২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মৃত্যুকে ভয় করি না

গণসংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন : বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মৃত্যুকে আমি ভয় করি না। মৃত্যু একদিন আসবেই। নিজের জীবনকে এ দেশের মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাকে দেয়া আওয়ামী লীগের এক গণসংবর্ধনায় তিনি এ কথা বলেন। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎপেণ, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন, অস্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড পাওয়া এবং সর্বশেষ ভারতের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি অর্জনসহ সরকারের বিভিন্ন অর্জনে অবদান রাখায় শেখ হাসিনাকে এই গণসংবর্ধনা দেয়া হয়।
এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রাখা বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা তার বাবাকে সপরিবারে হত্যা, ছয় বছর বিদেশে তার জীবন, দেশে ফেরা, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে মতায় নিয়ে আসা, মতায় থেকে দেশের উন্নয়নে তার চেষ্টার কথা তুলে ধরেন। দেশ কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণে কী কী করছেনÑ তারও বিস্তারিত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় ‘নৌকা ঠেকাতে একটি মহল তৎপর রয়েছে’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা কেন ঠেকাতে হবে? নৌকার অপরাধ কী? সামনে শ্রাবণ মাস। বর্ষার সময়, বন্যার সময়। নৌকা তো লাগবে। যেসব রাজনীতিক নৌকা ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন তাদের বন্যার সময় রিলিফ বিতরণ করতে ও চলাচল করতে তো নৌকাই লাগবে।
একটি শ্রেণী আছে, উন্নয়ন তাদের চোখে পড়ে নাÑ এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছে; এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন হয়েছে; এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে; এই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিল বলেই বাংলাদেশ উন্নত হচ্ছেÑ আজকে উন্নয়নশীল দেশে আমরা উন্নীত হতে পেরেছি।
তিনি বলেন, নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আমরা পরমাণু বিদ্যুৎ কাবে পৌঁছাতে পেরেছি; আমরা স্যাটেলাইট যুগে পৌঁছাতে পেরেছি। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজ বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২২ ভাগে নেমে এসেছে; দারিদ্র্যের হার আরো হ্রাস করে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে পারব। তাহলে নৌকা ঠেকাবেন কেন? নৌকা ঠেকিয়ে কি ওই রাজাকারদের, যুদ্ধাপরাধীদের আবার মতায় আনবেন? যারা নৌকা ঠেকাতে চান, তাদের কাছে সেটাই আমার প্রশ্ন। আমি জানি, যারা মিলিটারি ডিকটেটরদের উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবনধারণ করেছে বা বড় হয়েছে, তাদের মুখে এ কথা মানায়। কিন্তু যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তাদের মুখে এ কথা মানায় না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স আমাদেরই দাবি ছিল, আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। ছবিসহ ভোটার তালিকা আমরাই দিয়েছি। জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে। জনগণ ভোট দিয়ে তার প্রার্থী নির্বাচন করতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর ছয় হাজারের ওপর নির্বাচন হয়েছে। প্রত্যেকটা নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো প্রার্থী জয়যুক্ত করেছে। গণতন্ত্র যদি না থাকবে তাহলে মানুষ ভোট দিয়ে নির্বাচন করল কিভাবে?
জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বরদাশত হবে না : জনগণের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলবে, তা বরদাশত করব নাÑ এমন মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। এগিয়ে যাওয়ার ধারা আমরা যাতে অব্যাহত রাখতে পারি।
তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করায় একটি মহল সমালোচনায় মেতেছে। যারা এটাকে সন্দেহের চোখে দেখে, সমালোচনা করেÑ তাদের সম্পর্কে আমার মনে হয়, তারা দেশের স্বাধীনতা ও অস্তিত্ব স্বীকার করে না।
উন্নয়নে কাদের আঁতে ঘা লাগে : উন্নয়নের পথে বাংলাদেশের যাত্রা আর নানা সাফল্যে কাদের আঁতে ঘা লাগছে, জানতে চেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার সময় আমরা সরকার গঠন করেছি। কিন্তু মন্দার প্রভাব আমরা মানুষের ওপর পড়তে দেইনি। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন, ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ ভাগে নামিয়ে আনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, যদিও আমাদের শুনতে হয় উচ্চ প্রবৃদ্ধি নাকি ভালো না, দেশ উন্নয়নশীল হওয়া নাকি ভালো না, কেউ কেউ সে বক্তব্য দিয়ে থাকে। কারা দেয়, কার আঁতে ঘা লাগে?। আঁতে ঘা লেগেছে তাদের যারা আমার বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষ, হাড্ডিসার, কঙ্কালসার, বুভুু মানুষ; যাদের শুধু হাড় আর চামড়া আছে, সেই দরিদ্র মানুষকে দেখিয়ে দেখিয়ে বিদেশ থেকে অর্থ এনে সেই অর্থ দিয়ে নিজেরা অর্থশালী, সম্পদশালী হয়; দেশ-বিদেশে সম্পদের পাহাড় তৈরি করেÑ তাদেরই আঁতে ঘা লেগেছে। প্রবৃদ্ধি অর্জনের বিরুদ্ধে তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়।
দেশের সব অর্জন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই হয়েছেÑ দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ মতায় এলেই দেশের জনগণ কিছু পায়, দেশের উন্নয়ন হয়। ২১ বছর এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ মতায় আসার পরই দেশের উন্নয়ন হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। জিয়াউর রহমান মতায় এসে সেই বিচার বন্ধ করে দিয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের সরকারের উচ্চ পদে চাকরি দিয়েছিল। আমরা ট্রাইব্যুনাল করে সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পেরেছি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ কলুষমুক্ত হয়েছে। এই অপরাধীদের যখন আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছি, তখনই যেন আমাদের উন্নয়নের দ্বার খুলে যায়; এটাই আমার উপলব্ধি।
মাত্র ৫ ঘণ্টা সময় আমার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজের জীবনযাত্রার কথা তুলে ধরে বলেন, আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিজের জন্য মাত্র ৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় করি। কোনো উৎসবে আমি যাই না। প্রতিটি মুহূর্ত কাজ করি দেশের মানুষের জন্য। মৃত্যুভয় আমি করি না। মৃত্যুর আগে মরতেও রাজি নই। যতণ জীবন আছে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাবো। যে মানুষের জন্য আমার বাবা সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বেহেশত থেকে আমার বাবা তা দেখবেন।
এ মণিহার আমায় নাহি সাজে : বক্তব্যের শুরুতেই নিজেকে দেয়া সংবর্ধনা বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান উদ্ধৃত করে বলেন, ‘এ মণিহার আমায় নাহি সাজে..।’
তিনি বলেন, জনগণ কতটুকু পেল সেটাই আমার কাছে সব থেকে বিবেচ্য বিষয়। এর বাইরে আমার আর কোনো চাওয়াপাওয়া নেই।
বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর ‘কঠিন পরিস্থিতির’ মধ্য দিয়ে চলা ও দল গোছানো এবং বাংলার মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি লোকে লোকারণ্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে পৌঁছান। শেখ হাসিনা মঞ্চে উঠতেই স্লোগান ও ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এই ঐতিহাসিক উদ্যান। আধা ঘণ্টার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মানপত্র পাঠ করেন। এই মানপত্র তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
বিকেলে এই অনুষ্ঠান হলেও এতে যোগ দিতে দুপুর থেকেই বৃষ্টি উপো করে জড়ো হতে থাকেন মতাসীন দলটির নেতা, কর্মী ও সমর্থকেরা।
বিকেল ৪টা ১৯ মিনিটের দিকে সংবর্ধনার মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। তার আগে দলের সাংস্কৃতিক উপকমিটির প থেকে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হয়। এ পর্ব উপস্থাপনা করেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন। সংবর্ধনা মঞ্চে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দেিণর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ১৪ দলের শরিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement
‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ গাজীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ডভ্যানে অটোরিকশার ধাক্কায় হতাহত ৫ চৌগাছায় সিদ কেটে স্বর্ণের দোকানে চুরি

সকল