বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থার খুবই শোচনীয় অবস্থা। নির্বাচনী ব্যবস্থার এমন অধঃপতন হঠাৎ করে এক দিনে হয়নি। গত এক দশক ধরে নির্বাচন কমিশনের ধারাবাহিক ব্যর্থতা এমন দুরবস্থার জন্য দায়ী। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত শক্তিশালী একটি প্রতিষ্ঠান। মানুষের স্বাধীন ভোটাধিকার চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় সব ক্ষমতা কমিশনের হাতে অর্পণ করেছে প্রজাতন্ত্র। দুঃখজনক হচ্ছে নির্বাচন কমিশন সে ক্ষমতার স্বাধীন চর্চা করার প্রচেষ্টা চালায়নি। জনসাধারণ এখন দেখতে পাচ্ছে প্রতিনিধি বাছাই প্রক্রিয়ায় তাদের ভোট কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। অর্থহীন ভোটের আয়োজনে মানুষ এখন একেবারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। সদ্যসমাপ্ত ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটাররা কেন্দ্রমুখী হয়নি। নির্বাচন কমিশনের সার্বিক আয়োজন ছিল যথারীতি। কিন্তু সেটি শেষ পর্যন্ত অনেকটা বেকার বলতে হবে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা বদলের একমাত্র উপায় নির্বাচন। এ অবস্থায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগটি আর রইল না।
গত শনিবার সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্মেলনে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বাংলাদেশে নির্বাচনী ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। নির্বাচনী কর্মকাণ্ড কতটা অবিবেচনাপ্রসূত ছেলে খেলায় পরিণত হয়েছে তাদের বক্তব্যে সেটি প্রকাশ পেয়েছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৮১ শতাংশ আর ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশের কম। অথচ আমরা জানি, স্থানীয় নির্বাচনে ভোটের হার বেশি হয়।’ দেশে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন এবং সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি নির্বাচনের চিত্রটি সংবাদমাধ্যমে সবাই দেখতে পেয়েছে। উভয় নির্বাচনের প্রায় একই চিত্র ছিল। ভোটকেন্দ্র ছিল ভোটারশূন্য। যদিও কমিশন উভয় নির্বাচনে তার মহা আয়োজন নিয়ে বিপুল উৎসাহে কাজ করেছে। এ জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে বাজেট সেটিও বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের অধিক হারে উপস্থিতি, নির্বাচনী কর্মকর্তাদের বেশি হারে প্রশিক্ষণ দান, ভোটকেন্দ্রে সাজসরঞ্জামসহ উপস্থিতি থাকা, এমনকি ব্যয়বহুল ইলেকট্রনিক মেশিন ইভিএম ব্যবহারে তাদের আগ্রহের কমতি ছিল না। কিন্তু একটি অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যে শর্তগুলো প্রয়োজন সেগুলো আঞ্জাম দেয়নি কমিশন।
প্রচার প্রচারণায় সব দলের প্রার্থীদের সমান সুযোগ দেয়ার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি কমিশন। বিরোধীদের ওপর ভয়ভীতি প্রয়োগ ও হামলা মামলার ঘটনার ক্ষেত্রে কমিশন ছিল চুপ। ফলে সব সময় নির্বাচনী মাঠ একচেটিয়া সরকারি দলের দখলে থেকেছে। নির্বাচনের দিন ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং কেন্দ্র থেকে প্রতিযোগী প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয়া একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাধারণ নাগরিকরা তাই অবাধে ভোট দিতে পারে না। ভোটাররা নির্ধিদ্বায় ভয়হীন চিত্তে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারে না। এ ছাড়াও ভোট বাক্সে যে ভোট পড়েছে তার গণনা নিয়ে সন্দেহ দূর করেনি কমিশন। মোট কথা হচ্ছে, মানুষের মতামতের সম্মান মর্যাদা প্রতিনিয়ত লুণ্ঠিত হয়েছে। আর সবক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন তাদের ক্ষমতা থাকার পরও এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। শেষ পর্যন্ত তাই ভোটের উৎসব পরিণত হয়েছে গণ-অনাস্থার দিনে। মানুষ আর ভোটকেন্দ্রে আসছে না।
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন জনবলে বিশাল একটি প্রতিষ্ঠান। কেবলমাত্র এক দিনের ভোট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য তাদের বিশাল এ লটবহর। তাদের রয়েছে একটি বড় বাজেট। প্রত্যেকটি নির্বাচন আয়োজনের জন্য তৈরি হয় আলাদা বাজেট। সম্প্রতি সময় কমিশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দেদার অর্থ খরচ নিয়ে কথা উঠেছে। ভোটকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাণ বলতে হবে। সেই ভোটব্যবস্থাই যদি না থাকে তাহলে এ বিশাল নির্বাচন কমিশনকে পুষে জাতির কী লাভ? এই প্রশ্ন জাতির সামনে রয়েছে। যাদের দিয়ে কাজ হয় না, জাতি কেন তাদের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় করবে? জনাসাধারণের মনে এখন এ প্রশ্ন। নির্বাচন কমিশন এর কী জবাব দেবে?
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা