২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নারী চালকের স্কুটি নিয়ে তোলপাড়

শাহানাজ আক্তার ও তার স্কুটি চুরি নিয়ে যত ঘটনা - ছবি : সংগৃহীত

ঢাকায় এখন অনেক কিছু ছাপিয়ে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের একজন স্কুটি চালক ও তার স্কুটি চুরি যাওয়ার গল্প নিয়ে আলাপ হচ্ছে। আর ঘটনার কেন্দ্রে আছেন শাহানাজ আক্তার নামের এক নারী।

"আমার বাইকে চড়তে আপনার আপত্তি নাই তো?" - এই একটি লাইন দিয়েই বোধহয় তিনি সবচেয়ে বেশি নজর কাড়লেন।

কিভাবে আলোচনায় এলেন তিনি?

জানুয়ারির ১১ তারিখ ফেসবুকে একটি পোষ্ট শেয়ার করেছিলেন রাফিউজ্জামান সিফাৎ নামের এক সাংবাদিক।

যাতে তিনি লিখেছিলেন, রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবার মটো'র একজন বাইক চালকের কাহিনী।

ঢাকায় রাইড শেয়ারিং অ্যাপ জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকে এত মোটরসাইকেল রাস্তায় নেমেছে যে সেনিয়ে নতুন করে কিছু হয়ত ভাবছেন না অনেকে।

কিন্তু এই চালকের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমটি হল তিনি এক নারী চালক। আর সে কারণেই অনেকে তাকে কল করেও তার মটরসাইকেলে উঠতে চান না।

এই বিষয়টি নিয়ে তার আক্ষেপের গল্পটি লেখা হয়েছিলো ঐ পোষ্টে। এরপরই শুরু হল ফেসবুকে ভাইরাল পোষ্ট।

হয়ত একজন নারী পাঠাও বা উবারের মটোরসাইকেল চালক বলেই অথবা লেখার ধরনের কারণেই হোক ফেসবুকের ঐ পোষ্টটি খুব শেয়ার করছিলেন মানুষজন।

যে পোষ্টটিতে উবারে শাহানাজ আক্তারের ছবি-সংবলিত একটি স্ক্রিনশটও ছিল। অনেকেই তাকে বাহবা দিচ্ছিলেন, সহানুভূতি জানাচ্ছিলেন।

খুব শিগগিরই বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তাকে নিয়ে লেখা হয় সংবাদ।

হঠাৎ যেন অন্য নারীদের অনুপ্রাণিত করার একটি চরিত্র হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেনি তার গল্প। হঠাৎ করে শোনা গেলো চুরি গেছে শাহানাজ আক্তারের স্কুটি।

সেনিয়ে শুরু হলো নতুন পোষ্ট আর তার প্রতি লোকজনের সহানুভূতি। তাকে সহায়তা করতে চাইলেন অনেকে।

কে এই শাহানাজ আক্তার?

শাহানাজ আক্তার শরিয়তপুরের মেয়ে তবে ঢাকাতেই বেড়ে উঠেছেন।

বলছিলেন, "ছোট বেলা থেকেই আমি বাইসাইকেল চালাতাম। =আর এরপর শখে মোটরসাইকেলও চালাতে শুরু করি। আমার দুটো মেয়ে। স্বামীর সাথে সম্পর্ক নেই। একসময় মনে হল এভাবে বসে আছি কেন ? এরপর থেকে আমি যে জিনিসটা সবচাইতে ভালো পারি সেটাই শুরু করলাম। শখই আমার রুটি রুজির যোগান হয়ে উঠলো।"

কী হয়েছিল তার স্কুটি নিয়ে?

শাহনাজ আক্তার বলছেন, "আমার সাথে চার দিন আগেই পরিচয়। একটা চাকরি দেবে বলছিল লোকটা। লোকটা আমাকে বলেছিল পার্মানেন্ট চাকরির ব্যবস্থা করে দেবে। খামারবাড়িতে কিছু বস আর ম্যাডামকে আনা নেয়া করতে হবে। এত শিক্ষিত, নিজেও পাঠাও চালায়। আমি খুব আগ্রহ দেখালাম। সে আমার কাগজ পত্র নিলো।"

এরপর গতকালের গল্পটা ঘটনাটি এরকম - এক 'ম্যাডামকে' নিতে যেতে হবে বলে লোকটি তাকে ডেকে পাঠায়।

যেতে দেরি হওয়ার পর তাকে বলা হয় ম্যাডাম রাগ করে চলে গেছেন। আর এরপর ঐ ব্যক্তি নিজেই তাকে ভাড়া করে বিমানবন্দর যাওয়ার কথা বলে।

লম্বা সময় তার সাথে মোটরসাইকেলে ছিলেন তিনি।

একপর্যায়ে নিজের ল্যাপটপটি শাহানাজ আক্তারের কাছে দিয়ে একটি হোটেলে কাজে ঢোকেন।

শাহানাজকে চা খেতে দেন। শাহানাজ আক্তার বলছিলেন, "নিজের ল্যাপটপ যে আমার কাছে দিয়ে যায়, আর যাকে এত শিক্ষিত বলে মনে হয় তাকে সন্দেহ করার কোনো কারণ আমি দেখিনি। কিন্তু সে স্কুটি চালাতে কেমন লাগে সেটা দেখতে চেয়ে আমার চোখের সামনে থেকে বাইকটা নিয়ে টান দিয়ে চলে গেল। আমি বিশ্বাস করতে পারিনি।"

তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, রাইড শেয়ারিং অ্যাপে বাইক চালানো ছাড়া অন্য কিছু করেন না তিনি।

বিকেল পর্যন্ত সংসারের সকল কাজ করেন। তারপর তিনটা থেকে বাইক রাইড দিতে শুরু করেন। রাত দশটা পর্যন্ত চলে শহরব্যাপী মোটরসাইকেলে যাত্রী আনা নেয়ার কাজ।

শাহনাজ আক্তার বলছিলেন, ঢাকার শেরেবাংলানগর এলাকায় তার স্কুটি চুরি যায়। বলছিলেন বাইকটি এভাবে চুরি যাওয়ার পর অসম্ভব মুষড়ে পরেছিলেন তিনি। এরপর থানায় গিয়ে বিষয়টি পুলিশের নজরে আনেন। বলছিলেন, "মাথায় হেলমেট পরা অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে হেটে হেটে থানায় গিয়েছিলাম। লোকজন ভাবছিল এই পাগলটা কে?"

মোটরসাইকেল উদ্ধারের গল্প

সেই শাহনাজ আক্তারের স্কুটি চুরি গেছে বলে আবার খবর ছাপা হলো। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব সরকার বলছিলেন কিভাবে বাইকটি উদ্ধার হয়েছে।

তিনি বলছেন, "যেহেতু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিষয়টি অনেক আলোচনা হচ্ছে। তাছাড়া এটি একটি মানবিক বিষয়। একটি বাইক তার জীবিকার উৎস। তাই বিষয়টি আমাদের নজরে আসে।"

তিনি বলছেন, শাহানাজ আক্তার চুরির জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির একটি মোবাইল নম্বর তাদের দিয়েছিলেন।

এরপর মোবাইল কোম্পানির সহায়তায় তার ছবি ও ঠিকানা বের করা হয়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঐ মোবাইলের অবস্থান নির্ণয় করা হয়।

অভিযুক্ত জুবাইদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয় নারায়ণগঞ্জের রঘুনাথ এলাকা থেকে।

বিপ্লব সরকার বলছেন, "আমরা তার এলাকা বুঝতে পারলেও একদম নিশ্চিত অবস্থানটি বুঝতে পারিনি। রাত একটার দিকে আমরা ঐ এলাকায় গিয়ে লোকজনকে ঘুম থেকে উঠিয়ে তার ছবি দেখাচ্ছিলাম। অনেকের মধ্যে একজন তাকে সনাক্ত করতে পারে।"

বুধবার দুপুরে ঘটা করে শাহানাজ আক্তারের বাইকটি তার কাছে হস্তান্তর করেছে তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ।

আর সে সময়কার ছবি ও খবর তারা নিজেদের ফেসবুক পাতায়ও শেয়ার করেছে।

আর এভাবেই আবারো আলোচনায় এলো শাহানাজ আক্তার ও তার স্কুটি।


আরো সংবাদ



premium cement