২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

লিবিয়া সঙ্কটের শেষ কোথায়

-

আবার সঙ্ঘাত শুরু হয়েছে উত্তর আফ্রিকার তেলসমৃদ্ধ দেশ লিবিয়ায়। জেনারেল খালিফা হাফতার তার বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন রাজধানী ত্রিপলির দিকে। অল্প সময়ের জন্য দখল করে নিয়েছিলেন রাজধানীর একমাত্র সচল বিমানবন্দর। তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে লিবিয়ার প্রধান তেল টার্মিনালগুলো।
লিবিয়ার উত্তরে ভূমধ্যসাগর, পূর্বে মিসর, দক্ষিণ-পূর্বে সুদান, দক্ষিণে চাদ ও নাইজার এবং পশ্চিমে আলজেরিয়া ও তিউনিসিয়া। ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত ত্রিপোলি শহর লিবিয়ার বৃহত্তম শহর ও রাজধানী। লিবিয়া আফ্রিকার বৃহত্তম রাষ্ট্রগুলোর একটি। আকারে বিশাল হলেও জনবসতি খুবই কম। দেশের বেশির ভাগ অংশজুড়ে রয়েছে সাহারা মরুভূমি। লিবিয়ার প্রায় সব লোক বাস করে উপকূলবর্তী অঞ্চলে।
লিবিয়ায় কার্যত এখন দুটি সরকার। একটি জেনারেল হাফতারের বাহিনী নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলীয় ‘ওয়ারলর্ড’; অপরটি জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত ‘ত্রিপলি সরকার’। এই সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ফায়েজ আল-সাররাজ। জেনারেল হাফতারের প্রতি সমর্থন রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, মিসর, রাশিয়া ও সৌদি আরবের। বছর তিনেক আগে দেশটিতে আরো কয়েকটি সরকার ছিল। কারো ওপর কারো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
জেনারেল হাফতার গত চার দশক ধরেই লিবিয়ার রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এই চার দশকে তার অনেক উত্থান-পতন হয়েছে। কখনো তিনি ছিলেন লিবিয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রের কাছাকাছি খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আবার কখনো তাকে ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যেতে হয়েছে। পরে আবার তার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে ক্ষমতার কেন্দ্রে।
১৯৪৩ সালে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় শহর আজডাবিয়ায় খালিফা হাফতারের জন্ম। ১৯৬৯ সালে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে সেনা কর্মকর্তারা রাজা ইদ্রিসকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করেন, তিনি ছিলেন তাদের একজন।
গাদ্দাফির শাসনামলে হাফতার বেশ দ্রুত উপরের দিকে উঠে যান। ১৯৮০’র দশকে লিবিয়ার বাহিনী যখন প্রতিবেশী দেশ চাদে সঙ্ঘাতে লিপ্ত, তখন তাকে সেই লড়াইয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। তবে এটিই হাফতারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ফ্রান্সের সমর্থনপুষ্ট চাদ বাহিনীর হাতে তার বাহিনী পরাজিত হয়। চাদে এই বাহিনী পাঠানোর কথা গাদ্দাফি বরাবরই তা অস্বীকার করছিলেন। কাজেই যখন হাফতার ও তার বাহিনী চাদের সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়লেন, গাদ্দাফি তাদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান। এটি জেনারেল হাফতারকে প্রচণ্ড বিক্ষুব্ধ করে। পরের দুই দশক ভার্জিনিয়ায় নির্বাসিত হয়ে তিনি গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করার কৌশল বের করার চেষ্টা করেন। তিনি থাকতেন সিআইএ’র সদর দফতরের খুব কাছে। তার সাথে সিআইএ’র বেশ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল বলেই মনে করা হয়। গাদ্দাফিকে হত্যার বেশ কয়েকটি চেষ্টায় সিআইএ তাকে সমর্থন দেয়।
২০১১ সালে লিবিয়ায় গাদ্দাফির বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়। জেনারেল খালিফা হাফতার এ সময় দেশে ফিরে আসেন। লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহী বাহিনীর অন্যতম অধিনায়ক ছিলেন তিনি। তবে গাদ্দাফির পতনের পর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হাফতারের কথা আর তেমন শোনা যায়নি। ২০১৪ সালে হঠাৎ আবার তাকে দেখা যায় টেলিভিশনে। সেখানে তিনি তার ভাষায়, জাতিকে রক্ষার এক পরিকল্পনা হাজির করেন ও নির্বাচিত পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান। তবে তার পক্ষে যথেষ্ট সমর্থন ছিল না। এ সময় তার প্রতিপক্ষ হয় লিবিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বেনগাজি এবং পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য শহরের নিয়ন্ত্রণকারী আলকায়েদার সহযোগী সংগঠন আনসার আল শরিয়া।
ওই বছর মে মাসে জেনারেল হাফতার বেনগাজি এবং লিবিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে উগ্রবাদী আনসার আল শরিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন। শুরুতে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তবে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা বেনগাজির বেশির ভাগ এলাকা থেকে উগ্রবাদীদের হটিয়ে দেয়। মে মাসে তারা আরো সাফল্য পায়। সেপ্টেম্বরে গুরুত্বপূর্ণ তেল টার্মিনালগুলোর দখল নেয় হাফতার বাহিনী। এর আগ পর্যন্ত টার্মিনালগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল জাতিসঙ্ঘ পরিচালিত বাহিনী। লিবিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সব তেল টার্মিনাল তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় হাফতারের নেতৃত্বে লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মি।
গত বৃহস্পতিবার জেনারেল খালিফা হাফতার তার বাহিনীগুলোকে রাজধানী ত্রিপোলিতে অগ্রসর হওয়ার আদেশ দেন। যেখানে রয়েছে জাতিসঙ্ঘ স্বীকৃত সরকার গভর্নমেন্ট অব ন্যাশনাল অ্যাকর্ড।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর চারপাশে হাফতারের বাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রী সাররাজ সরকারের মিলিশিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বোঝাই যাচ্ছে, দেশটি গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের তদন্তকারীদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর হিফতারকে সামরিক সহায়তা দিয়েছে। গত মার্চ মাসের শেষ নাগাদ সৌদি আরবের বাদশাহ সালমানের সাথে দেখা করার পর হাফতার আরো আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। এসব শক্তিধর রাষ্ট্রের অব্যাহত হস্তক্ষেপের কারণে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য জাতিসঙ্ঘের চেষ্টা শেষ হয়ে যেতে বসেছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রিপোলির সরকারকে সমর্থন দিয়েছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নিস্পৃহতা ও হাফতারের প্রতি ওই সব শক্তিধর রাষ্ট্রের সক্রিয় সমর্থন লিবিয়াকে আরো বড় ধরনের দ্বন্দ্বের দিকে ঠেলে দিতে পারে। হ


আরো সংবাদ



premium cement
নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের আশুলিয়ায় বাঁশবাগান থেকে নারী পোশাক শ্রমিকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার মিয়ানমারের কর্মকর্তারা ফেরত গেলেন, কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কট কি আরো জটিল হচ্ছে দিনাজপুরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষ, চালক-হেলপার নিহত মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ সখীপুরে বৃষ্টির জন্য অঝোরে কাঁদলেন মুসল্লিরা দক্ষিণ ভারতে কেন কাজ করেনি বিজেপির হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আংশিক কমিটি বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসায় বিনিয়োগ সম্ভাবনা অন্বেষণে থাইল্যান্ডের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান ট্রাম্পের বিচার নিয়ে বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট

সকল