প্রধানমন্ত্রীর জাতিসঙ্ঘ সফর ঘিরে মুখোমুখি আ’লীগ ও বিএনপি

জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাত দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে আগমন উপলক্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে প্রবাসী বাংলাদেশীদের রাজনীতি। বাড়ছে অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল, হাতাহাতি, চলছে হুমকিÑধমকি দেশীয় কায়দায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরে বরণ, নাগরিক সংবর্ধনা এবং জাতিসঙ্ঘে ভাষণের সময় ব্যাপক শো-ডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নিউ ইয়র্কেও বাংলাদেশী-অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রুকলিন, ব্রনকসে শোভা পাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে রঙ-বেরঙের ব্যানার ও ফেস্টুন।
অপর দিকে, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোও ‘যেখানেই শেখ হাসিনা, সেখানেই প্রতিরোধ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বিমানবন্দরে কালো পতাকা প্রদর্শন, প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ভেনু ও জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরের সামনে ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সফরকে না বলতে বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনও নিয়েছে অভিন্ন কর্মসূচি। ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলমের বিষয়ে বিশ্বনেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জাতিসঙ্ঘের অধিবেশন চলাকালীন অবস্থান কর্মসূচিরও উদ্যোগ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ও অ্যাক্টিভিস্টরা।
বিগত বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে ছোটখাটো বিবাদ থাকলেও এবার অভ্যন্তরীণ কোন্দল বেশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে বিগত বছরগুলোতে দলের অঙ্গসংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকলেও এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের রাজনীতি। গেল এক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি গ্রুপ সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে প্রেস ব্রিফিং, সভা-সমাবেশ ও শো-ডাউন করে যাচ্ছে। এমনি বাস্তবতায় গত বুধবার আওয়ামী যুবলীগের দুই গ্রুপ জ্যাকসন হাইটস এলাকায় প্রকাশ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়লে এক ন্যক্কারজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ তিনজন যুবলীগ কর্মীকে গ্রেফতার করেছে। যুবলীগের একটি অংশের অভিযোগÑ প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে তাকে ‘স্বাগত’ জানিয়ে যুবলীগের মিছিলে প্রতিপক্ষ হামলা করলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটিকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। এর একটি অংশ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ড. সিদ্দিককে সমর্থন করছে। অন্যটিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে ড. সিদ্দিক বিরোধী গ্রুপ। সিদ্দিক বিরোধী গ্রুপ আশা করছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এবারের সফরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করবেন। শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের এক সভায় ড. সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী পরিবারের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরে এমন কিছু করবেন না যাতে নেত্রীর অসম্মান হয়। প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর যে শাস্তিই দেয়া হবেÑ তা আমি মাথা পেতে নেবো।
অপর দিকে, প্রধানমন্ত্রীর সফরকে ঘিরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি। এদের মধ্যে বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্্রাট ও সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি গিয়াস আহম্মেদ নেতৃত্ব দিচ্ছেন একটি গ্রুপের। অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা: মুজিবুর রহমান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরকে না বলতে আলাদাভাবে কর্মসূচি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সহসভাপতি শরাফত হোসেন বাবু ও জসীম ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন একটি গ্রুপ। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির গেল ১০ বছর ধরে কোনো কমিটি নেই।
জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার দুপুরে নিউ ইয়র্ক পৌঁছেছেন। সোমবার সকাল থেকে জাতিসঙ্ঘে বেশ কয়েকটি সাইড ইভেন্টে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে প্রধানন্ত্রীর। ২৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী বাংলায় জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন।