২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যাবজ্জীবন অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ডÑ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ শুনানি ‘যাবজ্জীবন সাজার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ জরুরি’

-

যাবজ্জীবন অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ডÑ এ সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের শুনানি আদালতের বন্ধু অ্যামিকাস কিউরিরা আপিল বিভাগে বলেছেন, যাবজ্জীবন সাজার ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা জরুরি। মানবিক বিচারেও আমৃত্যু কারাদণ্ডও গ্রহণযোগ্য নয়। যাবজ্জীবন অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড এ ধরনের ব্যাখ্যা দেয়া যাবে না। কারণ এতে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মুক্তি পাওয়ার কোনো আসা থাকে না। উপরন্তু সরকারের ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে খর্ব করা হয়। তাই যাবজ্জীবন অর্থ ৩০ বছর কারাদণ্ড রাখতে হবে।
যাবজ্জীবন অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ড Ñএ সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা আবেদনের শুনানিতে দু’জন আদালতের বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি) এ অভিমত দেন। গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রিভিউ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন অভিমত দেন। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর আসামির রিভিউ আবেদনের পক্ষে আংশিক শুনানি করেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। সাথে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।
এর আগে আদালতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে লিখিত অভিমত জমা দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক আইন উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ। তিনি লিখিত বক্তৃতায় বলেন, যাবজ্জীবন সাজার ক্ষেত্রে একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা জরুরি। মানবিক বিচারেও আমৃত্যু কারাদণ্ডও গ্রহণযোগ্য নয়।
শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, যাবজ্জীবন অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ডÑ এ ধরনের ব্যাখ্যা দেয়া যাবে না। কারণ এতে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির মুক্তি পাওয়ার কোনো আসা থাকে না। এ ছাড়া সরকারের ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে খর্ব করা হয়। তাই যাবজ্জীবন অর্থ ৩০ বছর কারাদণ্ড রাখতে হবে।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাবাসÑ এর পক্ষে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যদি কারো যাবজ্জীবন সাজা হয় আর কিছুদিন পর মুক্তি পান তাহলে সমাজে অপরাধ করার প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে। তবে সরকার চাইলে কাউকে রেয়াত দিতে পারেন।
বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে রিভিউ শুনানি আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি করেন। ওই দিন আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যের জবাব দেবেন।
এর আগে গত ৯ মে যাবজ্জীবন অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ডÑ এ সংক্রান্ত আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদনের শুনানি শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চে রায়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন প্রবীণ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। তিনি আদালতে ভারত, পকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন নজির উপস্থাপন করে দেখান যে ওখানে আমৃত্যু কারাদণ্ড আদালত কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা হয়। অতএব আমৃত্যু কারাদণ্ডের যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে ওটা আমাদের আইনের পরিপন্থী। তাই ওই রায়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে আরো বলেন, যাবজ্জীবন সাজার একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকতে হবে। আমাদের আইনে যাবজ্জীন কারাদণ্ড হিসেবে ৩০ বছর বলা আছে, যা রেয়াদ পাওয়ার পর সাড়ে ২২ বছর হয়। উন্নত বিশ্বেও সাজার মেয়াদ বলে দেয়া হয়। সেখানে প্যারোল ব্যবস্থাও রয়েছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের দীর্ঘদিন কারাগারে থাকতে হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে সে ব্যবস্থা নেই। তাই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হিসেবে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হলে কারাগারগুলো বৃদ্ধাশ্রম হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বর্তমানে সারা দেশের কারাগারে ৫ হাজার ৫৩৭ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছেন। এ সংক্রান্ত রায় নিষ্পত্তি না হওয়ায় তারা ও তাদের পরিবার বুঝতে পারছেন না কত দিন কারাগারে কাটাতে হবে।
এর আগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ আমৃত্যু কারাদণ্ডÑ একটি মামলায় আপিল বিভাগের এমন রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ নিষ্পত্তির জন্য চারজন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ। চারজন অ্যামিকাস কিউরি হলেন- সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, আইনজীবী আবদুর রেজাক খান ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন।
সাভারে ২০০১ সালে জামান নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় নি¤œ আদালত ও হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বহাল থাকা আসামি আতাউর রহমানের সাজা কমিয়ে আপিল বিভাগ যাবজ্জীবন সাজা দেন। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ সাভারের জামান হত্যা মামলায় দুই আসামির আপিলের রায় প্রদানের সময় বলেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অর্থ ৩০ বছর নয়, বরং আমৃত্যু কারাদণ্ড। স্বাভাবিক মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে।
রায়ের সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন এর প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, এটা যেন মূল রায়ে না থাকে। যদি থাকে, তাহলে সব মামলার আসামিদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে।
তখন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, আইনের ব্যাখ্যা দিয়ে দেখাবেন ৩০ বছর না। যাবজ্জীবন মানে আমৃত্যু কারাদণ্ড। বিশেষ করে আদালত যদি এ মর্মে আদেশ দেন যে আমৃত্যুই থাকতে হবে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন জবাবে বলেছিলেন, ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৭ ধরায় যাবজ্জীবন দণ্ডের অর্থ হলো সর্বোচ্চ ৩০ বছর কারাদণ্ড। কারাগারে রেয়াত পেলে দণ্ড আরও কমে আসে। কিন্তু আমৃত্যু সাজা হলে রেয়াত খাটবে না। তিনি বলেন, যদি আমৃত্যুই হয়ে থাকে, তাহলে তাদের রেয়াতের কী হবে?
এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন আতাউর।


আরো সংবাদ



premium cement
দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত

সকল