২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নোবেল ভাবনা মুরাকামির নতুন উপন্যাস

-

এই লেখা যখন পাঠক পড়বেন, ততক্ষণে জানা হয়ে যাবে এ বছরের সাহিত্যে দু’জন নোবেল বিজয়ীর নাম। সাংবাদিকরা ছুটবেন তাদের বাড়ি বাড়ি। নেবেন সাক্ষাৎকার না হোক দু’লাইন বক্তব্য তার অনুভূতি সম্পর্কে। জবাবে চিরাচরিতভাবে তারা বলবেন, এই পুরস্কার পেয়ে আমি খুশি। হয়তো আরো বলবেন, ভাবতেই পারিনি আমি এটা পাবো। এমনো হয়তো হবে, লেখককে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি থাকবেন কোনো বারে বা পানশালায়। আর এবার দু’জন কেন? সে তো সবার জানা। গেলবার এক যৌন কেলেঙ্কারির সূত্র ধরে ক্ষেপেছিল নোবেল কমিটি। গতবারই পুরস্কারই দেননি তার। সেটা এবার দেয়া হলো। নোবেলের বিষয়ে আজ এর বেশি যাওয়ার সুযোগ নেই।
বুকারসহ অন্যান্য পুরস্কারের ক্ষেত্রে লংলিস্ট শর্টলিস্ট থাকে। তাই আগে ভাগে ধারণা করা যায় কে পাচ্ছেন পুরস্কার। যেমন ৬ জনের শর্টলিস্ট থেকে ১৪ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে বুকার জয়ীর নাম। হ্যাঁ পাঠক, বুকার পুরস্কার, গেলবারের মতো ম্যান বুকার নয়। কারণ বুকার আবার তার স্বনামে ফিরেছে গত জুনে। বেরিয়ে গেছে আগের স্পন্সর ম্যান গ্রুপ পিএলসি। যে কারণে এতদিন ছিল ম্যান বুকার।
যা হোক, আবার নোবেলের কথায় আসি। জাপানের বিখ্যাত লেখক হারুকি মুরাকামি এবারো কি বাদের তালিকায় থাকবেন, না ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে আমরা জানি না। সুদানের এডোনিস বা আফ্রিকা থেকে ইসমাইল কাদারে তালিকায় উঠে আসবেন কিনা জানি না। কারণ আগেই বলেছি, নোবেল সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে জল্পনা কল্পনা করা যায়, ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। আর যা ঘটেছে তা সবার জানা হয়ে গেছে। সে প্রসঙ্গ থাক, আমরা মুরাকামির নতুন বই নিয়ে আলোচনা করি।
বছরের শুরুতে মুরাকামির গল্প সঙ্কলন ‘বার্থ ডে গার্ল’ পেপারব্যাক ও ই-বুক এডিশন বের হয়েছে। এটার প্রকাশ হয়েছে মুরাকামির ৭০তম জন্মদিন উপলক্ষে। মুরাকামিকে বলা হয় জাপানের টপমোস্ট বেস্ট সেলার লেখক হিসেবে। কারণ তার উপন্যাস প্রকাশ হলে লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়ে যায়। বইয়ের দোকানের সামনে ক্রেতা পাঠকদের লাইন পড়ে যায়।
তার সর্বশেষ উপন্যাস ‘কিলিং কমেন্ডেটর’ প্রকাশের পর এ পর্যন্ত লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। এটি অনূদিত হয়েছে ইংরেজিসহ বহু ভাষায়। এর জাপানি নাম ‘কিশিদানচো গারিশি’।
মুরাকামির বইয়ে সেক্সের মিশেল থাকে এটা একটা অভিযোগ। তার পক্ষের সাহিত্য সমালোচকরা এটাকে দোষ হিসেবে দেখতে নারাজ। তাদের ভাষায় এটা ‘এডাল্ট রিডারশিপের’ প্রকাশ। বাংলায় এটাকে কি বলা যায়? প্রাপ্তবয়স্কদের পাঠকরুচি বলা যেতে পারে। যেমনটা রিডার ডাইজেস্ট ম্যাগাজিন করে থাকে। তাদের গল্প ফিচার এ সংখ্যার বই, দুঃসাহসিক কাহিনী এমনকি কৌতুকের বিষয়টা থাকে। আর বর্তমানের অনেক লেখক লেখিকাই সেক্সকে উপজীব্য করেন। একা মুরাকামিকে দোষ দিয়ে কী লাভ।
