১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিলের দাবি অভিভাবকদের

-

তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বাতিল করার সরকারি সিদ্ধান্তে অভিভাবকদের মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করছে। পরীক্ষা ঘিরে প্রতিযোগিতা আর পড়া আদায় নিয়ে ছোট ছোট শিশুরা প্রায় প্রতিদিন গৃহে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা এখন অনেকটা এ থেকে রক্ষা পাবে।
তবে একই সাথে তারা দাবি জানিয়েছেন পঞ্চম শ্রেণী শেষে সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণী শেষে জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষাও বাতিলের। এ পরীক্ষা ঘিরেও শিশুরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে প্রতিদিন। শুধু শিশুরা নয়, সব অভিভাবকও প্রচণ্ড মানসিক চাপের মুখে রয়েছেন বছরের পর বছর এ পরীক্ষা ঘিরে। এ পরীক্ষা ঘিরে চালু হয়েছে নানা ধরনের বাণিজ্য। কোচিং, মডেল টেস্টের নামে বেসরকারি স্কুলগুলোও লিপ্ত হয়েছে কোচিং বাণিজ্যে। তীব্র আকার ধারণ করেছে গাইড এবং কোচিং বাণিজ্য। নানাবিধ হয়রানির শিকার হচ্ছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে সারা বছর ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে স্কুলগুলোকেও। নস্যাৎ হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ।
রাজধানীর জুনায়েদ নামে একজন অভিভাবক জানান, আমার ছেলে বেসরকারি একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। স্কুলে প্রতি সপ্তাহে ক্লাস টেস্ট চলছে। সর্বশেষ গণিতের ক্লাস টেস্টে আমার ছেলে ১০ এর মধ্যে ৮ পেয়েছে। সে কারণে আমার ছেলে আমার স্ত্রীর হাতে মার খেয়েছে। আর পড়া আদায় নিয়ে প্রতি রাতে, প্রতি সকালে মারধর তো চলছেই। এসব দেখার মতো নয়। এত ছোট বাচ্চাকে প্রতিদিন পড়ার কারণে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। এর একমাত্র কারণ পরীক্ষাব্যবস্থা। পরীক্ষার মাধ্যমে ক্লাসে রোল নম্বর, সেকশন প্রভৃতি বাছাই করা হয়। আর এ নিয়ে চলে তীব্র প্রতিযোগিতা মা-বাবার মধ্যে। আর এর নির্মম শিকার হচ্ছে অসহায় শিশুরা। পরীক্ষা না থাকলে শিশুরা এ অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পেত।
জুনায়েদ বলেন, তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা তুলে দেয়ায় আমি খুবই খুশি হয়েছি। কিন্তু আমার আশঙ্কা বেসরকারি স্কুলে এটা কতটা বাস্তবায়িত হয় তা নিয়ে। সরকারি স্কুলে বছরে দুই-তিনটা পরীক্ষা হয় কিন্তু বেসরকারি স্কুলে প্রতি বিষয়ে সারা বছর প্রতি সপ্তাহে কয়েকটা করে ক্লাস টেস্ট নেয়া হয়। পরীক্ষা নামক এ নির্যাতন কঠোরভাবে বন্ধ করা দরকার বেসরকারি স্কুলের। বেসরকারি স্কুল হয়তো বছরে দু’টি বা তিনটি পরীক্ষা বাতিল করবে কিন্তু ক্লাস টেস্টসহ নানা ধরনের পরীক্ষা তারা চালু রাখতে পারে। সেটা যাতে বন্ধ হয় সে জন্য সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে গত বছর পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে। এ পরীক্ষার কারণে আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে সারা বছর ভয়াবহ রকমের মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে পার করতে হয়েছে। আর আমার ছেলে সারা বছর তার মায়ের কাছে যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পড়ায় অমনোযোগিতার কারণে পরীক্ষার দিন সকালেও তাকে মার খেতে হয়েছে। আর পরীক্ষার কারণে পড়ালেখা ঘিরে সারা বছর প্রায় প্রতি রাতে মার খেয়েছে সে। আমি জানি প্রতিটি শিশুরই একই অবস্থা। আসলে আমরা আমাদের ছেলেমেয়েগুলোকে পড়ালেখার নামে ধ্বংস করে ফেলছি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে করতে। এটা মেনে নেয়া যায় না। আমি চাই শিশুদের ওপর এ নির্যাতন বন্ধ হোক। সে কারণে সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল করা দরকার।
পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীর পাবলিক পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে প্রায় সব অভিভাবক। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত যত অভিভাবকের মত জানতে চাওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে দু’-একজন ছাড়া সবাই একবাক্যে এ পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে কথা বলেছেন। এ পরীক্ষার প্রতি অনেকে এতটাই বীতশ্রদ্ধ যে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ আন্দোলন করতেও রাজি তারা। এ পরীক্ষা ঘিরে বিভিন্ন পরিবারে চলছে নানা ধরনের অশান্তি আর বিশৃঙ্খলা। অনেকের সংসার উচ্ছন্নে যাওয়ার পথে। অনেক মা বিশেষ করে যাদের একাধিক সন্তান পড়ালেখার সাথে যুক্ত তারা সংসারের কোনো কাজে মনোযোগী হতে পারছেন না। ঠিকমতো সংসার করতে পারছেন না। অনেকে জানিয়েছেন তাদের অবস্থা পাগল হওয়ার উপক্রম। অনেকে আত্মীয় স্বজনের সাথে নিয়মিত স্বাভাবিক সম্পর্কও রাখতে পারছেন না। অনেকে গ্রামে যাওয়া পরিত্যাগ করেছেন। পরীক্ষা নিয়ে মা-বাবার মানিসক অস্থিরতার নানা ধরনের প্রভাব পড়ছে সন্তানদের ওপর। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজে। পরিবারে সমাজে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব অস্থিরতা আর নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে তার পেছনে পরীক্ষাজনিত অস্থিরতারও অবদান রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। আর পরীক্ষার কারণে সারা বছর আর্থিক ক্ষতির বিষয় তো রয়েছেই অভিভাবকদের।
তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বিশাল বইয়ের বোঝা। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পাঠ্যবইয়ের বোঝাই তারা বইতে পারছে না। তার ওপর প্রতি বিষয়ে একাধিক গাইড পড়তে হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণী থেকেই শুরু হয়েছে টেস্টপেপারস কালচার। স্কুলের ক্লাসের পাশাপাশি যেতে হচ্ছে কোচিংয়ে সারা বছর। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই বসতে হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষায়। আর সারা বছর ক্লাসটেস্ট ও মডেল টেস্ট তো রয়েছে। একদিকে স্কুলের ক্লাস টেস্ট ও মডেল টেস্ট আরেক দিকে কোচিংয়ের মডেল টেস্ট। এভাবে সারা বছর শুধু পরীক্ষা আর পরীক্ষা এবং পড়ার চাপে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শিশুরা।
অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এভাবে একের পর এক পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা শিশুদেরকে প্রতিবন্ধীতে পরিণত করছি। অথচ তারা যদি চাপমুক্ত হয়ে ক্লাসের পাঠ্যবইগুলো আনন্দের সাথে পড়তে পারত তাহলে তারা সুন্দর মানসিকতার অধিকারী হয়ে বেড়ে উঠতে পারত। কিন্তু পরীক্ষার মাধ্যমে আসলে বর্তমান শিশুদেরকে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এর ভবিষ্যৎ পরিণতি ভালো হতে পারে না। তাই ঘন ঘন পাবলিক পরীক্ষা থেকে অবিলম্বে শিশুদের মুক্ত করা উচিত বলে মনে করেন অভিভাবকরা। ঘন ঘন পাবলিক পরীক্ষার কারণে অতিষ্ঠ অনেক শিক্ষকও। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা ঘিরে নানা ধরনের বাণিজ্যে লিপ্ত তবু অনেক শিক্ষক এ পরীক্ষা বাতিলের পক্ষে। পরীক্ষার কারণে অনেকের জীবন অতিষ্ঠ।
অপর দিকে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় একের পর এক প্রশ্নফাঁসেও বিপর্যস্ত হয়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। সমাজে তৈরি হয়েছে নানা ধরনের অস্থিরতা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক, মোট সম্পত্তি ৭.৫ কোটি ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইসরাইল সরকারে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব : নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাফায় ইসরাইলি হামলা, সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ৮ লাখ ফিলিস্তিনি চেন্নাইকে বিদায় করে বেঙ্গালুরুর ‘অবিশ্বাস্য’ প্লে অফ মনের মিনার ভেঙে পড়েনি মার্কিন প্রশাসনের ‘বাকস্বাধীনতা’র মুখোশ শিগগিরই মাগুরায় রেললাইন চালু হবে : রেলমন্ত্রী সংসদ ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মী নিহত জুজুৎসুর সম্পাদকের যৌন নিপীড়নের তথ্য দিলো র্যা ব পানচাষীদের পরিশ্রমের ফসল জিআই স্বীকৃতি : প্রতিমন্ত্রী

সকল