২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

জন্ম : ১০ জুলাই ১৮৮৫ মৃত্যু : ১৩ জুলাই ১৯৬৯
-

শিক্ষাবিদ, গবেষক, ভাষাবিদ, সাহিত্যিক, অভিধানপ্রণেতা। ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জুলাই চব্বিশ পরগনার বারাসতের নিকটবর্তী পিয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতার নাম মুন্সী মফীজউদ্দীন, মাতা হুরুন্নেসা।
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ, সিটি কলেজ থেকে সংস্কৃতিতে অনার্সসহ বিএ এবং ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দীনেশ চন্দ্র সেনের সহকারী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শরৎ কুমারী লাহিড়ী গবেষণা সহায়ক পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পরবর্তীকালে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। অবসর গ্রহণের পরপরই বগুড়ার আযিযুল হক কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ফারসি ভাষার খণ্ডকালীন অধ্যাপক ছিলেন। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ পদের দায়িত্ব পান। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শিক্ষকতার পেশা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তৎকালীন ‘পূর্ব পাকিস্তানি ভাষার আদর্শ অভিধান’ প্রকল্পের সম্পাদক নিযুক্ত হয়ে বাংলা একাডেমিতে যোগদান করেন। এর পাশাপাশি ইসলামী বিশ্বকোষ প্রকল্পের অস্থায়ী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি কর্তৃক গঠিত বাংলা পঞ্জিকার তারিখ নির্ণয় কমিটির সভাপতি ছিলেন। তার নেতৃত্বে ওই কমিটি একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ও যুক্তিযুক্ত ব্যবহারিক বাংলা পঞ্জিকা প্রস্তুত করে, যা বর্তমানেও অনুসৃত হয়ে থাকে। চর্যাপদের পদ কর্তাদের কাল ও ভাষার বৈশিষ্ট্য নির্ণয়, বিদ্যাপতির কবিতার পাঠ্যোদ্ধার, চণ্ডীদাস সমস্যার সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে তিনি যে মতামত প্রদান করেছেন, বলা যায় তা সর্বজনস্বীকৃত।
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রায় ১৮টি ভাষা আয়ত্ত করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব পড়তে এবং সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি করতে গিয়ে তিনি হিন্দি, তামিল, তেলেগু, ওড়িয়া, সিংহলি, বৈদিক, প্রাকৃত, তিব্বতি প্রভৃতি ভারতীয় ভাষা আয়ত্ত করেন। তার এরূপ ভাষাজ্ঞান ঐতিহাসিক ভাষাতত্ত্বচর্চা, ভাষার ইতিহাস রচনা, অনুবাদকর্ম, ব্যাকরণ ও অভিধান প্রণয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির কেবল চর্চা করেই দায়িত্ব শেষ করেননি, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে লেখনীর মাধ্যমে ও সভা-সমিতির বক্তৃতায় জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন।
বাংলা সাহিত্যে তার রচিত ও সম্পাদিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, বাংলা ব্যাকরণ, ইকবাল, আমাদের সমস্যা, বাংলা সাহিত্যের কথা (প্রথম খণ্ড), বাংলা সাহিত্যের কথা (দ্বিতীয় খণ্ড), বাংলা ভাষার ইতিবৃত্ত।
শেষ নবীর সন্ধানে, মহরম শরিফ, ইসলাম প্রসঙ্গ, কুরআন প্রসঙ্গ, হজ্জের ও রওযা পাকের জিয়ারতের দোয়া দরুদ, রোযাহ ঈদ ও ফিতরাহ।
অনুবাদগ্রন্থ : দীওআন-ই-হাফিজ, শিকওয়াহ, ও জওয়াব-ই-শিকওআই, রুবাইয়াত-ই-উমর খইয়ম, মহানবী, বাইআত নামা, বিদ্যাপতি শতক, অমর কাব্য কুরআন শরিফ (অনুবাদ ও ভাষাসহ প্রকাশিত), বুখারি শরিফ, ঈদুল আজহা ও কুরবানির আহকাম।
ছোটগল্প : রকমারী।
শিশুসাহিত্য : ছোটদের ইসলাম শিক্ষা, ছোটদের দিনিয়াত শিক্ষা, চরিত্র কথা, জ্ঞানের কথা, কথা মঞ্জুরী, নীতিকথা, সিন্দাবাদ সওদাগর, ছোটদের রাসূলুল্লাহ সা:, সেকালের রূপকথা।
সম্পাদিত গ্রন্থ : পদ্মাবতী, গল্প সঞ্চয়ন, পূর্ব পাকিস্তানি আঞ্চলিক ভাষার অভিধান, ইসলামি বিশ্বকোষ, উর্দূ অভিধান।
সম্পাদিত পত্রিকা : আল ইসলাম (মাসিক), বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা (ত্রৈমাসিক), আঙ্গুর (শিশুদের মাসিক পত্রিকা), ঞযব চবধপব (গড়হঃযষু), বঙ্গভূমি (মাসিক), তক্বীর (পাক্ষিক)।
১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ‘ইমেরিটাস প্রফেসর’ পদ লাভ করেন। গবেষণাকর্মের জন্য তৎকালীন পাকিস্তান সরকার তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘প্রাইড অব পারফরম্যান্স’ ফরাসি সরকার ‘নাইট অব দি ওর্ডার অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্স (১৯৬৭ খ্রি:)’ পদকে ভূষিত করেন। এই মহান জ্ঞানতাপস দেড় বছর পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত থেকে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল চত্বরে তাকে সমাহিত করা হয়। ধর্মের প্রতি অটল বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও তার মধ্যে কোনো গোঁড়ামি ছিল না। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement
৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্ন ভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের

সকল