তবে মুরাকামির এই উপন্যাস সাম্প্রতিককালে হংকং বইমেলার বিরূপ অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। সেখানে বইটি সেন্সরের মুখে পড়ে। একটি ট্রাইব্যুনাল এটাকে ‘ইনডিসেন্ট’ বা অসুন্দর আখ্যায়িত করে বইটির চীনা ভাষার সংস্করণ মেলার তাক থেকে নামিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়। তারা বইটিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর বই বলে উল্লেখ করে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট পত্রিকা বইটিকে দ্বিতীয় শ্রেণীর ও ‘ইনডিসেন্ট ম্যাটেরিয়াল’ অর্থাৎ অসুন্দর বিষয়াবলিতে ভরা বলে বর্ণনা করে। সোজা কথায় একে অশ্লীল বলে উল্লেখ করা হয়।
এরপরও জাপানি একটি পত্রিকার একজন কন্ট্রিবিউটিং রাইটার ইয়াইন ম্যালোনি মনে করেন, এবার যেহেতু দু’টি নোবেল পুরস্কার, এর একটি মুরাকামি পেয়ে যেতে পারেন মর্মে বেশ জল্পনা কল্পনা চলছে। তিনি বার্থ ডে গার্ল বইয়ের সাহিত্যমূল্য বিবেচনা করতে গিয়ে সম্প্রতি এ মন্তব্য করেন। বাস্তবে কী হয়েছে তা তো পাঠকদের এতক্ষণে জানা হয়ে গেছে।
‘কিলিং কমেন্ডেটর’ উপন্যাসকে বলা হয়ে থাকে হিস্ট্রিক্যাল ফিকশন, বাংলায় ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস। এর প্রধান চরিত্র একজন চিত্রশিল্পী। যিনি দূরে কোথাও যাওয়ার সময় মাঝপথে একটি হোটেলে ডিনার করতে গিয়ে একজন নার্ভাস বা ভয়ার্ত মহিলার সাক্ষাৎ পান, যিনি কারো ভয়ে পালাচ্ছিলেন। তিনি যার ভয়ে পালাচ্ছিলেন সেই লোক একটু আগেই তারা যখন খাবার টেবিলে বসে খাচ্ছিল, তার নিকটেই বসেছিল।
মেয়েটির আকর্ষণে অল্প সময়ে তার সাথে চিত্রশিল্পীর মধ্যে ভাব জমে ওঠে এবং তারা একটি হোটেলে রাত যাপন করে। সেখানে তারা ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করে। যার পুরো বিবরণ বইয়ে আছে। এটাই অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট হয়, একে নিয়ে হয় সমালোচনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে মহিলার দেখা আর পায় না চিত্রশিল্পী। ডিনারে গিয়ে সে আবার সেই লোকটাকে দেখতে পায়, যে সেই মহিলার অদূরে বসেছিল। তার হাবভাবে শিল্পীর মনে হতে থাকে রাতে যা ঘটেছে সবই লোকটার জানা। চিত্রশিল্পীর দীর্ঘ ভ্রমণ বা পথ চলা শেষ হয় যখন তার গাড়িটি ব্রেকডাউন করে। এরপর কাহিনী আরো অগ্রসর হয়েছে, সেই বিবরণে আর যাচ্ছি না।
জাপানি প্রকাশক বইটির প্রথম মুদ্রণে ১৩ লাখ কপি ছাপেন। পরে আরো কপি ছাপা হয়। প্রকাশ হয় পেপারব্যাক ও ই-বুক এডিশন। এছাড়া এর ইংরেজি অনুবাদ যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত হয়। সেগুলোও ভালো বিক্রি হয়।
মুরাকামির সাফল্য এখানেই তিনি তার লেখার মাধ্যমে বিরাট সংখ্যক পাঠককে আকর্ষণ করতে পেরেছেন। এ পর্যন্ত তার ১৪টি উপন্যাস, ৫টি ছোটগল্প সঙ্কলন প্রকাশিত হয়েছে। আছে কয়েকটি নন ফিকশন বই। তার চারটি উপন্যাস নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে এবং একটি উপন্যাস নিয়ে হয়েছে টিভি নাটক। পাঠকের ভালোবাসা তিনি পেয়েছেন, লেখকের জন্য এর চেয়ে মূল্যবান আর কি আছে?

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল