২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জনগণ ভোট দিলে আবার ক্ষমতায় আসব না হলে আসব না : প্রধানমন্ত্রী

-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামাজিক নিরাপত্তাবলয় কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগীদের ভাতাগুলো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে (জিটুপিÑ গভর্নমেন্ট টু পারসন) বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন। গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সামনে নির্বাচন, জনগণ যদি ভোট দেয় তাহলে আবার ক্ষমতায় আসব। না হলে আসব না। এটা আল্লাহর ওপরও নির্ভর করে, তিনি যদি চান। তবে তার আগেই আমি আমার কাজগুলোকে সুরক্ষিত করতে চাই। মানুষের সেবা করাই আমাদের কাজ, মানুষের পাশে থাকাই আমাদের কাজ, বলেন তিনি।
সামাজিক নিরাপত্তাবলয় কর্মসূচির আওতায় প্রবীণ, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বিধবাসহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬৭ লাখ ভাতাপ্রাপ্ত মানুষ প্রতি মাসের নির্দিষ্ট সময়ে মোবাইল ফোনে এসএমএস পাওয়ার পর সরাসরি ব্যাংক থেকে তাদের প্রাপ্ত ভাতা তুলতে পারবেন। সরকার চলতি অর্থবছর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামাজিক নিরাপত্তবলয় কর্মসূচির আওতায় চার হাজার ৩১৭ কোটি টাকা বেদে, হরিজন, চা শ্রমিক ও দুরোরোগ্য ব্যাধি যেমন ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সমস্যায় আক্রান্তদের সহযোগিতার জন্য বরাদ্দ করেছে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব জিল্লার রহমান প্রকল্পের অর্থ প্রদান সম্পর্কিত একটি প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো: নজিবুর রহমান গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ও গোপালগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসকেরা ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। এ সময় আরো সাতটি জেলা অনুষ্ঠানের সাথে সংযুক্ত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলব। প্রতিটি গ্রামে মানুষ শহরের মতো সুবিধা পাবে। তিনি বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি ভাতা দেয়ার পদ্ধতিতে স্বচ্ছতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। যাতে দরিদ্র মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। তাদের সম্পদ ও টাকা কেউ কেড়ে নিতে না পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আগে ভাতার টাকা ব্যাংক ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে যেত। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ আমরা সেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে যারা যা প্রাপ্য তার কাছেই পৌঁছে দেবো। কেউ আর কমিশন খেতে পারবে না। সরাসরি টাকা আপনার হাতে পৌঁছে যাবে। তিনি বলেন, টাকা প্রাপকদের নামের একটি ডাটাবেজ করে রাখা হবে, যাতে কেউ তাদের নিয়ে কোনো রকম খেলা খেলতে না পারেন। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যক্তির কাছে অর্থাৎ ‘গভর্নমেন্ট টু পারসন’ এ ভাতা পৌঁছে যাবে।
সরকারি ভাতার ওপর নির্ভর করে কর্মবিমুখ না হতে হতদরিদ্রদের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষ যেন না খেয়ে কষ্ট না পায় সে জন্য আমরা সহযোগিতা দিচ্ছি। পুরো সংসারের দায়িত্ব আমরা নেবো না। মানুষ যাতে পুরোপুরি ভাতার ওপর নিভর্রশীল না হয়, কর্মবিমুখ না হয়। তিনি বলেন, এমন পরিমাণে ভাতা দেয়া হবে যা দিয়ে খাদ্য কিনতে পারবেন, কিন্তু আপনাকে কাজ করতে হবে। শুধু ভাতার ওপর নির্ভরশীল হলে চলবে না। যারা কর্মক্ষম তারা কাজ করবেন। বিএনপি-জামায়াতের আমলে দুস্থ মানুষ সেবার বদলে বারবার নিগৃহীত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন সামাজিক ভাতা ১০০ টাকা দিলে মাঝখান থেকে ৫-১০ টাকা নিয়ে নিত। এখানেও দুর্নীতি ছিল। এমন ব্যবস্থা চালু করে যাচ্ছি যাতে মানুষকে আর ভোগান্তি পোহাতে না হয়। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় ২০০৫ সালে ১৩ শতাংশ হতদরিদ্র মানুষ থাকলেও, ২০১৮ সালে ২৮ শতাংশ প্রান্তিক মানুষ এখন সুবিধা পাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ছয় বছর প্রবাস জীবন শেষে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেশে ফেরার সময়কার স্মৃতিচারণ করে বলেন, তখন সারা দেশে ছুটে বেড়িয়েছি। দেখেছি হাড্ডিসার, কঙ্কালসার মানুষ ক্ষুধার তাড়নায়, চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এসব দুর্ভাগা মানুষের জন্যই স্বাধীনতা, তাদের কল্যাণের জন্যই ছিল আমার বাবার (বঙ্গবন্ধু) রাজনীতি। তাদের জন্যই তিনি সারা জীবন জেল, জুলুম, অত্যাচার সহ্য করে গেছেন।
