আওয়ামী লীগের বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে প্রতিশ্রুতি ছিল দেশের মানুষের আয়বৈষম্যের অবসান ঘটানো। কিন্তু বাস্তবে বারবার ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার সে প্রতিশ্রুতি পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। যেখানে জনগণের আয়বৈষম্য অবসানের প্রতিশ্রুতি ছিল, সেখানে বরং উল্টো আয়বৈষম্য বেড়ে তা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। উচ্চ প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি অর্জিত হলেও দেশের গরিব মানুষ এই প্রবৃদ্ধির সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সরকারের ভুল নীতির কারণে গরিব আরো গরিব হচ্ছে এবং ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, বিত্তশালীরা সংযোগ রক্ষা করে চলছে ক্ষমতাসীন দলের সাথে। এরা সরকারের সাথে সুসম্পর্ক রেখে কয়েক বছর ধরে স্থিতিশীলভাবে ৬ শতাংশের ওপরে থাকা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হারের সুফলের বেশির ভাগই নিয়ে যাচ্ছে তাদের পকেটে। এর ফলে দেশের আয়ের বৈষম্য আরো বেড়ে চলেছে। এরা ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে সমাজের সবস্তরে ভোগ থেকে রাজনীতি বা রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য ব্যবহার করে নিজেদের জন্য সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন। অথচ দেশের অর্থনীতির উঁচু হারের প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রধান অবদান রয়েছে কৃষকদের, এরা নিশ্চিত করেছে খাদ্য নিরাপত্তা। রফতানিমুখী তৈরী পোশাক শিল্প-শ্রমিক ও বিদেশে কর্মরত অনাবাসী বাংলাদেশীরা গায়ে-গতরে খেটে দেশের প্রবৃদ্ধি হার বাড়ানোয় মুখ্য অবদান রাখছে। সেবা খাতে মধ্যবিত্তরা এ খাতের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। কিন্তু বিদ্যমান বৈষম্যমূলক সম্পদের বণ্টনের কারণে এরা এ প্রবৃদ্ধির সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
‘দারিদ্র্য ও বৈষম্যের অবসান ঘটানো’ ছিল আওয়ামী লীগের অন্যতম এক নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ২০০৮ সালেও এ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল দলটির। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে সব বিরোধী দল নির্বাচন বয়কট করে। সে নির্বাচনেও বিএনপিসহ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ইশতেহারে যে অর্থনৈতিক নীতি অবলম্বনের কথা বলে, তার সার কথা ছিল ২০০৯ সাল থেকে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক প্রধান এমএ তসলিম বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০১৬ সালের খানা জরিপের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ এর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির অনেকগুলো পূরণেই ব্যর্থ হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, গড় আয়ের জনসংখ্যা ২ শতাংশ কমেছে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে এবং প্রতিটি পরিবারের প্রকৃত আয় কমেছে ১ শতাংশ। তা ছাড়া পরিবারের আয় ও খরচের জরিপে দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। আওয়ামী লীগে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ২০১০ সালে গিনি সহগে যেখানে আয়বৈষম্য ছিল ০.৪৫৮, সেখানে ২০১৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ০.৪৮৩। এর অর্থ, ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে এবং গরিবেরা আরো গরিব হচ্ছে।
২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে শীর্ষ ১০ শতাংশ পরিবারের হাতে রয়েছে জাতীয় আয়ের ৩৮.১৬ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ছিল ৩৫.১৬ শতাংশ। অপর দিকে নিচের দিকের ১০ শতাংশ পরিবারের কাছে রয়েছে মোট জাতীয় আয়ের মাত্র ১.০১ শতাংশ, যা ২০১০ সালে ছিল ২ শতাংশ।
এই আয়বৈষম্য সত্যিই দুঃখজনক। দ্রুত এর এই গতিপ্রবণতা উল্টো দিকে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার শুধু উন্নয়ন উন্নয়ন জপছে সারাক্ষণ। কিন্তু জনগণের আয়ের বৈষম্য যেখানে ক্রমেই বাড়ছে সেখানে সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আশা করি, সরকার তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণে এনে এ জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা