২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাবিতে গেস্টরুম বিচার, শিক্ষার্থীকে মেরে অজ্ঞান করল ছাত্রলীগ

বিজয় একাত্তর হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। - ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের প্রথম ব‌র্ষের এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করে অজ্ঞান ক‌রে ফেলার অভিযোগ উঠেছে হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। প‌রে ভুক্ত‌ভোগী শিক্ষার্থী জ্ঞান হা‌রি‌য়ে ফেল‌লে অভিযুক্তরা তা‌কে রে‌খে ঘটনাস্থল থে‌কে পা‌লি‌য়ে যায়। বুধবার দিবাগত রা‌তে হ‌লের গেস্টরু‌মে (ছাত্রনেতা‌দের বিচারালয়) এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী। আর মারধরকারী হল শাখা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় আহমেদ ও ইসলামিক স্টাডিজ ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী সাইদুল ইসলাম। তারা দু’জনই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারী বলে জানা যায়। আসাদও ছাত্রলী‌গের একজন স‌ক্রিয় কর্মী এবং গোলাম রাব্বানীর অনুসারী।

হল সূত্র জানায়, বুধবার ২১ আগস্ট গ্রে‌নেড হামলা মামলার রায়‌কে উপল‌ক্ষে ক‌রে কর্মসূচী পালন করে ছাত্রলীগ। বোনের শশুর অসুস্থ্য থাকায় আসাদ তাকে দেখতে যাওয়ার জন্য হ‌লের ক‌থিত বড়ভাইদের কা‌ছে ছু‌টি প্রার্থনা করে। কিন্তু তাকে ছুটি না দিয়ে উল্টো ধমক দেয় এবং গেস্টরুমে দেখে নেয়ার হুমকি দেয় ছাত্রলীগ কর্মী হৃদয় আহমেদ ও সাইদুল ইসলাম।

সারাদিন কর্মসূচী পালন করার পর বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় হলের নিচতলার গেস্টরুমে আসাদকে ডাকেন অভিযুক্ত হৃদয় ও সাইদুল। এসময় হৃদয় আগেরদিন (মঙ্গলবার) গেস্টরুমে না থাকার অজুহাতে প্রথমে আসাদের পেটে ও কোমরে লাথি মারেন এবং অন্য ইয়ারমেটদের লোহার রড ও স্টাম্প নিয়ে আসতে বলেন। হৃদয়ের মারধরে আসাদ নিচে পড়ে যায়, এরপর অভিযুক্ত সাইদুল তার মাথায়, মুখে ও হাতে ঘুষি মারতে থাকেন। বেধড়ক পিটুনিতে মারাত্মক আহত হয়ে পড়লে তাকে হলের মাঠে নিয়ে আসেন অভিযুক্ত হৃদয় ও আসাদ।

পরে মাঠে আসাদ অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে সে অবস্থায় মাঠে রেখে পালিয়ে যায় হৃদয় ও সাইদুল । পরে রাত দু’টায় আসাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায় তার বন্ধুরা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান আসাদ শুক্রবার রা‌তে নয়া দিগন্ত‌কে বলেন, পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা ও টেনশনের কারণে আমি মঙ্গলবার গেস্টরুমে আসতে পারিনি। বুধবার প্রোগ্রামে গেলে তারা আমাকে আগেরদিন গেস্টরুমে না আসার কারণ জিজ্ঞেস করে এবং রাতে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। বুধবার রাতে তারা আমাকে গেস্টরুমে ডাকে এবং আমার বাবা-মা নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে। পরে হৃদয় ও সাইদুল আমাকে গেস্টরুমে বেপরোয়াভাবে লাথি মারে আমার মুখ, ঘাড়ে ও মাথায় কিল ঘুষি দেয়। পরে আমাকে হলের মাঠে নিয়ে আসলে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাই।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মানসিক ও শারীরীকভাবে নির্যাতনের বিষয়ে বিচার চেয়ে হল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি মারধরকারীদের ভয়ে হলের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় থাকছেন। আর অভিযুক্ত হৃদয় ও সাইদুল থাক‌ছেন হ‌লেই।

এ বিষয়ে কথা বলতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে কল দিলেও তিনি কল ধরেননি।

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এ. জে এম শফিউল আলম ভূইয়া এ বিষয়ে বলেন, ওই শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অপরাধকারীদের কোন মাফ নাই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, বিষয়টি আমি অবহিত আছি। হল প্রশাসনের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।

 

আরো পড়ুন: ঢাবির ঘ-ইউনিটে ভতি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, ১২ অক্টোবর ২০১৮


ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষা শুরুর অন্তত পৌনে ১ ঘণ্টা আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উত্তরসহ হাতে লেখা প্রশ্নপত্র পাওয়া গেছে। এর সাথে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নের হুবহু মিল পাওয়া যায়। তবে প্রশ্নফাঁসের এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পূর্বনির্ধারিত সময়ানুযায়ী শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে পরীক্ষা শুরুর প্রায় পৌনে ১ ঘণ্টা আগে অর্থাৎ, বেলা ৯টা ১৭ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত এক সাংবাদিকের কাছে হাতে লেখা প্রশ্ন-উত্তরের অনেকগুলো (১৪) ছবি পাঠানো হয়। পরীক্ষা শুরুর অন্তত ১ ঘণ্ট আগে অনেক ভর্তিচ্ছুর হোয়াটস অ্যাপ, ইমো, ফেসবুক মেসেঞ্জারসহ অন্যান্য মাধ্যমে সাদা কাগজে লেখা এই প্রশ্ন-উত্তর আসে। এগুলো পড়ে তারা পরীক্ষার হলে গেছেন বলেও জানা গেছে।


সকাল ১০টা ৩০মিনিটে ১৪টি কাগজে হাতেলেখা প্রশ্ন সাংবাদিকদের কাছে আসলে তারা সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে থাকা সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ সোহেল রানাকে দেখান। পরে ভর্তিচ্ছুরা পরীক্ষা দিয়ে বের হলে ওই হাতে লেখা প্রশ্নের সঙ্গে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার প্রশ্নের মিলিয়ে দেখা হলে কাগজে লেখা প্রশ্নের সাথে শতভাগ মিল পাওয়া যায়। তবে একে প্রশ্নফাঁস না বলে ডিজিটাল জালিয়াতি বলে উল্লেখ করেন প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী। সেই সাথে কোনো বিশ্বাসযোগ্য সূত্র হতে প্রশ্নফাঁসের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানান তিনি।

এদিকে, সাংবাদিকদের কাছে আসা প্রশ্ন যাচাই করে দেখা গেছে কাগজে লেখা মোট ৭২ প্রশ্নের সবগুলোই অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের সাথে হুবহু মিলে গেছে। এর মধ্যে বাংলা অংশে ১৯টি, ইংরেজি অংশে ১৭টি, সাধারণ জ্ঞান অংশে ৩৬টিসহ (বাংলাদেশ বিষয়াবলি ১৬ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ২০) মোট ৭২ টি প্রশ্ন-উত্তর পাওয়া যায়। ঘ ইউনিটে বাংলা ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান নিয়ে মোট ১০০টি প্রশ্ন থাকে। প্রতি প্রশ্নের মান ১.২০।

অবগত করণের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, আমরা ওখানে ছিলাম। এক সাংবাদিকের সাথে ভাল পরিচিতি ছিলো পরে সে আমাকে ওগুলো দেখায়। দেখানো প্রশ্নের সাথে মিল আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু মিল আছে শুনেছি। তবে আমি পুরোটা দেখিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর নয়া দিগন্তকে বলেন, এর আগেও হাতে লেখা প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের ব্যাপার লক্ষ্য করা গেছে। সে দিক থেকে এ অভিযোগটা আরো খুঁটিয়ে দেখতে হবে। তবে এ বছর প্রশ্নফাঁস হয়েছে এমনটা বলা কঠিন।

অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কোনো নির্ভরশীল সূত্র থেকে প্রশ্নফাঁসের তথ্য নিশ্চিত হতে পারিনি। কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছি। প্রশ্নফাঁসের কোন সুযোগ নেই। তবে যে বিষয়টি বলা হচ্ছে সেটি প্রশ্নফাঁস নয়, ডিজিটাল জালিয়াতি। বিষয়টি প্রমাণিত হলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সেটি পরের বিষয় বলে মন্তব্য করেন।

এই বিষয়ে ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলে আমি কিছু জানি না। আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। যে সূত্র দাবি করছে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সে সূত্র আমাদের জানার অধিকার আছে। তাহলে সুষ্ঠু তদন্ত হবে এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সে পথে এগোবে। এসময় তিনি বলেন, আমাদের এখন নৈতিক দায়িত্ব রেজাল্ট তৈরি করা আমরা সে দিকে এগোচ্ছি।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, বলেন সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সাংবাদিকদের সাথে কথা হয়েছে তারা কিছুই বলেনি। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে কারা যেন অভিযোগ উত্থাপন করেছে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি উল্লেখ করে ভিসি বলেন, আমি ডিনকে বলেছি যারা বিষয়টি উত্থাপন করেছে সে নামগুলো গোয়েন্দাদের দিয়ে দাও। ওখান থেকে আসল তথ্যটা বেরিয়ে আসুক। গোড়ায় প্রবেশ করা যাবে।

এর আগেও গত বছরও ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটাকে ডিজিটাল জালিয়াতি বলে আখ্যায়িত করেছিল। তুমুল সমালোচনার মুখে তারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে এখনো এ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।

এর আগে ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের মোট ৮১টি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ বছর ঘ-ইউনিটে ১ হাজার ৬১৫টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞানে ১হাজার ১৫২টি, ব্যবসায় শিক্ষায় ৪১০টি এবং মানবিকে ৫৩টি আসন রয়েছে। ঘ-ইউনিটে ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর সংখ্যা ৯৫ হাজার ৩৪১জন। সে হিসেবে প্রতি আসনের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা ৫৯ জন।

ভর্তি পরীক্ষার বিস্তারিত তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের admission.eis.du.ac.bd ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement
বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল