকেলে তাকে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জালাল উদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী প্রদানের জন্য নেয়া হয়। সেখানেও সে ফারুক হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়ার পর তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনার সময় ওই আদালতে উপস্থিত অ্যাডভোকেট শাহিদ বেগম বলেন, আমি একটি মাদক মামলার আইনজীবী হিসেবে ওই কোর্টে ছিলাম। তখন দেখতে পাই এক আসামি হাতে ছুরি নিয়ে আরেক আসামিকে ছুরি মারতে যাচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ি। আদালতে এমন ঘটনা ঘটলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়? অ্যাডভোকেট কাজী আক্তার হামিদ সোহেল বলেন, আদালতে শুধু বিচারিক কার্যক্রম করলেই চলবে না। আসামি ও বিচারপ্রার্থীদের আইন সম্পর্কে সচেতন করাসহ তাদের কাউন্সিলিং করতে হবে। এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে ভবিষ্যতে কেউ আর এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত করার সাহস পাবে না।
আদালতের পুলিশ পরিদর্শক সুব্রত ব্যানার্জি জানান, আদালতে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। দেহ তল্লাশি করে বিচারপ্রার্থী ও আসামিদের বিভিন্ন আদালতে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল