২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দুদক আতঙ্কে সরকারি প্রতিষ্ঠানের অসাধু লোকজন

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) - সংগৃহীত

যেখানেই অনিয়ম-দুর্নীতি, সেখানেই ব্যবস্থা। এমন জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে তার প্রতিফলনও ঘটতে শুরু করেছে। দুদকের এমন তৎপরতায় এক রকম ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম সরকারি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তাদের। সংস্থার অভিযোগ কেন্দ্রে (হটলাইনে) অভিযোগ আসামাত্রই অভিযান চালাচ্ছে দুদক। এ অভিযানে হাতেনাতে ধরাও পড়ছে রাঘববোয়াল। বিশেষ করে গত কয়েক দিনে স্বাস্থ্য খাত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুদকের অভিযানের উঠে এসেছে ঘুষ, নিয়োগবাণিজ্য, কোচিং ও ভর্তিবাণিজ্যসহ দুর্নীতি-অনিয়মের নানা চিত্র। 
দুর্নীতি বন্ধে এই সাঁড়াশি অভিযান প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, যেখানেই দুর্নীতি সেখানেই ব্যবস্থা। এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের হলফনামা দেখে কালো টাকার প্রমাণ মিললে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান। 

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি দমনে সরকারের যে অঙ্গীকার তাতে দুদক আত্মবিশ্বাসী। নতুনভাবে আরো দৃঢ়তার সাথে দুর্নীতি প্রতিরোধে আমরা কাজ করব উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশেষ করে আর্থিক দুর্নীতি, নিয়োগবাণিজ্যসহ সব দুর্নীতি দমনে নতুন উদ্যোগে কাজ করবে দুদক। কালো টাকার বিরুদ্ধে অভিযানকার্যক্রম চলবে। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি যেই হোক না কেন, যেখানে দুর্নীতি আছে যেখানেই অভিযান চালাবে দুদক। আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে দুর্নীতি দমনে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলেও জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান।

দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র জানায়, রাষ্ট্রের সেবাধর্মী গুরুত্ব¡পূর্ণ ১৪টি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি অনুসন্ধানের ও নজরদারি বাড়াতে ১৪টি বিশেষ টিম গত বছর থেকে কাজ করে যাচ্ছে। তারা সরকারি দফতরের সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং ও সুনির্দিষ্ট দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান করছে। উল্লিখিত সূত্রে আরো জানা যায়, ১৪টি প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। এসব প্রতিষ্ঠান হলো : তিতাস গ্যাস, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, গণপূর্ত অধিদফতর, সিভিল এভিয়েশন, বাংলাদেশ বিমান, কাস্টমস্ ভ্যাট এক্সারসাইজ, আয়কর অধিদফতর, বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি, বাংলাদেশ সড়ক ও পরিবহন কর্তৃপক্ষ, মহাহিসাব নিরীক্ষক অফিস (এজি অফিস), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, ওয়াসা, ঢাকার সব সাব-রেজিস্ট্রার অফিস। এ ছাড়া দুর্নীতিগ্রস্ত সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাস্থ্য খাতেও দুদকের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। একজন পরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক এ টিমগুলো তৈরি করা হয়েছে। এ টিমগুলো ১৪টি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করছে। প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি, সেবাসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য খতিয়ে দেখছে তারা। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির উৎস ও কারণ চিহ্নিত করা, দুর্নীতি বন্ধে কোন কোন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে দুর্নীতিরোধ করা যায়, সে বিষয়েও সুপারিশ করবে এ টিম। 

স্বাস্থ্য খাতে দুদক আতঙ্ক
আবজাল হোসেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের চতুর্থ শ্রেণীর একজন কর্মচারী তিনি। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত তার অঢেল সম্পদের চিত্র প্রকাশ হওয়ার পর সর্বত্র আলোচনা তাকে নিয়ে। সবার মুখে একটাই আলোচনা, চতুর্থ শ্রেণীর একজন কর্মচারী দুর্নীতির মাধ্যমে এত সম্পদের মালিক বনে গেলে এই সেক্টরের বড় কর্তারা কী করেননি তাহলে? 
অবশ্য এরও জবাব মিলতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে দুর্নীতিগ্রস্ত এই সেবাধর্মী স্বাস্থ্য খাতে কিভাবে দুর্নীতি অনিয়ম হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত বৃহস্পতিবার দেশের স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ১১টি উৎস চিহ্নিত করে সেগুলো নির্মূলে ২৫ দফা সুপারিশ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই দিন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে এসংক্রান্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেছেন দুদকের কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান। 

দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আবজাল হোসেনের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই সেক্টরের বেশ কয়েকজন কোটিপতি কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পর্কে দুর্নীতির তথ্য পেয়েছেন তারা। এ ছাড়া বিভিন্ন কর্মচারী সমিতির নেতাদের নামও দুর্নীতিবাজদের তালিকায় রয়েছে। সব মিলিয়ে এই সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমানে দুদক আতঙ্কে ভুগছেন। 
জানা গেছে, আবজাল হোসেনের দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসার পর স্বাস্থ্য অধিদফতরে আতঙ্ক আরো বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে গুরুত্বপূর্ণ শাখার কর্মচারীরা বর্তমানে দেখে শুনে চলাফেরা করছেন। নিজেদের সম্পদ গোপন করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। আবজাল হোসেনের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই সেক্টরের বেশ কয়েকজন কোটিপতি কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পর্কে দুর্নীতির বিস্তারিত তথ্য পাচ্ছেন দুদক কর্মকর্তারা। 
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই কর্মকর্তার এত দুর্নীতির খবর ফাঁসে অনেকটা ভীতি কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটির অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যেও। জানা গেছে, একই প্রতিষ্ঠানের আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দুর্নীতিগ্রস্ত। যাদের সম্পদের হিসাব খোঁজা এরই মধ্যে শুরু করেছে দুদক। আর এসব কারণে ওইসব কর্মকর্তার মধ্যে দুদক আতঙ্ক বিরাজ করেছে। এরই মধ্যে আবজাল ছাড়া আরো তিনজন কর্মকর্তাকে তলব করেছে দুদক। এর মধ্যে গত সপ্তাহে দুদকের কার্যালয়ে বাজেট বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা: আনিসুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেন্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। 
প্রসঙ্গত গত ৯ জানুয়ারি দুদকের উপ-পরিচালক সামসুল আলম স্বাক্ষরিত চিঠি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর ৪ জনকে তলব করে নোটিশ পাঠানো হয়। যাদের তলব করা হয়। তারা হলেন- পরিচালক ডা: কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, অধ্যাপক ডা: আবদুর রশীদ, সহকারী পরিচালক (বাজেট) ডা: আনিসুর রহমান ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবজাল হোসেন। দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরে সিন্ডিকেট করে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তারা। এ ছাড়া বিদেশে অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। 

কোচিং ও ভর্তিবাণিজ্য : দুদক আতঙ্কে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি এবং শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ পেলেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে। গত কয়েক দিনে ঢাকাসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে দুর্নীতির প্রমাণও পেয়েছে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। আর এ কারণেই দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত নেয়া ফি ফেরত দিচ্ছে বলেও জানা গেছে। 

গত ১৬ জানুয়ারি অবৈধ ভর্তির খবরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অভিযানে যায় দুদকের একটি টিম। এর পরদিন রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজে ভিআইপি কোটায় ভর্তিবাণিজ্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে দুদকের একটি দল ওই স্কুলে অভিযান চালায়। দলটি প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পায় এবং এ বিষয়ে অধিকতর যাচাই চলমান রয়েছে বলে জানানো হয়। এরপর কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ পেয়ে গত ২০ জানুয়ারি রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে অভিযান চালায় দুদক। অভিযানের সময় স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩০ জন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।

গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বেশ কিছু স্কুলে গোপনে অভিযানে যান দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। সেখানে গিয়ে বেশির ভাগ শিক্ষকদের অনুপস্থিত দেখতে পান। এরপর চেয়ারম্যান গণমাধ্যমকে জানান, আমাদের সন্তানদের শিক্ষা নিয়ে কাউকেই ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। প্রয়োজনে দুদক দণ্ডবিধির ১৬৬ ধারা প্রয়োগ করবে। 
এ দিকে গত ২৮ জানুয়ারি মতিঝিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিযান চালায় দুদক। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে রসিদ ছাড়াই এক হাজার টাকা করে আদায় করার প্রমাণ পাওয়া গেলে প্রধান শিক্ষক নূরজাহান হামিদাকে সাময়িক বরখাস্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দুদক থেকে বলা হয়, এ বছর ভর্তি বাবদ প্রধান শিক্ষক অবৈধভাবে ৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আয় করেছেন। দুদকের এমন অভিযানে আতঙ্কে রয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন নামীদামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।


আরো সংবাদ



premium cement
৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের

সকল