২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রতিদিন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে

-

নির্বাচনী আচরণবিধি কেউ মানছে না। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনাও তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। আচরণবিধি অনুযায়ী, ভোটের ২১ দিন আগে কোনো ধরনের প্রচার-প্রচারণা চালানো যাবে না। বাস্তবে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। শোডাউন ও মিছিল চলছে। গাড়িবহর নিয়েও প্রচারণা চালাতে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জনদের। সিলেটের একজন সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে এমন একটি অভিযোগ উঠেছে। তিনি নৌকার প্রতীকসহ ছবি এবং তাকে ভোট দেয়ার আহ্বান সংবলিত পোস্টার গাড়ির সামনে সেঁটে বিরাট এক গাড়ির বহর নিয়ে সিলেটে দু’টি মাজার জিয়ারত করেছেন। এ দিকে নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি অনুযায়ী রাজধানীসহ সারা দেশে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাঁটানো পোস্টার ব্যানার, বিলবোর্ড ইত্যাদি অপসারণে দুই দফা সময় বেঁধে দিলেও ওইসব প্রচারসামগ্রী বেশির ভাগ স্থানে বিরাজমান রয়েছে। প্রথমে ১৪ নভেম্বরের মধ্যে ওগুলো সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয় নির্বাচন কমিশন। পরে সময় তিন দিন বাড়ানো হয়। এ মোতাবেক সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ওগুলো সরানো হয়নি। নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হয়েছে, সম্ভাব্য কোনো প্রার্থী যদি তার প্রচার উপকরণ অপসারণে ব্যর্থ হন তবে তিনি নির্বাচনী আচরবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন এবং আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা দেয়ার ক্ষেত্রে বড় দুই দলসহ বিভিন্ন দল মিছিল ও শোভাযাত্রা করে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে। আচরণবিধি ভঙ্গের কাজটি প্রথম করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরপর করে বিএনপি ও অন্যান্য দল। বড় দুই দলের আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে দু’টি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী দুইজনের সমর্থকদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং তার জেরে দুইজন গাড়ি চাপায় নিহত হন। পক্ষান্তরে বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা এবং দুই পক্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পুলিশের যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এর জেরে মামলা হয়েছে একাধিক এবং তার সূত্রে বহু নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে অনেককে। এই দু’টি অনভিপ্রেত ঘটনার জন্য পর্যবেক্ষক মহল নির্বাচন কমিশনের সতর্কতার অভাব এবং একপেশে নীতি ও আচরণকে দায়ী করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যখন আচরণবিধিকে তোয়াক্কা করেছে না, তখন নির্বাচন কমিশন নীরব থেকেছে। অন্য দিকে, বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন আচরণবিধি ভঙ্গ করেছে তখন তার টনক নড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আচরণবিধি কার্যকর করতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্দেশ প্রতিপালন করতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতির নিরিখে সংযম প্রদর্শন না করে মারমুখী আচরণ করেছে। ফলে সংঘর্ষ, মামলা-মোকদ্দমা ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর করা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। পাশাপাশি আচরণবিধি মান্য করা রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য। নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত তার নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করতে পারেনি। শুরু থেকেই যদি আচরণবিধি কার্যকর করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হতো তাহলে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা এভাবে ঘটতে পারত না। আরো নানা ক্ষেত্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। নির্বাচন কমিশন তা দেখেও দেখছে না। এখানেও তার নিরপেক্ষতার লঙ্ঘনই দৃশ্যমান, প্রতীয়মান হচ্ছে। এখন ভোটের প্রায় দেড় মাস বাকি। নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে। তখন আচরণবিধি লঙ্ঘনের আশঙ্কা বাড়বে। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য নির্বাচনী আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা যদি আগামীতে বাড়ে সে ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর ঘটনার সংখ্যাও বাড়বে এবং এতে নির্বাচনের পরিবেশ ব্যাহত ও বিঘিœত হবে। আশঙ্কার এ প্রেক্ষাপটে আমরা আশা করব, নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি কার্যকর করার ক্ষেত্রে শক্ত ভূমিকা নেবে এবং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবে। আমরা এও আশা করব, রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন থেকে সর্বাবস্থায় বিরত থাকবে। হ

 


আরো সংবাদ



premium cement