২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আওয়ামী লীগের ইশতেহার ঘোষণা ১৮ ডিসেম্বর, যা থাকছে

- ফাইল ছবি

বাংলাদেশকে আধুনিক, উন্নত ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা থাকছে আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে। এ জন্য আধুনিক মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্বের উন্নত বেশ কিছু রাষ্ট্রের অগ্রগতির ইতিহাস পর্যালোচনা করে ইশতেহার তৈরি করা হয়েছে।

উন্নয়নের মহাসড়কের গতি বেগবান করা এবং দারিদ্র্যের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে স্বল্পসময়ে অর্থনৈতিকভাবে শীর্ষ চূড়ায় পৌঁছানো চীন-রাশিয়াসহ কয়েকটি উন্নত রাষ্ট্রকে মডেল হিসেবে ধরে নিয়ে যুগোপযোগী ইশতেহার প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে কিভাবে তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পদে পরিণত করা যায়, সে লক্ষ্যে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগসহ নানা স্বপ্নের কথা ইশতেহারে বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে নারীর ক্ষমতায়নের ধারা অব্যাহত রাখার বিষয়টিও গুরুত্ব পেয়েছে। দলমত, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার এবং সংখ্যালঘুদের সুরক্ষার বিষয়ে দৃঢ় ঘোষণা থাকছে ইশতেহারে। থাকছে দেশের প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একগুচ্ছ মানবিক উপহার। ক্ষমতাসীন দলটির এবারের ইশতেহারের নির্বাচিত স্লোগান ‘গ্রাম হবে শহর’।

দেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষ ও সরকারি-বেসরকারি সব খাতের জন্য নির্দিষ্ট কর্মসূচি আর উদ্যোগে ইশতেহারও সমৃদ্ধ বলে মনে করেন তা প্রণয়নের সাথে জড়িতরা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০০৮ ও ২০১৪ সালের ইশতেহারের মতো চমক সৃষ্টি ও ভোটারদের আকৃষ্ট করতে দীর্ঘ সময় নিয়ে ইশতেহারের কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনাড়ম্বর পরিবেশে আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইশতেহার ঘোষণা করবেন।

‘গ্রাম হবে শহর’ এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি বরগুনার তালতলীর জনসভায় আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের প্রতিটি গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করা হবে। শহরের মতো সেবা প্রতিটি গ্রামের মানুষ ঘরে ঘরে বসে পাবে। তিনি বলেন, শুধু রাজধানী বা শহরের মানুষ সুখে থাকবে তা নয়। প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি গ্রামকে শহর হিসেবে উন্নীত করা হবে। যেন গ্রামের মানুষ ঘরে বসেই শহরের সুযোগ-সুবিধা পায়। 

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, প্রায় সব শ্রেণিপেশার মানুষের চাহিদা ও মতামতসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে সেসবের আলোকে তৈরি করা হয়েছে নির্বাচনী ইশতেহার। টানা তৃতীয়বারের মতো বিজয়ের লক্ষ্যে চমকপ্রদক ও বিশ্বাসযোগ্য ইশতেহার উপহার দেয়াই নীতিনির্ধারকদের মূল লক্ষ্য।

তাই দলটি আবার সরকার গঠন করে কোন কোন উদ্যোগ ও কর্মসূচি কত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারবে বলে মনে করছে, সে বিষয়ের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও সময়েরও উল্লেখ থাকছে কয়েকটি বিভাগে। সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলে যে উন্নয়ন অব্যাহত থাকে, এ বিষয়ে ইশতেহারে স্পষ্ট বক্তব্য থাকছে। দেশের মানুষকে স্বপ্ন দেখানোর মতো বিষয়ও এতে প্রাধান্য পাচ্ছে। 

সূত্র মতে, ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎসুবিধা পৌঁছে দেয়া, ২০৪১ সালের আগেই দেশকে আধুনিক, উন্নত ও মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার কথা থাকছে ইশতেহারে। প্রতিশ্রুত দেশ গড়তে করণীয় সম্পর্কে দিকনিদের্শনা ও একটি গাইডলাইনও থাকবে। নির্ধারিত ২০৪১ সালকে টার্গেট করে আধুনিক শিক্ষা বিশেষ করে জেলায় জেলায় আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রশাসন ও সেবা খাতের বিকেন্দ্রীকরণও গুরুত্ব পাচ্ছে।

থাকছে দেশের জন্য আগামী ১০০ বছরের কর্মপরিকল্পনা। ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে এর একটি রূপকল্পও তুলে ধরা হবে। কৃষিক্ষেত্র ও শিল্পায়নের উন্নয়ন কিভাবে করা যায় তার বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। ইশতেহার প্রণয়নের সাথে জড়িত একাধিক সূত্র জানায়, এবারের বিশেষ অঙ্গীকার হবে দেশজুড়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি। এবার ভোটদাতার তালিকায় যোগ হচ্ছে দেড় কোটি তরুণ। বিশেষ লক্ষ রাখা হচ্ছে তরুণসমাজকে আকৃষ্ট করার বিষয়ে। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে ও নতুন সময়ের ঝুঁকি মোকাবেলার সমাধানপথও থাকছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কিভাবে প্রযুক্তিমনস্ক ও দেশের সম্পদে পরিণত করা যায়, এসব বিষয়ে দিকনির্দেশনা যোগ হচ্ছে ইশতেহারে। 

তথ্যপ্রযুক্তির সম্প্রসারণ, আইসিটি ও মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের ঘোষণা রাখা হচ্ছে। যুবসমাজকে প্রশিক্ষিত করে ও কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় তাদের সম্পৃক্ত করার বিষয়গুলোও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া তরুণদের কর্মসংস্থান ও নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিশেষ ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থার কথাও থাকছে ইশতেহারে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নীতিগত অবস্থানের কথা তুলে ধরা হবে।

মাদকমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকারও থাকছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলের স্পষ্ট অবস্থানের কথা তুলে ধরা হবে। উন্নয়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করতে দশটি খাতকে বিশেষ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। অগ্রাধিকার পাচ্ছে গণতন্ত্র, কার্যকর সংসদ ও গণমুখী দক্ষ পুলিশ প্রশাসন। সমানভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে খাদ্য ও পুষ্টিনিরাপত্তা। যোগ হতে পারে ‘ব্লু ইকোনমি’র বিষয়টি। 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ইশতেহার উপকমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি নয়া দিগন্তকে বলেন, ইশতেহারের কাজ শেষ হয়েছে। ১৮ তারিখ প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবেন। আপনারা তখনই জানতে পারবেন।

এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এই নির্বাচনে ইশতেহারের মূল লক্ষ্য হবে উন্নয়নের মহাসড়কের গতিকে আরো বেগবান করা। ইশতেহারে প্রধান লক্ষ্য হবে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিকে আরো বৃদ্ধি করা। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা।

ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আগামীতে আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ হবে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। জনগণ হিতৈষী, জনদরদি, জনগণবান্ধব কী ধরনের পুলিশবাহিনী হবে, সেটা আমরা বলার চেষ্টা করব। তরুণসমাজের বিষয়ে সাবেক মন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, আগামী দিনের তরুণসমাজকে নিয়ে আমরা কী ভাবছি, এই তরুণসমাজকে উন্নয়নের সাথে, দেশ পরিচালনার সাথে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, সেটা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement