২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলা

মৌলভীবাজারের চারজনের মৃত্যুদণ্ড

-

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার সাবেক মাদরাসা শিক্ষক আকমল আলী তালুকদারসহ চারজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গতকাল মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনা দু’টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একটিতে সবাইকে মৃত্যুদণ্ড আর অন্যটিতে সবাইকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
নিয়ম অনুযায়ী রায়ের এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করতে হবে। পলাতক আসামিদের আপিলের সুযোগ নিতে হলে আগে আত্মসমর্পণ করতে হবে; তারপরই তারা আপিলের সুযোগ পাবেন।
রায় ঘোষণার সময় গ্রেফতার হওয়া আসামি আকমল আলী তালুকদার (৭৯) কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। বাকি তিন আসামি আব্দুন নূর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া (৬৬), আনিছ মিয়া (৮০) ও আবদুল মোছাব্বির মিয়া (৬৭) শুরু থেকে পলাতক। যারা পলাতক তাদের গ্রেফতার পদক্ষেপ নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, সব অপরাধের শীর্ষ অপরাধ হলো গণহত্যা। আর রাজনগরে গণহত্যাসহ যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তা কেবল একটি জায়গায় কয়েকজন মানুষকে হত্যা করা নয়, পুরো মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। যারা এ অপরাধ করেছে তারা মানবতার শত্রু।
রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করে প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, এই মামলায় প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছে তাতে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট, ন্যায়বিচার পেয়েছি।
সকাল সাড়ে ১০টায় রায় ঘোষণার শুরুতে বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম সূচনা বক্তব্য দেন। এরপর ১৬০ পৃষ্ঠার রায়ের সার সংক্ষেপের প্রথম অংশ পড়েন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার। বিচারপতি আমির হোসেন পড়েন রায়ের দ্বিতীয় অংশ। সবশেষে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান সাজার অংশ পড়েন।
গত ২৭ মার্চ যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য মামলাটি অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল। গত সোমবার রায়ের দিন ধার্য করা হয়।
আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লাশ গুম, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দু’টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬১ জনকে হত্যা-গণহত্যা ও ছয়জনকে ধর্ষণের অভিযোগ।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। আসামি আকমল আলী তালুকদারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবদুস সোবহান তরফদার। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আবুল হোসেন যুক্তি উপস্থাপন করেন।
গত বছরের ৭ মে ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন। ২০১৬ সালের ২৩ মার্চ এই চারজনের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জমা দেয়া হয় ট্রাইব্যুনালে। ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রাম থেকে আকমল আলী তালুকদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠান। তিনি মৌলভীবাজার টাউন সিনিয়র কামিল মাদরাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ।

 


আরো সংবাদ



premium cement