আইনজীবীদেরও জাতীয় ঐক্য হচ্ছে

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি, দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের তিন দফা দাবিতে আইনজীবীরা একমত হয়েছেন। রাজনীতিবিদদের ঐক্যের পাশাপাশি একই ইস্যুতে আইনজীবীরাও ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। বিভিন্ন দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অক্টোবরের প্রথম দিকে মহাসমাবেশ করার পক্ষে মত দিয়েছেন আইনজীবীরা। আগামী দু-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্মেলন কক্ষে সিনিয়র আইনজীবীদের বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়ুনল আবেদীনের সভাপতিত্বে সভায় সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন মত ও আদর্শে বিশ্বাসী আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
বেলা ৩টা থেকে বিকেল সোয়া ৪টা পর্যন্ত স্থায়ী বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, নিতাই রায় চৌধুরী, গণফোরামের মহাসচিব অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণফোরাম নেতা জগলুল হায়দার আফ্রিক, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, আবেদ রাজা, এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, মো: ফারুক হোসেন, সাইফুর রহমান, আনিছুর রহমান খান, আমাতুন নুর পান্না, হেলাল উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তিন দফা দাবিতে অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে এ সমাবেশ করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এ ছাড়া দু-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের নাম উঠে এসেছে এ সংগঠনের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য।
সভায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আইনজীবীদের জাতীয় ঐক্য নিয়ে একটি নাম দেয়ার প্রস্তাব করেন এবং অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে আইনজীবীদের মহাসমাবেশ করার পক্ষে মত দেন। এ ছাড়াও প্রতিটি বিভাগে আইনজীবীদের কমিটি গঠনের সুপারিশ করেন তিনি।
সভায় উপস্থিত আইনজীবীরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি দাবিতে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আইনজীবীকে জাতীয় ঐক্যে সম্পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন। সভায় ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুছ কাজল আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে পাঁচজনকে নিয়ে একটি সভাপতিমণ্ডলী করার পরামর্শ দেন। প্রয়োজনে একজনের অনুপস্থিতিতে যেন আরকজন নেতৃত্ব দিতে পারেন। সভাশেষে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি দেশের আইনজীবীদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে। এ বিষয়ে শক্তিশালী একটি ঐক্যপ্রক্রিয়ার কাজ চলছে। আমরা চাই দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হোক।
জয়নুল আবেদীন বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি, দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের তিন দফা দাবিতে আইনজীবীরা একমত হয়েছেন। আগামী দু-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, যেসব দাবি আদায় করতে গিয়ে খালেদা জিয়া আজ কারাগারে ঠিক একই ইস্যুতে সব আইনজীবী আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আজ ভূলুণ্ঠিত। তাই যেসব দাবিতে রাজনৈতিক দলের জাতীয় ঐক্য হয়েছে সে ঐক্যকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। সে লক্ষ্যে আইনজীবীদের ঐক্যের বিকল্প নেই।