মুশফিকের রেকর্ডে ম্যাচ কর্তৃত্বে বাংলাদেশ
- মাসউদুর রহমান
- ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০
দুই দিনে মুশফিকের দু’রকম উৎসব। প্রথম দিন সেঞ্চুরি ছিল বহু প্রত্যাশিত। হোম অব ক্রিকেটে সেঞ্চুরি নেই। আফসোসে পুড়ছিলেন। প্রাপ্তিযোগের পর স্বস্তির নিঃশ্বাস। কাল দ্বিতীয় দিনে ডাবল সেঞ্চুরির উৎসব। এটা তো আর সাধারণ কিছু নয়। একজন ব্যাটসম্যানের স্বপ্নের ইনিংস। ওটাতে পৌঁছেও মুশফিক এক ধরনের উৎসব করেছেন। স্বভাবসুলভ উদযাপনের পাশাপাশি দু’হাতের আঙুল ভাঁজ করে ‘লাভ’ চিহ্ন এঁকে উৎসর্গ করেছেন। দিনের খেলা শেষে জানালেন, ওই উৎসর্গ ছিল তার স্ত্রীর জন্য। এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে নাÑ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নমিনেশনপত্র সংগ্রহ করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মাশরাফি ঢাকা টেস্টের প্রথম দিন। কাল দ্বিতীয় দিনে সে স্থানে উঠে এসেছেন মুশফিক। ব্যাট হাতে কি না করেছেন। বাংলাদেশ রেকর্ড তো বটেই। আছে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে দুর্লভ এক কৃতিত্বেরও। মি. ডিপেন্ড্যাবল নামে কেউ কেউ সম্বোধন করেন তাকে আগে থেকেই। সেটা যে যথার্থ তা প্রমাণ দিলেন আরো একবার। উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান হিসেবে ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড নেই টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে। যেখানে এখন নামটা বাংলাদেশের মুশফিকুর রহীমের। ২০১৩ সালে গল টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরির পর কাল মিরপুর শেরেবাংলায় আবারো ডাবল সেঞ্চুরি। কুমার সাঙ্গাকারার ডাবল ও ট্রিপলও আছে। কিন্তু প্রথম ডাবল উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান হিসেবে। এরপর কিপিং ছেড়ে দিয়ে আবারো ডাবল ও ট্রিপল। মুশফিক এখন একক ওই নৈপুণ্যের অধিকারী। বাংলাদেশের একক সর্বোচ্চ এত দিন ছিল সাকিব আল হাসানের। ২১৭। মুশফিক এখন ২১৯ অপরাজিত। ক্রিজে থেকে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকা ও বেশি বল খেলার রেকর্ডও তিনি কেড়ে নিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও মোহাম্মদ আশরাফুলের কাছ থেকে। ওইগুলো তো তার ব্যক্তিগত অর্জন। কিন্তু দলের জন্য যে কাজগুলো করেছেন সেটাও অতুলনীয়। শেষ বিকেলে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে ঠেলে দিয়ে ২-১টা উইকেট নিয়ে চাপে যদি ফেলা যায় এ জন্যই চা-বিরতির বেশ কিছুক্ষণ পর ৫২২/৭ রানে ইনিংস ডিক্লেয়ার। এ ফর্মুলায় সফল বাংলাদেশ। ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে আউট করে দিয়ে ম্যাচে এখন পুরোপুরি দখলে নিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। মুশফিকের কথায় আভাস পাওয়া গেল যা তা হলো- দ্বিতীয় ইনিংস আর ব্যাটিং করতে চান না তারা। অর্থাৎ ফলোঅন করিয়ে জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানে হারানোই তাদের মূল উদ্দেশ্য। আজ সহ বাকি তিন দিনে সেটা সম্ভবও। মূলত বাংলাদেশকে ওই অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পেছনে মুশফিকের অসাধারণ ওই ইনিংসের বিশাল ভূমিকা। মুমিনুলকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে রেকর্ড পার্টনারশিপ খেলে কাল অষ্টম উইকেট জুটিতেও মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে রেকর্ড পার্টনারশিপ খেলেন, যা ছিল হার না-মানা ১৪৪ রানের। মূলত দায়িত্বপূর্ণ ওই দুই পার্টনারশিপে ঢাকা টেস্ট এখন বাংলাদেশের দখলে। মুশফিক ছাড়াও মেহেদি হাসান অপরাজিত ছিলেন ৬৮ রানে।
এ দিন সকালে আগের দিনের ৩০৩/৫ এর সাথে বাংলাদেশ ২১৯ রান যোগ করে ডিক্লেয়ার করে। এর মধ্যে হারিয়েছে তারা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও আরিফুল হককে। আসলে দিনভরই চলে মুশফিক শো। ১১১ রান নিয়ে খেলতে নামা এ ব্যাটসম্যান কখন ১৫০ এ যাবেন সেদিকে তাকিয়ে থাকা। দলীয় স্কোর চার শ’ বা ততোধিকে যাক সে দিকেও ছিল নজর। দেখতে দেখতে তা-ই হলো। ৩৩৪ বল খেলে ওই মার্কে গেলেন মুশফিক। এরপর কিছুটা অ্যাটাকিংই ছিলেন। ১৮০তে গিয়ে মনে হলো মুশফিকের মাথায় ডাবলের চিন্তা ঢুকেছে। ব্যাস, দেখে শুনে খেলে চা-বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে যেয়ে আর রিস্ক শট খেলেননি। ১৯৫ রান নিয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। বিরতির পর ওই লক্ষ্যে পৌঁছালেন ১৯৯ ঘরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কিছুটা নার্ভাস থেকেও। ৪০৭ বল খেলে ডাবল সেঞ্চুরি করেন তিনি ১ ছক্কা ১৬ চারের সাহায্যে। এরপর দল পৌঁছায় ৫০০তে। সেটা আসে দলীয় ১৫৫.৫ ওভারে। এরপর তো ৫২২ এ ওই ডিক্লেয়ার। ২১৯ রান করেন মুশফিক ৫৮৯ মিনিট ক্রিজে থেকে। এক ছক্কা ১৮ চার দিয়ে সাজানো তার স্বপ্নের ইনিংস। এরপর জিম্বাবুয়ে খেলতে নেমে ২৫ রান করেছে ১ উইকেট হারিয়ে। ১৮ ওভারে ওই রান করেছেন তারা। আজ ম্যাচের তৃতীয় দিন।
বাংলাদেশ : ৫২২/৭ ডিক্লে. জিম্বাবুয়ে : ২৫/১ (১৮ ওভার)
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা