২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিলে পুলিশের বাধা হামলা-লাঠিচার্জ

বাম গণতান্ত্রিক জোটের মিছিলে পুলিশের লাঠিপেটা : নয়া দিগন্ত -

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল তাদের একটি মিছিল রাজধানীর কাওরান বাজার মোড়ে পৌঁছলে সেখানে মিছিলটি আটকে দিয়েছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা বাধা উপেক্ষা করে সামনে যেতে চাইলে পুলিশ মারমুখী হয়ে ওঠে এবং কয়েকদফা লাঠি চার্জ করে। এতে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদ গতকালের এ কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা এবং সাতক্ষীরায় গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা দোষী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান। হামলা ও গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে জোটটি।
অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোট তাদের ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নে ঢাকাসহ সারা দেশে এ কর্মসূচি পালন করে। এর অংশ হিসেবে গতকাল বেলা ১১টায় বাম গণতান্ত্রিক জোট ঢাকায় নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির শুরুতে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, সরকার যেন তেনভাবে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু তারা জানে না জনগণ এটা আর বরদাশত করবে না। তিনি বলেন, জনগণ ম্যাজিক নির্বাচন দেখতে চায় না, তাই তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে সমাবেশে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মো: শাহ আলম, বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা ফিরোজ আহমদ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশ শেষে বাম মোর্চার নেতাকর্মীরা জাতীয় প্রেস কাব প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি জাতীয় প্রেস কাব থেকে মৎস্য ভবন, শাহবাগ, বাংলা মটর হয়ে কাওরান বাজার অতিক্রম করতে গেলে সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ তাদের বাধা দেয়। আগে থেকেই সার্ক ফোয়ারা মোড়েই পুলিশ কাটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে রেখেছিল। মিছিলকারীরা ব্যারিকেড সড়িয়ে সামনে যেতে চাইলে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে এবং বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দেয়। এ সময়ে পুরো এলাকায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীর হাত থেকে ব্যানারা ফেস্টুন কেড়ে নেয়। পুলিশের ধাওয়ায় জোটের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে রয়েছেনÑ জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মো: শাহ আলম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাসদ কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, সিপিবি নেতা সাজ্জাদ জহির চন্দন, রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদের (মার্কসবাদী) ফখরুদ্দিন কবির আতিক, গণসংহতি আন্দোলনের মনিরউদ্দীন পাপ্পু, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল ইসলাম, গার্মেন্ট শ্রমিক নেতা জয়নাল আবেদীন, ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সহসভাপতি সাদেকুল ইসলাম, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স। পুলিশের হামলায় কর্তব্যরত সাংবাদিকেরাও আহত হন। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে কর্মীরা শান্ত হন এবং কাওরান বাজার তিতাস মোড়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে।
সাতক্ষীরায় তিনজন গ্রেফতার : জোটের পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী জেলা নির্বাচন কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরায় বাম গণতান্ত্রিক জোটের জেলা নেতা বাসদ সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকার, বাসদের (মার্কসবাদী) নেতা খগেন্দ্রনাথ ও প্রশান্ত রায়কে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
এ দিকে ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশি হামলায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতনসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী আহত হওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যের অন্যতম উদ্যোক্তা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করা সম্ভব নয়, অথচ নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের কথা বলতে গেলে পুলিশ নির্যাতন করছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের পুলিশি নির্যাতন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বাধা। অপর এক বিবৃতিতে বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান এক বিবৃতিতে অবাধ ও নিরপে নির্বাচনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট আয়োজিত নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ঘেরাওয়ের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিনা উসকানিতে পুলিশি হামলা এবং জোটের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে লাঠি চার্জ করে আহত করার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। একই সাথে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুলিশ হস্তক্ষেপ, বাধা ও হামলা আইন করে নিষিদ্ধ করারও দাবি জানান তিনি। সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মো: শাহ আলম এক বিবৃতিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশি হামলা এবং সাতক্ষীরায় কর্মসূচি থেকে তিনজনকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ড. কামাল হোসেনের নিন্দা : নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশি হামলায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতনসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী আহত হওযার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু।
নেতৃদ্বয় বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার ছাড়া একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন সম্ভব নয় অথচ নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের কথা বলতে গেলে পুলিশ নির্যাতন করছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ধরনের পুলিশি নির্যাতন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে বাধা।

 


আরো সংবাদ



premium cement