দেশকে ভালোবাসা, দেশের মানুষকে ভালোবাসার শিক্ষা তিনি বাবার কাছ থেকেই পেয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য এ দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। তিনি সুষ্ঠুভাবে দেশসেবার জন্য সবার দোয়া প্রত্যাশা করেন। নরসিংদী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, গোপালগঞ্জের প্রান্তিক এলাকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় উপকারভোগীদের সাথে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উপকারভোগীদের ব্যাংক হিসাবে টাকা পৌঁছার খবর তাদের মোবাইল ফোনে চলে যাবে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তারা টাকা তুলতে পারবেন। যেসব দুস্থ মানুষ টাকা আনতে ব্যাংকে বা ইউনিয়ন পরিষদে যেতে পারবেন না, তারা সমাজকল্যাণ অফিসকে জানালে বাড়িতে টাকা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। ভাতাভোগীরা মধুমতি, এনআরবি, ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে এ টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের কোটার বিরুদ্ধেই সাম্প্রতিক আন্দোলন
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করেন। সেই সাথে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর সরকারি চাকরির জন্য কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে পাওয়া যেত না। ফলে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং নাতি-নাতনীদের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যাতে রাষ্ট্রপরিচালনায় মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণ থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে ভিসির (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি) বাড়িতে আক্রমণ, তাকে হত্যার প্রচেষ্টা এবং ভাঙচুর ও লুটপাট, একেবারে বেডরুমে ঢুকে লুটপাট চলেছে। অরাজক পরিস্থিতি দেখে আমি বলেছিলাম, ‘ঠিক আছে কোটা থাকবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা থাকবে না কিন্তু সাথে সাথে আমাদের এটাও দেখতে হবে স্বাধীনতাবিরোধী যারা যুদ্ধাপরাধী তারা যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে বা রাষ্ট্রীয় কোনো পজিশন না পায় সেটাও দেখতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা জানেন যে, হাইকোর্টে একটা রিট হয়েছিল। সে রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট হুকুম দিলো, এই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে, না হলে পদ শূন্য থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি যখন আপিল বিভাগে যায় তখন আপিল বিভাগ একটা রায় দেয়Ñ ‘কোটা পূরণ করে যদি কোনো শূন্য পদ থাকে তাহলে মেধাতালিকা থেকে তা পূরণ করা যাবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর কাছ থেকে তিনি বিষয়টি অবহিত হয়েই কেবিনেট সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করে দেন। কারণ হাইকোর্টের রায় তিনি অবমাননা করতে পারেন না।
শেখ হাসিনা জাতির সূর্য সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বলেন, যাদের মহান আত্মত্যাগে এই স্বাধীনতা, তাদের জন্য আমরা যে ভাতার ব্যবস্থা করেছি, আমি জানি কাউকে ভাতা দিয়ে সম্মান দেয়া যায় না। কিন্তু আমি চাই না তারা কেউ কষ্ট পাক। এ কারণেই এই উদ্যোগটা আমরা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাতার টাকা সরাসরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে যাতে পৌঁছে তার জন্যই এই অনুষ্ঠান। তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে সারা বাংলাদেশে যেখানেই মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে, এই ভাতার টাকা সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে যাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট চুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত আমদানি ব্যয় কমাতে দক্ষিণাঞ্চলের সূর্যমুখী তেলের আবাদ

সকল