২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সিলেটে ট্রাকচালক ও তার বন্ধু হত্যা ঘটনায় ৩ ঘাতক আটক

-

চাকরি হারানোর ক্ষোভেই আলমডাঙ্গার ভোগাইল-বগাদী গ্রামের ট্রাকচালক ও তার বন্ধুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে ট্রাকটির চাকরিচ্যুত চালক ও তার সহকারী। এ ঘটনায় গত শুক্রবার রাতে ও গত শনিবার ভোরে সিলেট শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই চাকরিচ্যুত চালক এবং তার সহকারীসহ মোট তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক দুই ব্যক্তি হলো সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল মুড়ারগাঁও এলাকার ফৌজদার মিয়া তালুকদারের ছেলে ট্রাক চালক মো: ইব্রাহিম মিয়া তালুকদার ও বিশ্বনাথের শ্বাসরাম এলাকার রুস্তম আলীর ছেলে ট্রাকের হেলপার ফজর মিয়া। এ ছাড়াও এ ঘটনায় সহযোগিতার দায়ে ট্রাকের টায়ার ক্রেতা ওই উপজেলার বেড়জুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জয়নাল মিয়াকেও আটক করেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ট্রাক চালক ও তার সহকারী হত্যার কথা স্বীকার করেছে।
নিহত দুই যুবকের পরিবার সূত্রে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোগাইদ-বাগাদী গ্রামের কাদেরের ছেলে জাহাঙ্গীর ১০ বছর যাবৎ ট্রাকের চালক হিসেবে কাজ করছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীর চুয়াডাঙ্গা সদর থানা এলাকার আন্দিপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ট্রাকে চালক হিসেবে নতুন চাকরিতে যোগদান করে। ট্রাকটি সিলেট থেকে নিয়ে আসার জন্য ট্রাক মালিক আতাউর তার নতুন চালক জাহাঙ্গীরকে পাঠান। এ সময় জাহাঙ্গীর বাড়ির পাশের বন্ধু রাজুকে সাথে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশে রওনা হন। ট্রাকটি ঢাকা-টঙ্গী এলাকার মাইওয়ান রেলগেটের নিকট পাথর আনলোড করা হচ্ছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে ট্রাকটি আনার জন্য জাহাঙ্গীর ও রাজু ঢাকা মাইওয়ান এলাকায় গিয়ে চাকরিচ্যুত চালক ইব্রাহিম ও তার সহকারী ফজরের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা গত বৃহস্পতিবার রাতে ট্রাক নিয়ে আসতে চাইলে হত্যাকারীরা সিলেটে ট্রাক বুঝিয়ে দেবে বলে জানায় এবং সিলেট থেকে ঢাকায় পাথর নিয়ে আসা বাবদ ২০ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়ার কথা ট্রাক মালিককে জানায়, যা আসলে ৩০ হাজার টাকায় মেটানো ছিল। অতিরিক্ত এ ১০ হাজার টাকা আত্মসাতের বিষয়টি জাহাঙ্গীর ট্রাক মালিক আতাউরকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায়। এ নিয়ে মোবাইলে আতাউরের সাথে ট্রাক চালক ইব্রাহিমের তর্ক-বিতর্ক হয়। এরপরই চাকরিচ্যুতের ক্ষোভে নতুন ট্রাক চালক জাহাঙ্গীর ও তার বন্ধু রাজুকে হত্যার পরিকল্পনা করে চাকরিচ্যুত চালক ইব্রাহিম ও তার সহকারী ফজর।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় টঙ্গী এলাকার গাজীপুর থেকে ওই ট্রাকে রিকশার যন্ত্রাংশ নিয়ে সিলেটে আসার সময় জাহাঙ্গীর ও তার বন্ধু রাজুর সফরসঙ্গী হয় সাবেক চালক ইব্রাহিম ও সহকারী ফজর। পথে হবিগঞ্জের মাধবপুর আসার পর জাহাঙ্গীর ও রাজুকে দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তারা। এরপর গাড়ি চালায় ইব্রাহিম। পরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় সিটি করপোরেশনের ময়লার ভাগাড় লালমাটিয়া এলাকায় নিয়ে ট্রাকটি রেখে দেয়। হত্যাকাণ্ডের পর দুর্ঘটনার নাটক সাজাতে ট্রাকের ছয়টি চাকাও খুলে নেয় তারা। ট্রাকের যে চাকাগুলো খুলে বিক্রি করা হয়েছিল, সেগুলোও উদ্ধার করা হয়েছে। পুরো ঘটনায় দুইজনকে সহযোগিতা করে ট্রাকের টায়ার ক্রেতা জয়নাল মিয়া। জগদীশপুরে এই জয়নালের দোকানেই চাকাগুলো বিক্রি করা হয়েছিল।
পুলিশ জানায়, ঘাতকেরা ‘দুর্ঘটনা কবলিত’র নাটক সাজালেও শুরুতেই পুলিশের কাছে এটি হত্যাকাণ্ড বলে সন্দেহ হয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটন করল। পুলিশ আরো জানায়, নিহতদের ব্যবহৃত মোবাইল সেট ফজরের শ্বশুরবাড়ি এবং ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ট্রাকের তিনটি চাকা ও পাঁচটি রিং হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুরের জয়নাল মিয়ার দোকান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় টায়ার ক্রেতা ওই উপজেলার বেড়জুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে জয়নাল মিয়াকেও আটক করেছে পুলিশ।
সিলেট মোগলাবাজার থানার ওসি আখতার হোসেন বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত রাজুর ভাই সুজন আহমদ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় আটক তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সিলেট নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো: জেদান আল মুসা বলেন, গ্রেফতার আসামিদের সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হয়েছে। ট্রাকটির মালিক চুয়াডাঙ্গার আন্দিপুরের আতাউর রহমান। আটক ইব্রাহিম ওই ট্রাকটির চালক ও ফজর হেলপার ছিল। চাকরি হারানোর ক্ষোভ থেকেই জাহাঙ্গীর ও রাজুকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে তারা।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল