২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাপার একক প্রার্থী, বিএনপি-আওয়ামী লীগ চায় আসন পুনরুদ্ধার

জাপার একক প্রার্থী, বিএনপি-আওয়ামী লীগ চায় আসন পুনরুদ্ধার - সংগৃহীত

প্রমত্তা পদ্মা নদী ও ইছামতি নদী বিধৌত ও প্রবাসী অধ্যুষিত দোহার ও নবাবগঞ্জ দুইটি উপজেলা ও ১টি পৌরসভা নিয়ে ঢাকা-১ আসন গঠিত। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলা ২টি পৃথক আসনে বিভক্ত ছিলো। রাজধানীর অদূরে হলেও এ আসনটিকে রাজনীতির সদর দপ্তর বলা হয়।

প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল গুলোর নিকট অতি গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে পরিচিত ঢাকা -১। শুধু রাজনৈতিক দলগুলো নয় ভোটারদের কাছেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি। আসনটি ঘিরে সব রাজনৈতিক দলের প্রথম টার্গেট হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সব নির্বাচনেই এ আসনে জয়লাভ করছে বিএনপি। ঢাকা-১ আসন (দোহার-নবাবগঞ্জ) বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছয়টি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে চারবার জয় পেয়েছে বিএনপি। একবার করে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি (জাপা)।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চায় আসন উদ্ধার করতে। আর জাপা চায় জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। স্বাধীনতার পর থেকে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মাত্র একবার বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ৩ বার, বিএনপি ৩ বার করে এই আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে। যার ফলে ঢাকা-১ আসনকে অনেকেই বিএনপি'র ঘাটি হিসেবে মনে করে। 

২০০৮ সালের নির্বাচন ছাড়া নব্বইয়ের পট পরিবর্তনের পর প্রতিটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে অন্তত ৫০ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হওয়ার রেকর্ড রয়েছে বিএনপির। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত দোহার উপজেলা থেকে এমপি হন বিএনপির সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী নাজমুল হুদা ও নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে বিএনপির বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান। নাজমুল হুদা বিএনপি থেকেই যোগাযোগ মন্ত্রী হন। তিনি যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালীন ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেন যা এখনও সাধরন মানুষের মুখে মুখে।

প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ভোটার অধ্যুষিত এ এলাকায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এডভোকেট আব্দুল মান্নান খান ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৬৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আব্দুল মান্নান। আব্দুল মান্নান পান ১ লাখ ২১ হাজার ৩৭৭ ভোট।

পরে তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দ্বায়িত্ব পান। এরপর ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে আবার আওয়ামীলীগ প্রার্থী হন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান আর বিএনপি নির্বাচনে না আসায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী এ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।

২০১৪ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্বের জেরে নৌকার মাঝি বদলের প্রতিযোগীতায় নামে আওয়ামী লীগেরই একাংশ। ফলে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে হারিয়ে বিজয়ী হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম। এ নির্বাচনে এডভোকেট সালমা ইসলাম পান ৫৩,৩৪১ভোট। এডভোকেট আব্দুল মান্নান খান পান ৪৮৬৯০ ভোট। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির সাথে ব্যপক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে হেরে আওয়ামীলীগ পূণরায় আসনটি হারায়।

এবার আসনটিকে নিজেদের দখলে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি দিন রাত প্রচারণায় সরব থাকলেও মামলা জটিলতায় নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেই বিএনপি।

অন্যদিকে আরেক প্রভাবশালী নেতা সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী বর্তমান বিএনএর কর্ণধার ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদা ও তার ও তার অনুসারী দু’মনা সমর্থকদের নামে মামলা থাকায় তারাও প্রচারনার বাইরে রয়েছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা জোট-মহাজোটের কর্মী-সমর্থকেরা কাকে প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে পাচ্ছেন সেই হিসাব-নিকাশ পরিস্কার না হওয়ায়া উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন দলের কর্মী সমর্থকেরা। মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে ধুম্রজালে রয়েছেন সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান খান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারী উন্নয়নখাত বিষয়ক উপদেষ্টা ও শিল্পপতি সালমান এফ রহমান। অন্যদিকে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল হিসেবে এ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, নতুন মহাজোট বিএনএফ এর কর্নধর সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাও শরিক দল হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন বলে দোহার-নবাবগঞ্জের বিভিন্ন চায়ের দোকানের বিভিন্ন লোকজনের আলোচনার স্থান পায়।

তবে বিএনপি থেকে সাবেক মন্ত্রী আব্দুল মান্নান মনোনয়ন পেতে পারেন বলে দলীয় বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়। এদিকে বিএনপির মান্নান বয়োজ্যেষ্ঠ বিবেচনায় রেখে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাকও মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। তিনি মনোনয়নের জন্য দলীয় হাই কমান্ডে তদবির ও লবিং করে যাচ্ছেন। তার সমর্থকেরাও প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। তবে বিএনপি থেকে যাকেই নমিনেশন দেয়া হবে তার পক্ষেই কাজ করবে বলে জানান খন্দকার আবু আশফাক।

এছাড়াও বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির কমরেড করম আলী, ইসলামী শাসন তন্ত্র আন্দোলন এবং ইসলামী দল চরমোনাইয়ের প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।

তবে মহাজোটের কে মনোনয়ন পাচ্ছেন এ নিয়ে জনগনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। আওয়ামীলীগ -বিএনপি উভয়ের মধ্যে দলীয় কোন্দল নিরসন না হওয়ায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে এ রকম মনে করছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা কর্মীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির প্রবীণ রাজনীতিবিদরা জানায়, নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত রাখার কৌশল হিসেবে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায় ৪টি গায়েবী মামলায় হাজার নেতাকর্মী মাঠ ছাড়া।

এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন দলের সভানেত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়নবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক নূরে আলম উজ্জ্বল এবং ফ্রান্স আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন মেট্রো আওয়ামী লীগের সহসভাপতি যোসেফ কেনেডি গমেজ।

বিএনপি থেকে ছয়জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক, আবদুল মান্নানের মেয়ে মেহনাজ মান্নান এবং সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার মেয়ে অন্তরা হুদা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মো. কামাল হোসেন খান, দোহারের বিএনপির নেতা মো. তারেক হোসেন।

জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান সাংসদ সালমা ইসলাম দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement