২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হাসপাতালের সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে শুধু মৃত্যুর অপেক্ষা করাই যেন তার কাজ

অসহায়
হাসপাতাল বেডে সেই বৃদ্ধা - ছবি : নয়া দিগন্ত

হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে নাম অজ্ঞাত। বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। কঙ্কালসদৃশ এ শরীরটার এখন কাজ যেন হাসপাতালে তার বেডেও উপরে লাগানো হাসপাতালের সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে শুধু মৃত্যুর অপেক্ষা করা। সাধারণ দর্শনার্থী, পাশের বেডের রোগীর স্বজন এমনকি ডাক্তার নার্স, কে তাকে দেখতে এলো সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই।

এমনই এ হতভাগ্য মহিলাকে মৃত্যু কাছ থেকে ছুঁয়ে গেছে, যখন তিনি উপজেলা সোনামুখী সিএনজি স্ট্যান্ড এলাকায় এক চায়ের দোকানের বারান্দায় মরার মতো পড়েছিলেন। কিন্তু মৃত্যু তখন তাকে একেবারে তার করে নিতে পারেনি। এ পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন কাজিপুরের কিছু নিবেদিতপ্রাণ মানুষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সেনা সদস্য এবং মুজিবপাড়ার আব্দুস সালাম ও কয়েকজন শিক্ষক মিলে গত ১২ জুলাই সোনামুখী থেকে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান। কিন্তু সেখানে চিকিৎসাসেবা পেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। ভর্তির পর তার সেবা-যতেœর জন্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগির একজন স্বজন কিংবা একজন লোক চায়। কিন্তু যার এ দুনিয়ায় কেউ নেই তাকে দেখভাল করার জন্যে হাসপাতালে কে যাবেন? কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে চিকিৎসা দিতে অবজ্ঞা অবহেলা করেছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

গতকাল দুপুরে এই প্রতিবেদক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে ওই মহিলার খোঁজ খবর নেন। এসময় কথা হয় দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আনোয়ারার সাথে। তিনি জানান, বর্তমানে ওই মহিলার জন্যে একজন লোক কাজ করছে। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকবল সংকটের কথা জানান। তিনি জানান, ৫০ জন রোগির দেখভাল ও কাজ করার জন্যে রয়েছে মাত্র দুইজন লোক।

কাজিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, রোগির অবস্থা ভালো। তবে আমরা সন্দেহ করছি তার জটিল কোনো রোগ থাকতে পারে। পরীক্ষার ফলাফল এলেই নিশ্চিত হতে পারবো।

এদিকে ভয়েস অব কাজিপুরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বাবু ও আমিনুল ইসলামের প্রচেষ্টায় এরই মধ্যে একজন মহিলা সার্বক্ষণিক ওই রোগির পাশে রয়েছেন।

আরো পড়ুন : 

নয়া দিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পর
গরম কাপড় পেয়েছেন মহাদেবপুরের সেই বৃদ্ধা ময়না
কাজী আনিছুর রহমান, রাণীনগর (নওগাঁ), ০৫ জানুয়ারি ২০১৭
শীত নিবারণের গরম কাপড় পেয়েছেন নওগাঁর মহাদেপুরের সেই আলোচিত বৃদ্ধা ময়না। গত ২৭ ডিসেম্বর দৈনিক নয়া দিগন্ত অনলাইন ও নয়া দিগন্ত পত্রিকায় ‘এখনও গরম কাপড় পাননি বৃদ্ধা ময়না’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ পড়ে সৌদি প্রবাসী আশিকুর হাসান নামে এক ব্যক্তি পাঠিয়েছে কাপড় কেনার টাকা। শীতের কাপড় পেয়ে মহাখুশী সেই ময়না।

উল্লেখ্য, শীতে কাঁপছে নওগাঁর মহাদেবপুরের বুদ্ধিপ্রতিবন্দি বৃদ্ধা ময়না (৭৫)। শীত নিবারণের জন্য নেই তেমন কোনো গরম কাপড়। এ বয়সেও তার ভাগ্যে জোটেনি বয়স্ক ভাতার কার্ড, এমনকি তার জাতীয় পরিচয়পত্রও। থাকার নিদিষ্ট জায়গা, বাড়িঘর পর্যন্ত তার নেই বললেই জানালেন তার পরিচিতজনরা।

ময়না নামের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এই ৭৫ বছরের বৃদ্ধা দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া নওহাটা মোড় বাস স্ট্যান্ডেই সারাদিন ঘোরাফেরা করেন। রাত্রী যাপন কোথায় করেন কেউ না বলতে পারলেও কাকডাকা ভোরে বৃদ্ধা ময়না নওহাটা বাজারে এসে হাজির হন। বৃদ্ধা ময়না সারাদিন বাসস্ট্যান্ডে ঘোরাফেরা করলেও কোনো ব্যবসায়ী বা জনসাধারণের কাছ থেকে টাকা-পয়সা চেয়ে নেন না। সারাদিন হাসিখুশি মুখে চলাফেরা করায় স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ বিশেষ করে বাসের স্টাফগুলোর সাথে তার গড়ে উঠেছে এক ধরনের সখ্যতা। বাসের স্টাফ ও পরিচিত জোনেরা যে টাকা পয়সা তার হাতে দেয় সেই টাকা দিয়েই সে খাবার কিনে খায় আর ঘোরে বেড়ায়।

আর এই বৃদ্ধা ময়নাকে নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্ত অনলাইন ও নয়া দিগন্ত প্রিন্ট ভার্সনে এ সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সৌদি প্রবাসী আশিকুর হাসান নামের এক ব্যক্তি বৃদ্ধা ময়নাকে শীত নিবারনের কাপড় কিনে দেয়ার জন্য সৌদি থেকে টাকা পাঠিয়ে দেন নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা নয়া দিগন্ত সাংবাদিক কাজী আনিছুর রহমানের কাছে। সৌদি প্রবাসীর পাঠানো টাকায় কেনা গরম কাপড় ও নগদ টাকা গতকাল বুধবার বিকালে ময়নার হাতে তুলে দেন নওগাঁর রাণীনগর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও নয়া দিগন্ত সাংবাদিক কাজী আনিছুর রহমান। এসময় তার সাথে ছিলেন জেলা প্রেস ক্লাবের নির্বাহী সদস্য ও দৈনিক লাল গোলাপ ও বিডি টুডেস এর নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি জি,এম মিঠন, রানীনগর প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক করতোয়া প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম, মহাদেপুর থানা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক করতোয়া প্রতিনিধি সাখাওয়াত হোসেন, দৈনিক লাল গোলাপ পত্রিকার মহাদেবপুর প্রতিনিধি মেহেদী হাসান, দৈনিক প্রথম সংবাদের সুইট হোসেন প্রমুখ।

কাপড় ও নগদ টাকা পেয়ে মহাখুশি হয়েছেন বৃদ্ধা ময়না।


আরো সংবাদ



premium cement