২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সাত কলেজ অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন\

চতুর্থ দিনেও ঢাবির সব ভবনে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

-

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের চতুর্থ দিনে গতকাল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন ও সব একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পরে বেলা ২টার দিকে শিক্ষার্থীরা ওই দিনের মতো তাদের আন্দোলন স্থগিত করেন। এর আগে গত রোববার দুপুরে আন্দোলন স্থগিতকালে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরে যাবেন না বলেও জানান। সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলসহ শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবির মধ্যে রয়েছে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকেই সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল করা; দুই মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষার ফলাফল দেয়া; বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটালাইজেশন করা এবং ক্যাম্পাসে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও রিকশা ভাড়া নির্ধারণ করা।
এ দাবিতে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী গতকাল ভোর থেকেই তালা লাগাও কর্মসূচিতে অংশ নেয় আন্দোলনকারী। আগে বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে তালা না লাগালেও গতকাল সেখানেও তাল ঝুলায় বিক্ষোভকারীরা। এর মাধ্যমে বিশ^বিদ্যালয়ের সব ভবন অবরোধের আওতায় আনে বিক্ষোভকারীরা। পরে সকাল ৮টার দিকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। আন্দোলনে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘প্রশাসন করে কী, খায় দায় ঘুমায় নাকি’, ‘নির্লজ্জ প্রশাসন, ধিক্কার, ধিক্কার’, ‘ঢাবির সম্মান, নষ্ট হতে দেবো না’, ‘সাত কলেজ বাতিল চাই’, ‘রাখতে ঢাবির সম্মান, সাত কলেজ বেমানান’, ‘দাবি মোদের একটাই সাত কলেজ বাতিল চাই’ ইত্যাতি স্লোগান দিতে থাকেন।
ক্লাসের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাবির দর্শন বিভাগের স্নœাতকোত্তরে শ্রেণিপ্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌস মিতা জানান, কলাভবনের ফটকে তালা দেয়া থাকায় তাদের পূর্বনির্ধারিত সকাল ৮টা এবং ১১টার ক্লাস দু’টি বাতিল হয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে সমাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে অবস্থান নেয়া আন্দোলনকারীদের সাথে বাগি¦তণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহ্বায়ক এবং সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন। আন্দোলনকারীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করার জের ধরে বাগি¦তণ্ডার সূত্রপাত। এ সময় ঢাকা কলেজের সাবেক ছাত্র ও ঢাবির শিক্ষক জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটি সাত কলেজের পক্ষে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছাত্রশিবিরের লোক বলে আখ্যা দেন তিনি। শিক্ষার্থীদের ফটকের তালা খুলে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন কিন্তু শিক্ষার্থীরা তালা খুলে না দেয়ায় তাদের শিবির বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। তার এই কথায় ক্ষুব্ধ হয় শিক্ষার্থীরা। ভুয়া ভুয়া স্লোগান দিলে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে অধ্যাপক আ ক ম জামাল স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন, আমি সাত কলেজের পক্ষে এবং কথাটি তিনি কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করেন। তখন শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সেই সাথে ‘সাত কলেজের টিচার- এই মুহূর্তে ঢাবি ছাড়’, ‘পদত্যাগ, পদত্যাগ’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি বেশি উত্তাল হলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের চেয়্যারম্যান অধ্যাপক ড. ফেরদৌস হোসেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুনেন। তখন অধ্যাপক জামাল উদ্দিনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা অধ্যাপক ফেরদৌস স্যারকে অনুরোধ করেন। গত বোরবারের আন্দোলনেও অধ্যাপক জামালের সাথে শিক্ষার্থীদের বাগি¦তণ্ডা হয়। এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় তিনি শিক্ষার্থীদের পুলিশে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এ বিষয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, অধ্যাপক জামাল স্যারের আচরণ কোনোভাবেই শিক্ষকসুলভ নয়।
এদিকে মৌখিক আশ^াসে আন্দোলন থেকে সরে না দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় অধিভুক্তি বাতিল ছাড়া অন্য কোনো আশ^াস মানবেন না বলেও ঘোষণা দেন। জানতে চাইলে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র শাকিল মিয়া বলেন, আজো স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা দেয়া হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকছে। আমরা চাই বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন লিখিত আকারে এ বিষয়ে স্পষ্ট ঘোষণা দিক। আমরা কোনো আশ^াসে ভুলতে চাই না।
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান ডাকসুর : সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংসদ (ডাকসু)। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। সোমবার ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও জিএস গোলাম রাব্বানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সাত কলেজ সঙ্কটে রাষ্ট্রপতির শরণাপন্ন : সাত বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন গত দুই দিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেয়ায় ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। এতাবস্থায় উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রপতির শরণাপন্ন হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। তারা বিষয়টি সমাধানের জন্য রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনায় বসার জন্য ইতোমধ্যে বঙ্গভবনকে জানিয়েছে। সোমবার শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে আন্দোলনকারীদের সাথে সংহতি জানিয়ে এ কথা জানান ডাকসুর সদস্য রকিকুল ইসলাম ঐতিহ্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement
৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের

সকল