২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিটফোর্ড হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্য ও চোরের উৎপাত

-

মিটফোর্ড হাসপাতালে ফের দালালদের দৌরাত্ম্য এবং চোরের উৎপাত বেড়েছে। এসব দালাল ও চোরদের কাছ থেকে হাসপাতালে কর্তব্যরত কিছু আনসার সদস্য নিয়মিত বখরা পেয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, মিটফোর্ড হাসপাতালে দালালরা রোগী ভাগিয়ে বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যায়। আর চোররা লাইনে দাঁড়ানো রোগী ও তার স্বজনদের ব্যাগ ও পকেটে থাকা টাকা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে। হাসপাতালের ইমারজেন্সি ও বহির্বিভাগের সামনে ও নতুন ভবনের দালালরা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
তাবাসসুম, এক গর্ভবতী নারী। সাথে তার স্বামী রহমান ও মা আছিয়া। মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেটে আসতেই দালালরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। প্রায় ১০ মিনিট তাদেরকে আটকে ধরে নানা কথা বলে ওরা । এখানে ভালো চিকিৎসা হয় না, এখানকার ডাক্তার পাশের ক্লিনিকে বসে। ক্লিনিকে ভালোমতো ডেলিভারি করানো হয়। অনেক মানুষের মধ্যে এসব কথা বলতে শোনা গেল। পরে ভবনের ভেতর থেকে এক নারী ট্রলি নিয়ে আসে। আর ওই সব দালালদের ধমক দেয়। তখন দালালরা আবার পাল্টা জবাবে বলে যে, তুই তো দালালি করতি। এখন আউট সোর্সিংয়ে চাকরি নিয়ে ভালো হইলি কবে? এমনকি তোর মা ও বোন বাঁধন ক্লিনিকে রোগী নিয়ে যায়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটছে ইমারজেন্সির সামনে।
কেরানীগঞ্জ মডেল টাউন আবাসিকের এক নৈশপ্রহরী হাসান জানান, গত সপ্তাহে তার ছোট মেয়েকে মিটফোর্ডে নেয়া হয়। পরে ভবনের সামনে থাকা দালালের কথামতো ডক্টরস ক্লিনিকে নেয়া হয়। ক্লিনিক থেকে ৩৫ হাজার টাকা দাবি করে। কোনো কাগজপত্র দেয়নি। পরে ৩২ হাজার টাকা দিয়ে মেয়ে এবং নাতনি নিয়ে বাসায় ফিরি।
ভবনের সামনে থাকা দালালরা জানান, ক্লিনিকে রোগী নিলে হাজারে ১০০ টাকা কমিশন পাই। এ দিয়ে সংসার চলে। এই কাজের জন্য হাসপাতালের আনসার সদস্যদের দিনে ১০০ টাকা ঘুষ দেই। রোগী ধরতে পারলে আরো কিছু খরচ হয়, যা মিটফোর্ডের অনেককে দিতে হয়। বহির্বিভাগ থেকেও এভাবে রোগী ভাগিয়ে নেয়া হয় বলে জানায় হাসপাতাল সূত্র।
স্থানীয় সূত্র জানায়, যেসব হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নেয়া হয় সেগুলো হলোÑ আলফা ক্লিনিক, ইস্টার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আল আরাফাত ক্লিনিক, বাঁধন ক্লিনিক, ডক্টরস ক্লিনিক, মেডিসান হেলথ কেয়ার ও নিউ ঢাকা হাসপাতালসহ আরো বেশ কিছু হাসপাতাল ও ক্লিনিক। এসব হাসপাতালের অন্যতম আলফা ক্লিনিক। এ প্রতিষ্ঠানটির মালিক মিটফোর্ড হাসপাতালের একজন উপ-পরিচালক। তার ক্লিনিকের শতাধিক দালাল মিটফোর্ড হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায়। এসব দালাল প্রতিবাদ করলে হাসপাতালের কর্মচারীদের মারধর ছাড়াও উল্টো চাকরি হারানোর হুমকি দেয় দালালরা বলে জানান মিটফোর্ডের একাধিক কর্মচারী।
মিটফোর্ড হাসপাতালের বহির্বিভাগে মেডিসন বিভাগের আরপি ডাক্তার অসীম চক্রবর্ত্তী এ প্রতিবেককে জানান, দালাল দিন দিন বাড়ছে। এত দালাল কোথা থেকে আসে তা বলা মুশকিল। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে রোগীরা অভিযোগ করে। দালালের খপ্পরে পরে সর্বস্বান্ত হওয়ার কাহিনী। এসব দালাল নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে গরিব রোগীদের জন্য বড় ধরনের হুমকি। তিনি বলেন, এ হাসপাতালে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার রোগী বহির্বিভাগ থেকে টিকিট কিনে। ডাক্তার কম থাকায় কোনো কোনো রোগী টিকিট কিনলেও ওই দিন দেখাতে পারে না ডাক্তার। প্রতিদিন একজন ডাক্তার শতাধিক রোগী দেখেন। ফলে পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অন্য দিকে, চোরের উৎপাত বাড়ছে। প্রতিদিন কারো না কারো টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। গতকাল এক নারীর দুই হাজার টাকা চুরি হয়েছে। তিনি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থেকে এসেছেন নাকের ডাক্তার দেখাতে। লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেনার পরে তার ব্যাগে টাকা নেই। এ বিষয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোর্শেদ রশিদ নয়া দিগন্তকে বলেন, সদ্য যোগদান করলাম। বিষয়টি নলেজে নেই। অবশ্যই দালাল এবং চোরমুক্ত মিটফোর্ড হাসপাতাল গড়ে তোলা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল