১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

যেখানে কোটা সংস্কারের দাবি সেখানেই ছাত্রলীগ

যেখানে কোটা সংস্কারের দাবি সেখানেই ছাত্রলীগ - সংগৃহীত

কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আন্দোলনকারীদের মিছিলের সময় পাল্টা মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে এক সাথে পাশাপাশি দুুটি মিছিল দেখা যায়। যেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের স্লোগান সেখানেই ছাত্রলীগের পাল্টা স্লোগান। আন্দোলনকারীদের সাথে তাল মিলিয়ে থামলে থামে, হাটলে হাটে ছাত্রলীগের মিছিল। যেখানে আন্দোলনকারীরা সেখানেই পেছন পেছন যায় ছাত্রলীগের মিছিলটি। এ সময় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করে। পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে পাল্টা মিছিল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ পরে চেষ্টায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ১১টায় কোটা আন্দোলনকারীরা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সরকারের সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে পাল্টা মিছিল বের করেন। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে আন্দোলনকারীরা। সকাল ১১টায় বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের সামনে তারা জড়ো হন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ।

কোটা আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরির সামনে গেলে ছাত্রলীগের মিছিলও ওদিকে যায়। পরে কোটা আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এসে স্লোগান দিতে থাকলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাদের পাশে এসে স্লোগান দেয়। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্ক বিরাজ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে। এ অবস্থায় কোটা আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্যের দিকে চলে আসে। সেখানে তাদের পিছু নেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মিছিল।

একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের মিছিলের সামনে রিকসা জড়ো করে মিছিল আটকে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এতে দুপক্ষের মধ্যে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা রিকসা সরিয়ে দিয়ে ভিসি চত্বরের দিকে চলে যায়। তাদের অনুসরণ করে ভিসি চত্বরের দিকে আগায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মিছিলটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে করা ছাত্রলীগের মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেখা যায়।

এসময় তাদের সাথে ছিলো- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, স্যার এ.এফ রহমান হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলসহ বিভিন্ন ও ইনস্টিটিউটের পদধারী নেতাকর্মীদের দেখা যায়। পরে দুপক্ষই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে মিছিল করে ও স্লোগান দিতে থাকে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে দুটি মিছিলকে পাশাপাশি স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে কোটা আন্দোলনকারীরা বলেন, পাঁচ দফার আলোকে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি, নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার বিচার ও তাদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা আছে, তা প্রত্যাহার করার তিন দফা দাবি নিয়ে পূর্ব ঘোষণানুযায়ী তারা বিক্ষোভে নেমেছেন। অপর দিকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোটা না রাখার সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে তাদের এ মিছিল। তবে তা পূর্ব ঘোষিত নয় বলে জানান তারা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ‘আওয়ামী লীগের সরকার বারবার দরকার’ ‘শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশ ধন্য’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলের সামনে থেকে কোটা আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। তারা বলেন, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়েছে। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচ দফার ভিত্তিতে আমরা ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। কিন্তু আমাদের ওপর বড় বড় ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে। শহীদ মিনারে আমাদের ওপর হামলা করে স্বাধীনতাকে অবমাননা করা হয়েছে। আমরা এখন তিন দফার ভিত্তিতে কর্মসূচি পালন করছি। সরকার দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

এদিকে, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচীর এক পর্যায়ে ছাত্রলীগের মিছিলটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির দিকে চলে গেলে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান নিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে কোটা আন্দোলনকারীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, বিন ইয়ামিন মোল্লা, মশিউর রহমান প্রমুখ।

সমাবেশ বক্তারা কোটা সংস্কারের দ্রুত প্রজ্ঞাপনের দাবি জানান। একইসাথে ৪০তম বিসিএসের সার্কুলার বাতিল, সোনালী ব্যাংকের বিশেষ নিয়োগ বাতিলসহ নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানান এবং তিনদফা দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। আন্দোলন করতে গিয়ে তারা ছাত্রলীগের কর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেটির বিচার হয়নি। তার বিচার দাবি করেন তারা।

সমাবেশে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, কোটার যৌক্তিক সংস্কার চাই। কোটা সংস্কারের সুপারিশে যেমন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে, তেমনি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। এ ছাড়া ৪০তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে। তাদের পরবর্তী কমসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসান আল মামুন জানান, সেটি তারা পরে জানাবেন।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন দেশব্যপী ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিল হবে বলে জানান। এরপর কোটা সংস্কার, বাতিল বা পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করা হয়।

নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা না রাখার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত কমিটি। এ-সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছে কমিটি। কমিটি নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের সব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছে।

উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের এই কোটা সংস্কারের দাবিতে করা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকার শাহবাগ থানায় চারটি ও রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ককে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে তাদের অনেকেই মুক্তি পেয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement