২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় ভোলার উপকূলের মানুষ

আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায় ভোলার উপকূলের মানুষ - নয়া দিগন্ত

আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা আর নিরাপদ আশ্রয়- এ নিয়েই দিনভর ব্যস্ত ছিলেন ভোলার উপকূলের মানুষ। সময় যত বাড়ছে ঠিত ততই যেন আরো বেশী ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। সিডর, আইলার, রেশমি আর কোমেন’র পর এবার ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ উপকূলের বাসিন্দাদের আরো বেশী ভাবিয়ে তুলেছে।

এদিকে শুক্রবার দিনের শুরু থেকেই থেমে থেমে ভারী বর্ষণ আর দমকা হওয়া অব্যাহত ছিল ভোলায়। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো জেলায় বৃষ্টিপাত ২৩.২ মিলিমিটার। দিনের তাপমাত্র ছিলো ৩৩.২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রেডক্রিসেন্ট ও সিপিপির সেচ্ছাসেবী টিম উপকূলের বাসিন্দাদের কাছে সতর্কবার্তা ও আশ্রয় কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানিয়ে আসছে।

বিভিন্ন এলাকা থেকে এখনো মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ভীড় জমাচ্ছেন। জেলার জনবসতিপূর্ণ ২৫টি চরের অন্তত ৩৬ হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন।

ঝুঁকিতে বাঁধ : ভোলার চার উপজেলার রয়েছে ২৫ কিলোমিটার বাঁধ। এরমধ্যে এক হাজার ৫০ মিটার বাঁধ যেকোন মুহূর্তে ধ্বসে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পাউবো বলছে, অতিমাত্রায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে পুরো ২৫ কিলোমিটার বাধ ধ্বসে যেকোন সময় প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে হুমকির মুখে পড়বে জনজীবন। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের মধ্যে ভোলা পাউবো ডিভিশন-২ এর তজুমদ্দিন উপজেলার ১১ কিলোমিটার, লালমোহন উপজেলার ৩ কিলোমিটার, মনপুরা উপজেলার ১০ কিলোমিটার এবং চরফ্যাশন উপজেলার ৪ কিলোমিটার রয়েছে।

এছাড়াও অতিমাত্রায় ঝুঁকি বা দুর্বল অবস্থার মধ্যে রয়েছে তজুমদ্দিনের কেয়ামুলা পয়েন্টে ৫০০ মিটার, মনপুরায় ৫’শ মিটার ও লালমোহনের বদরপুর পয়েন্টে ৫০ মিটার বাঁধ।

বিপদসীমায় নদ-নদী : শুক্রবার দুপুর থেকে মেঘনার পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্লাবিত হচ্ছে। মেঘনার পানি ১২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু নিচু এলাকা। তবে বেশীরভাগ এলাকা বাধের বাইরের। ফণীর প্রভাবে চরফ্যাশনের ঢালচর, চর পাতিলাসহ বেশ কিছু নিচু এলাকায় ২/৩ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবী : ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় উপকূলীয় জেলা ভোলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঝড়টি মোকাবেলায় জেলার সাত উপজেলায় মাঠে রয়েছে ১৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবী। যাদের মধ্যে সিপিপির ১০ হাজার ২০০ ও রেডক্রিসেন্টের দেড় হাজার কর্মী রয়েছেন। এসব কর্মীরা দুর্গম এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছেন। এছাড়াও সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরাও কাজ করছেন।

প্রশাসনের প্রস্তুতি : ৮টি কন্ট্রোল রুম, ৯২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ৬৫৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে দেয়ার পাশাপাশি চরের বাসিন্দারের আশ্রয় কেন্দ্র আনা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিবন্দ্ধীদের জন্য কাজ করছে ৮০ সদস্যের টিম গঠন। জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও আনসার বানিহী প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার ও সুপেয় পানি। প্রচার-প্রচারণা ও মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে।

নৌপথ বন্ধ : জেলার অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার নৌপথে সকল ধরণের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোলা-ঢাকা, ভোলা-বরিশাল, ফেরী ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় কিছুটা বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন যাত্রীরা।

অনিরাপদ গবাদি পশু : মানুষ জন নিরাপদ আশ্রয়ে গেলেও গবাদি পশু পড়েছে ঝুঁকির মধ্যে। এসব পশুর নিরাপদ আবাসস্থল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পশুর বাতান ও মালিকরা। কারণ স্থান সংকুলন না থাকায় সব গবাদি পশুর আশ্রয় মিলছে না মাটির কিল্লাগুলোতে।

জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ জানায়, জেলার ৬২টি চরে সর্বমোট ৩৯টি মাটির কিল্লা থাকলেও জেলায় গরু রয়েছে ৫ লাখ ৯৫ হাজার, মহিষ ৭৮ হাজার, ছাগল এক লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ এবং ভেড়া রয়েছে ২১ হাজার। এসব কিল্লায় মাত্র এক লাখ ২০ হাজার টি গবাদি পশু রাখার জায়গা থাকলেও বাকিগুলো অনিরাপদ।

ভোলার জেলা প্রশাসক মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবেলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement