২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভুলে ভরা এনটিআরসিএর শিক্ষক মেধা তালিকা

-

গত ১০ জুলাই বেসরকারি শিক্ষক নিন্ধবন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) থেকে সর্বশেষ (১ থেকে ১১তম) শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ স্কুল-কলেজ পর্যায়ে উত্তীর্ণ প্রায় সাড়ে ছয় লাখ প্রার্থীর মেধা তালিকা প্রকাশ করেছে। সারা দেশে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এ সব শূন্য আসনে নিয়োগের জন্য এ তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ সূত্রে বলা হয়। কিন্তু প্রকাশিত মেধা তালিকা নিয়ে নিবন্ধিত শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। জানা গেছে, তালিকাটি ‘ভুলে ভরা’। তালিকায় পুরুষ শিক্ষকের নামের জায়গায় মহিলা শিক্ষকের নাম, মহিলার জায়গায় পুরুষের নাম, একই ব্যক্তি ও একই বিষয়ের শিক্ষকের নাম ভিন্ন তালিকায় ভিন্ন নামে স্থান পেয়েছে, নামের বানান-নম্বর ভুলসহ বিভিন্ন ভুলভ্রান্তি ধরা পড়ছে বলে চাকরিপ্রত্যাশী নিবন্ধিত প্রার্থীরা অভিযোগ করেন। এসব অভিযোগ নিয়ে এনটিআরসিএর কাছে প্রতিকার ও সংশোধনের দাবি জানাতে গিয়ে নানা ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে ভুক্তভোগীদের। গত কয়েক দিনে এ ধরনের কয়েক শ’ অভিযোগ ও সংশোধনের আবেদন-নিবেদন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এনটিআরসিএ সূত্রে জানা গেছে, দেশের সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য আসনের তালিকা চাওয়া হয়েছে। এ তালিকায় বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের পদ সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজারের বেশী। এ সব শূন্য পদে যোগ্য বিবেচিতদের নিয়োগের জন্য এনটিআরসিএ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে সুপারিশ করা হবে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের নতুন আইন ও নীতিমালা অনুসারে সুপারিশকৃতদের নিয়োগ দিতে হবে প্রতিষ্ঠানকে। এ ক্ষেত্রে আর কোনো ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগ নেই প্রতিষ্ঠানটির। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্য শিক্ষক নিয়োগের জন্য ওই আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এনটিআরসিএ সূত্র বলছে, আগামী এক মাসের মধ্যে শূন্য আসনের তালিকা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে চাওয়া হয়েছে। তারই ভিত্তিতে চাহিদা তালিকা প্রকাশ করার প্রস্তুতি চলছে।
এ দিকে তালিকা পাওয়ার আগেই এনটিআরসিএ যে মেধা তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে অসংখ্য ভুলভ্রান্তি চিহ্নিত হওয়ায় প্রার্থীরা হতাশ ও বিপাকে পড়েছেন।
প্রকাশিত মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া কুমিল্লার শিক্ষক কবির হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে ৯ম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হয়েছেন। দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটে গত ১০ জুলাই মেধা তালিকায় নিজের নাম দেখে। তিনি বলেন, আল্লাহতালা মনে হয় ফিরে চেয়েছেন। কিন্তু তালিকায় তিনি কলেজ পর্যায়ে বাংলা বিষয়ে ৭৩৬ ও স্কুল পর্যায়ে বাংলা বিষয়ে ১২৩৩ নম্বর মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, মেধা তালিকা তার রোল নম্বর স্থান পেলেও তার নামের স্থানে একজন নারী প্রার্থীর নাম দেখে হতভম্ব হয়ে ঢাকায় আসেন এবং এনটিআরসিএ-তে গিয়ে অভিযোগ করেন। তিনি লিখিত অভিযোগ করলেও, তা কবে নাগাদ সংশোধন হবে, বা আদৌ তালিকায় তা প্রতিস্থাপন হবে কি না সে ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি। তাকে বলা হয়েছে পরে খোঁজ নিতে।
১১তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ রবিন নামে আরেক শিক্ষক অভিযোগ করেন, কম্পিউটার বিষয়ে নিবন্ধন হলেও তাকে অঙ্ক বিষয়ে মেধা তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে। এটি নিয়ে তার পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবরা তাকে নানা কথা বলছেন। তিনি বলেন, আমার বিষয় পরিবর্তন হওয়ায় চিন্তায় পড়েছি। অঙ্ক বিষয়ে শিক্ষকতা করা আমরা পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে ঢাকায় এসেছেন। তিনি আরো বলেন, আমার মতো অনেক বন্ধবান্ধব ও পরিচিত নিবন্ধিত প্রার্থীর নাম, রোল, বিষয়সহ নানা ধরনের ভুল ধরা পড়েছে। অনেকে এনটিআরসিএ গিয়ে অভিযোগ করেছেন। আমিও এসছি। কিন্তু গত দু’দিন এনটিআরসিএ-তে এসে কোনো কুলকিনারা দেখছি না।
এ ব্যাপারে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব এ এমএম আজহার মেধা তালিকায় ভুলভ্রান্তির অভিযোগ প্রকারান্তরে স্বীকার করেন। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, কিছু অভিযোগ এসেছে এবং কেউ কেউ লিখিতভাবে সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন বলে শুনেছি। তিনি বলেন, এনটিআরসিএ অনেক বড় ধরনের একটি কাজ হাতে নিয়েছে। শুরু থেকে ১১তম নিবন্ধন পরীক্ষা উত্তীর্ণ প্রায় ছয় লাখ প্রার্থীদের থেকে বাছাই করা হচ্ছে। এটি একটি বলতে পারেন মহাযজ্ঞ। সেখানে কিছু ভুল ধরা পড়লেও তা বড় করে দেখার কিছু নেই। তিনি বলেন, অভিযোগ এসেছে, আমরা তা সংশোধন করে দেবো।


আরো সংবাদ



premium cement