০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কাঞ্চন ও তার ছাগলের কথা

-


মেয়েটির নাম কাঞ্চন। এলাকায় এক নামে চেনেন সবাই ‘ছাগলপোষা’ কাঞ্চন। হাঁটাচলা ও কথাবার্তার ধরন দেখলে বোঝা যায় কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে মেয়েটির মধ্যে। কখনো দেখা যায় রাস্তা দিয়ে ১০-১২টা ছাগল নিয়ে যাচ্ছেন অথবা রাস্তার নিচে বসে বিভিন্ন গাছপালার পাতা ও ঘাস খাওয়াচ্ছেন। কাঞ্চনের জীবন ছাগলের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাঞ্চনকে কেউ কিছু বললে রেগে যান। হাতের লাঠি দিয়ে কখনো রাস্তায় কখনো গাছে জোরে আঘাত করে রাগ মেটান। একটু রেগে গেলেই হাত-পা কাঁপার রোগ আছে কাঞ্চনের। গঙ্গারামপুর দেলঘাট থেকে সামান্য পশ্চিমে নেমেই ডান পাশে কাঞ্চনদের বাড়ি। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে কাঞ্চন সবার বড়। কাঞ্চন সম্পর্কে আগে যে সাধারণ ধারণা আমার ছিল, সেটা একদম বদলে গেল যখন শুনলাম কাঞ্চন সবার বড়। কাঞ্চন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে চোখ কপালে উঠল। ১৯৯০ সালের থেকে যত মানুষ গঙ্গারামপুর স্কুলে পড়েছেন সবাই কাঞ্চনকে চেনেন। বিষয়টি অদ্ভুত লাগল। তাহলে কাঞ্চনের বয়স কত? তার মা বললেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় কাঞ্চনের বয়স ছয় বছর। তার মানে ১৯৬৫ সালে জন্ম কাঞ্চনের। বর্তমানে তার বয়স ৫৩ বছরের মতো। কাঞ্চনের মা বললেন, জন্মের পর থেকে যত বড় হতে লাগল, ততই আরো কাঞ্চনের ভেতর শিশুসুলভ ভাবটা বাড়তে থাকল। সবার বয়সের সাথে শিশুসুলভ ভাব কমে, তার এটা বাড়তে লাগল। আমি মা তো পেটে ধরেছি, কিছু দিন পরই বুঝতে পারলাম কাঞ্চনের কিছু সমস্যা রয়েছে। বেশ কয়েকজন ডাক্তার, ফকিরের পরামর্শ নিলেও কোনো ফল পেলাম না। দেশ স্বাধীনের ঠিক পরের ঘটনা। তখন দেশে ডাক্তার-কবিরাজ নেই বললেই চলে। এভাবে বড় হতে থাকল কাঞ্চন। কয়েক দিন স্কুলে গিয়ে বাদ দিলো। কেউ দেখলেই বিরক্ত করে। এই রাগ সে তখন বাড়ি গিয়ে তার মায়ের ওপর খাটাত। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়া হলো। তখন কাঞ্চন বাড়ির দুটো ছাগল নিয়ে সারা দিন ঘুরে বেড়াতেন। এরপর সেই ছাগল কাঞ্চনের নামে দিয়ে দেয়া হলো। সেই দুই ছাগল থেকে কয়েক বছরের মধ্যে কাঞ্চনের ছাগলের সংখ্যা অনেক হয়ে গেল। কাঞ্চন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ছাগল নিয়ে বের হয়ে যান ঘাস খাওয়াতে। আবার বিকেলেও বের হন। মানসিক প্রতিবন্ধী এই মানুষটির ছাগলের সংখ্যা এখন দশটির বেশি। কয়েক দিন আগে ৩০ হাজার টাকার ছাগল বিক্রি করেছেন একবারে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, এ রকম আগেও বহুবার অনেক টাকার ছাগল বিক্রি করেছেন। একমাত্র ছোট ভাইয়ের সংসারে কাঞ্চন ও তার মা খাবার খান। ছাগল বিক্রির টাকা ছোট ভাইকেই দেন। মাসখানেক আগে কাঞ্চন তার ভাইপোকে স্বর্ণের চেইন বানিয়ে দিয়েছেন। সে দিন ছবি তোলার জন্য বিকেলে বসে আছি। কাঞ্চন ছাগল নিয়ে এলেন। ছবি তোলা হলো। কাঞ্চন এগিয়ে এসে বললেন, ‘এদা! আমার দাদাবাবুর সাথে দেহা হয়! কবা কি আমার জন্যি মালা আর চুড়ি কিনে আনতে। কবানে! হি কবানে!’ আমি হ্যাঁ বলতেই খুশিতে কাঞ্চন আমার কাঁধে মাথা ঘষতে লাগলেন। এরপর আবার ছাগলের পেছন পেছন দৌড়াল। বয়স ৫৩ বছর হলেও একটা জিনিস লক্ষ করলাম, ছোট শিশুর মতো আচরণ কাঞ্চনের মধ্যে। কাঞ্চন প্রতিবন্ধী হলেও স্বাবলম্বী। অন্যের বোঝা নন। তার আয়ে শুধু নিজের ভরণপোষণই হয় না, পরিবারের অন্যদেরও কাজে লাগে।


আরো সংবাদ



premium cement
ইসরাইলবিরোধী পোস্টের দায়ে নাগরিকদের আটক করছে সৌদি পোরশায় পুলিশ সুপারের বাড়িতে চুরি প্রকৃতিকে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করছে সরকারি দলের লুটেরা-ভূমিদস্যুরা : রিজভী টিএইচই এশিয়া ইউনিভার্সিটি র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশে ২য় বাকৃবি সৌদি-ইসরাইল সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের দ্বারপ্রান্তে : যুক্তরাষ্ট্র হাটহাজারী উপজেলায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছেন আবুল বাশার ‘এতে মজা আছে নাকি, সবাই একদল আমরা’ অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পুলিশ কর্মকর্তা নিহত নানামুখী চাপে বাংলাদেশের গণমাধ্যম দুর্নীতির দায়ে ক্রিকেটে ৫ বছর নিষিদ্ধ থমাস বিধ্বস্ত গাজার পুনর্নির্মাণে সময় লাগতে পারে ৮০ বছর : জাতিসঙ্ঘ

সকল